মানুষ যখন কোনো সমস্যা পড়ে, তখন তা থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করে থাকে। আবার অনেক সময় দুঃখে পড়লে বা রাগ এবং ক্ষোভের সময় নিজের সন্তান-সন্তুতিসহ সম্পদ ও মান-মর্যাদার ব্যাপারেও বদ-দোয়া করে থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, যেন পরিবার-পরিজন এবং সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে বদ-দোয়া না করে। কারণ এমন একটি সময় রয়েছে যখন দোয়া, বদ-দোয়া বা অভিশাপ; যা-ই করুন না কেন, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা নিজেদের অভিশাপ দিও না। তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের অভিশাপ দিও না; তোমরা তোমাদের চাকর-চাকরানিদের বদ-দোয়া কর না এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদের প্রতি বদ-দোয়া কর না। কেননা এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে যখন দোয়া (বা বদ-দোয়া) করলে তা কবুল হয়ে যায়। কাজেই তোমার ঐ বদ-দোয়া যেন (দোয়া কবুলের) ঐ মুহূর্তের সঙ্গে মিলে না যায়। (মুসলিম, আবু দাউদ)
সুতরাং আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় নিজের জন্য, পরিবার পরিজনের জন্য, সম্পদ ও মান-মর্যাদাসহ অন্য যে কাউকে অভিশাপ বা বদ-দোয়া দেয়া বা করা থেকে বিরত রাখুন। দুনিয়া ও পরকালের জন্য ভালো ও কল্যাণমূলক কাজের জন্য শুকরিয়া আদায় এবং দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বদদোয়া বা অভিশাপ দেওয়া সম্পর্ক ইসলাম কি বলছে?
প্রশ্নঃ কেউ যদি মন থেকে বদ দুয়া করে, যাকে বদ দুয়া করা হল তার কি ভীষণ কোন ক্ষতি হবে। এই বিষয় ইসলাম কি বলছে অনুগ্রহ করে জানাবেন।
উত্তরঃ হাদীস শরীফে এসেছে,
أخرج الإمام الترمذي في سننه [ 2627 ] حدثنا قتيبة حدثنا الليث عن بن عجلان عن القعقاع بن حكيم عن أبي صالح عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده والمؤمن من أمنه الناس على دمائهم وأموالهم قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح ويروى عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه سئل أي المسلمين أفضل قال من سلم المسلمون من لسانه ويده وفي الباب عن جابر وأبي موسى وعبد الله بن عمرو
অনুবাদঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমান তো সেই ব্যক্তি ব্যক্তি যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে………।( সুনানে তিরমিজী- ২৬২৭নং হাদীস, সুনানে আবু দাউদ- ২৪৮১নং হাদীস)
সুতরাং কোন মুসলমানের জন্য এমন কোন কাজ করা শোভনীয় নয়, যাতে অপর কোন মুসলমান কষ্ট পায়। কখনো যদি নিজরে অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেলে তাহলে তা বুঝার সাথে সাথে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেয়া উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তেমনিভাবে কারো কাছ থেকে কোন জুলুমের শিকার হলে তাকে ক্ষমা করে দেয়াই মহৎ চরিত্রের পরিচায়ক।
হাদীসে পাকে এসেছে-
أخرج الإمام أحمد في مسنده :(رقم-17334 ) …………..فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِفَوَاضِلِ الْأَعْمَالِ فَقَالَ يَا عُقْبَةُ صِلْ مَنْ قَطَعَكَ وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ وَأَعْرِضْ عَمَّنْ ظَلَمَكَ
অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে তুষ্ট করো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তার সাথে উত্তম ব্যবহার (ক্ষমা) করো। মুসনাদে আহমদ- ১৭৩৩৪ নং হাদীস।
এছাড়া নবীজি ও সাহাবা কেরাম রা.-এর চরিত্রের মাঝে ক্ষমার গুণ অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই এই মহৎ গুনে নিজেদের সুসজ্জিত করা উচিত।
কাউকে অভিশাপ দেয়া মুমিনের জন্য শোভা পায় না। অন্য হদীসে এসেছে,
