ব্রেকিং নিউজ:ঢাবিতে গভীর রাতে হঠাৎ উত্তাল

সুফিয়া কামাল হলের সামনে কয়েক হাজার ছাএ ছাএী মিলিত হয়ে প্রতিবাদ আর স্লোগানে মুখরিত করছে।

গভীর রাতে ছাত্রী তাড়াচ্ছে হল প্রশাসন

মুঠোফোন ‘চেক’ করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রীদের বের করে দিচ্ছে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ। হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা নিজেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে প্রথম আলোকে এ কথা জানান।

সাধারণ ছাত্রীরা হলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করছেন। তাঁরা মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন হলের প্রাধ্যক্ষ আরও বহু ছাত্রীর ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।

সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, আমরা অনেক ছাত্রীকে ডেকেছি। তাদের মোবাইল চেক করা হচ্ছে। তারা বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়াচ্ছে। মুচলেকা দিয়ে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ঠিক কত ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্ক রাত ১টা পর্যন্ত নিশ্চিত হওযা যায়নি। প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমন চারজন ছাত্রীর পরিচয় জানতে পেরেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রতিবেদকের সামনেই একজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়। ওই ছাত্রীর বাবা ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে দ্রুতবেগে চলে যান। সেসময় তিনি কথা বলতে চাননি।

এরপর রাত ১২টা ৪০মিনিটে এক ছাত্রীর বাবা হলের ফটক দিয়ে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ফোন করে হলে এসে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপরই ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি ধামরাই থেকে হলের গেটে পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে তিনি একাই সেখান থেকে চলে যান। সেসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তাঁর মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আন্দোলনের কারণে তিনি রাতেও হল থেকে বের হন। এসব বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।

সাবিতা রেজওয়ানা বলেছেন, দুই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবককে ডেকে ছাত্রীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেছেন, রাতে আটজনকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হল কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, রাত ৯টা থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সবাইকে একসঙ্গে বের করে দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলের ফ্লোরে ফ্লোরে রাতে হাউস টিউটররা পাহারা বসান। ছাত্রীরা আতঙ্কে আছেন। তাঁরা বলছেন, মূলত যে ২৬ ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রথম চোটে তাদের বিচার করছে হল প্রশাসন।

ছাত্রত্ব বাতিল, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার হুঁশিয়ারি প্রাধ্যক্ষের

রাত ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রদীপ্ত ভবনের নিচে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রীদের ডেকে হুঁশিয়ারি দেন। তাঁর অডিও ক্লিপ প্রথম আলোর হাতে রয়েছে। তিনি যা বলেছেন হুবহু তাই লেখা হলো:
‘অনেকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। ইনেটলিজেন্স সেল দেখবে যে কারা কারা বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি ইনভলভমেন্ট। এরপরে এই হলে ছাত্রলীগ যদি গণ্ডগোল করে আমাকে বিচার দেবে। জেনারেল মেয়ে গণ্ডগোল করলে আমাকে বিচার দেবে। এখন থেকে হল সিট হল প্রশাসন দেবে। আর কোনো পয়েন্টে এর বাইরে আর কোনো সিট হবে না।

হলে যদি আর কেউ বিশৃংখলা করার চেষ্টা করে বা তোমরা কোনো পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা কর হলকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাহলে কিন্তু আমরা সরকারকে বলব…আমার নলেজের বাইরে আমার ভিডিও যে আপলোড করে সেটা কিন্তু ক্রাইম, আজকে আমি বলে দিলাম সেটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম…আই ওয়ান্ট টু বি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কারও কিছু প্রশ্ন আছে?’
জবাবে ছাত্রীরা ওই রাতে ছাত্রলীগ সভানেত্রী ইফফাত জাহান এষাকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটেছে তাতে দুই হাজার মেয়ে সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন। তখন সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে সাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেব। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেব।

আমার শিক্ষকেরা দেখেছে, আমার সিসিটিভি প্রমাণ আছে ওরা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওদিন যেটা হয়েছে সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর শুধু পা-ই কাটা হয়েছে। এই মেয়েটাকে যে পরিমাণ মারা হয়েছে সেটা কি বিচারে মারা হয়েছে। যে মেয়ে ভয় পেয়েছে সে নিজে বলেছে। মোবাইল দিয়ে কি করছ?’

