আটঘাট বেঁধে নেমেছে বিএনপি

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। দুটোতেই বিএনপির মেয়র ছিলেন। তাই এর কোনোটিই যাতে ছুটে না যায়, এ শঙ্কায় আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন দিয়েছে বিএনপি প্রার্থীদের। বিএনপি ও ২০-দলীয় জোট দুই সিটিতে নির্বাচনী প্রচারে আলাদা কমিটি করেছে।

গাজীপুরে বিএনপি ওই এলাকার পরিচিত মুখ হাসান উদ্দিন সরকারকে মেয়র প্রার্থী করেছে, যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সাংসদ ও শ্রমিকনেতা। আর খুলনার মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, যাঁকে বিএনপির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দেখা হয়। দুই সিটিতে বর্তমান মেয়রদের বাদ দিয়ে এ দুজনকে প্রার্থী করা দলের নীতিনির্ধারকদের ‘বিচক্ষণ’ সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পরীক্ষা হয়ে আসছে। এতে বিএনপির হার-জিতের চেয়ে মানুষ সরকারের আচরণ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বড় করে দেখবে। নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সরকার নিজের অবস্থান টের পাবে। আর জোরজবরদস্তি করলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি বিএনপি করে আসছিল, তার যৌক্তিকতা দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, ‘দুই সিটি নির্বাচন ইসির জন্য বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় তারা কী করবে, তা তারাই জানে। জনগণ ভোট দিতে পারলে গত নির্বাচনের চেয়ে আমাদের ফলাফল আরও ভালো হবে। আমাদের ফেল করাতে হলে জোর করতে হবে। আর জোর করলে তা জনগণ দেখবে।’

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন পরিচালনায় বিএনপি দুটি কমিটি করেছে। গাজীপুরের কমিটির সমন্বয়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন। খুলনায় সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। তিনি এখন খুলনায় আছেন। খন্দকার মোশাররফ ইতিমধ্যে গাজীপুর ঘুরে এসেছেন। বাকিটা ঢাকায় থেকে তিনি সমন্বয় করছেন। বিএনপির পাশাপাশি দুই সিটিতে ২০-দলীয় জোটের শরিকদের পৃথক প্রচার কমিটি হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ২০ দলের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে শরিক দলগুলোর বৈঠক হয়েছে।

এ বিষয়ে গাজীপুরে ২০-দলীয় জোটের সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব শাহাদাত সেলিম বলেন, ২০ দলের শরিকেরা আগামীকাল শুক্রবার ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন। এ জন্য ২০ হাজার প্রচারপত্র তৈরি করা হয়েছে। শরিক দলগুলোর স্থানীয় নেতারা বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠে থাকবেন।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে গাজীপুর সদর ও টঙ্গী-দুটি অঞ্চলে ভাগ করে দুজন নেতাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গাজীপুর সদর অঞ্চলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদকে। টঙ্গী অঞ্চলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আরেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলামকে।

এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারের জন্য গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে পৃথক দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলের প্রতিটিতে কেন্দ্রীয় একজন নেতাকে প্রধান করে স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী শুক্র ও শনিবার কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গাজীপুর যাবেন। এর বাইরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দল আলাদা প্রচারে নামবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলামের প্রচারে ১৩টি উপকমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও নির্বাচনী প্রচারণায় কমিটি করা হয়েছে। এতে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শাহরুজ্জামান মতুর্জাকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খানকে সদস্যসচিব করে এ কমিটি করা হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করার কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া খুলনা সিটিতে বসবাসকারীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিএনপি বৃহত্তর বরিশাল, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী ও বাগেরহাট অঞ্চলের নেতাদের নির্বাচনী প্রচারে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা দুই সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দণ্ডিত করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। গাজীপুর ও খুলনায় সিটি করপোরেশন এর প্রভাব পড়বে। মানুষের সহানুভূতি পাওয়া যাবে। যদিও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের নেমে এখন পর্যন্ত সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বিএনপি। খালেদা জিয়ার কারাবন্দী অবস্থায় দুই সিটিতে জয়ী হয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান দলের নীতিনির্ধারকেরা।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গত রাতে বলেন, ‘এ নির্বাচনে মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে কি না, তা দেখার বিষয়। তা ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে আছেন। এ নির্বাচনকে আমরা নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে রূপ দিতে চাই।’
তবে বিএনপির নেতাদের সংশয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সবার দৃষ্টি থাকবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিকে। সরকার এ নির্বাচনে আবার দখলদারত্ব প্রকাশ করে কি না, নির্বাচন কমিশন তাদের স্বাধীন সত্তা অনুযায়ী কাজ করছে কি না-এসব দেখার বিষয় আছে। এর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের একটা রূপ দেখা যাবে।

desh24.xyz