Prothom alo

রাতের আঁধারে হল থেকে বের করে দেওয়া হলো ঢাবির ৩ ছাত্রীকে

শারমীন শুভকে রাত ১২টার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা

শারমীন শুভকে রাত ১২টার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রীকে রাতের আঁধারে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তারা হলেন, শারমীন ‍শুভ (গণিত, তৃতীয় বর্ষ), কামরুন্নাহার লিজা (থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ, চতুর্থ বর্ষ) ও পারভীন (গণিত)। বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে শারমীন শুভকে এবং ১০টার পর অন্য দুজনকে বের করে দেওয়া হয়।

হলের সামনে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিমির বাবা ফারুক হাওলাদার

হলের সামনে রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিমির বাবা ফারুক হাওলাদার

এছাড়া, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিমি নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের  তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর বাবাকে ডেকে আনে হল কর্তৃপক্ষ। রাত সোয়া ১টায় হল থেকে রিমিকে ছাড়াই বের হন তার বাবা ফারুক হাওলাদার।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল প্রশাসন বলেছে, রিমি আগে আন্দোলনে জড়িত ছিল। আর যেন কোনও আন্দোলনে সে না যায়।’ তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি। হলে ঢোকার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে হল থেকে একজন মহিলা ফোন দিয়ে আসতে বলেন। আমি বললাম, আমার বাসা ধামরাই। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে আসব? তখন ওই মহিলা বলেন, আপনাকে আসতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেন ডাকা হলো আমি কিছু বলতে পারব না। দেখি তারা কী বলে।’

রাত ১২টার দিকে শারমীন শুভকে তার বাবা এসে হল থেকে নিয়ে যান। এসময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কিছু বলেননি। পরে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসন থেকে আমাদের কোনও কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না।’ পরে মেয়েকে নিয়ে তিনি রিকশায় করে চলে যান।

ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার খবর জানাজানি হলে রাত দেড়টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন আর যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরু সুফিয়া কামাল হলের সামনে উপস্থিত হন।

হল কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল ফেসবুকে ভুয়া আইডি থেকে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এই ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলের পরিস্থতি শান্ত রাখার জন্য আমরা হল প্রশাসন মেয়েদের দফায় দফায় তলব করছি।’ তিনি দুই ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘হল কর্তৃপক্ষ মেয়েদের অভিভাবক। তারা যেকোনও বিষয়ে মেয়েদের তলব করার অধিকার রাখে। এ হিসেবে তাদের তলব করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে না।’ হল থেকে বের করে দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একটি চক্র এসব গুজব ছড়ানোর পেছনে কাজ করছে।’

ওই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হলের প্রভোস্ট ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান ‘গুজব’ ছড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন ছাত্রীদের ডাকেন। এরপর ওই তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সুফিয়া কামাল হলে গত ১০ এপ্রিল রাতে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেওয়া ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ওই হলে ছাত্রীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। ফেসবুকে ওই ঘটনা এবং মারধরে এক ছাত্রীর পা কেটে রক্ত ঝরার ছবি পোস্ট করা হয়। বিক্ষোভের মুখে ওই রাতেই প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগ নেত্রী ইশরাত জাহান এশাকে বহিষ্কার করে। কদিন পরেই ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে একে এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর এশাকে হেনস্তার অভিযোগে হলের ২৬ ছাত্রীকে শোকজ করা হয়। তাদের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদেও পাঠায় হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হলের কয়েকজন ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, হল প্রশাসন ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন আটকে তা চেক করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্তি নামে আমার এক বান্ধবীকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা তাকে ফোন দিলে তার ফোনটি হলের এক ম্যাম ধরে আমাকে জানান, অন্তিকে ফোন দেওয়া যাবে না।

রাত ১০টার দিকে ওই হলের ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর বড় ভাই আব্দুল আউয়াল জানান, রাত ৮টার সময় আমার বোন হল থেকে আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে, আমি যেন তাকে এসে হল থেকে নিয়ে যাই। আমি কিছুক্ষণ পরে তাকে আবার ফোন দিলে আমার বোনের ফোন একজন শিক্ষিকা রিসিভ করেন। ওই শিক্ষিকা আমাকে বলেন, আপনার বোনকে হল থেকে নিয়ে যান। তার ফোন জব্দ করা হয়েছে।

 

Banglatribune