أخرج الإمام الترمذي في سننه(2088 ) – حدثنا بندار ، أخبرناأبو عامر عن كثير بن زيد عن سالم عن ابن عمر قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم : لا يكون المؤمنلعانا . وفى الباب عن ابن مسعود. هذا حديث حسن غريب . وروى بعضهم هذا الحديث بهذا الاسناد عن النبي صلى الله عليه وسلم وقال : لا ينبغى للمؤمن أن يكون لعانا
অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিন কখনো অভিসম্পাদকারী হয় না। সুনানে তিরমিযি-২০৮৮ নং হাদীস।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
أخرج الإمام الترمذي في سننه ( 1976) – حدثنا محمد بن المثنى حدثنا عبد الرحمن بن مهدي حدثنا هشام عن قتادة عن الحسن عن سمرة بن جندب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا تلاعنوا بلعنة الله ولا بغضبه ولا بالنار
অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরষ্পরে আল্লাহর লা’নত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দিবে না। সুনানে তিরমিযি-১৯৮৬
অভিশাপকারী আখেরাতেও মর্যাদা পাবে না। এ ব্যাপারে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না। এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না। সহীহ মুসলিম-২৫৯৮ নং হাদীস।
এ সকল হাদীস দ্বারা এ কথা সহজেই অনুমেয় হয় যে, অন্যায়ভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ ও অভিশাপকারীকে পছন্দ করেননি।
মন থেকে অভিশাপ দিলেই তা কার্যকর হয়ে যায়। যাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে সে এর যোগ্য হোক বা না হোক। এটাই হিন্দুদের বিশ্বাস। কোন মুসলমানের এ আকীদা হতে পারে না। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে,
أخرج الإمام أبوداود في سننه ( 4907 )- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَسَّانَ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ رَبَاحٍ قَالَ سَمِعْتُ نِمْرَانَ يَذْكُرُ عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ قَالَتْ سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا لَعَنَ شَيْئًا صَعِدَتِ اللَّعْنَةُ إِلَى السَّمَاءِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ دُونَهَا ثُمَّ تَهِبْطُ إِلَى الأَرْضِ فَتُغْلَقُ أَبْوَابُهَا دُونَهَا ثُمَّ تَأْخُذُ يَمِينًا وَشِمَالاً فَإِذَا لَمْ تَجِدْ مَسَاغًا رَجَعَتْ إِلَى الَّذِى لُعِنَ فَإِنْ كَانَ لِذَلِكَ أَهْلاً وَإِلاَّ رَجَعَتْ إِلَى قَائِلِهَا ». قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ مَرْوَانُ بْنُ مُحَمَّدٍ هُوَ رَبَاحُ بْنُ الْوَلِيدِ سَمِعَ مِنْهُ وَذَكَرَ أَنَّ يَحْيَى بْنَ حَسَّانَ وَهِمَ فِيهِ.
অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন বান্দা কোন ব্যক্তিকে অভিশাপ তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়, অতপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে, তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে দয়ো হয়, অতপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোন উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয় তাহলে তার প্রতি পতিত হয়, অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়। সুনানে আবু দাউদ-৪৯০৭ নং হাদীস।
অন্য হাদীসে এসেছে,
أخرج الإمام الترمذي في سننه( 1978)- حدثنا زيد بن أخزم الطائي البصري حدثنا بشر بن عمر حدثنا أبان بن يزيد عن قتادة عن ابي العالية عن ابن عباس أن رجلا لعن الريح عند النبي صلى الله عليه و سلم فقال لا تلعن الريح فإنها مأمورة وإنه من لعن شيئا ليس له بأهل رجعت اللعنة عليه
অনুবাদঃ …….ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতাসকে লানত দিল, তখন নবীজি বললেন, বাতাসকে লা’নত দিও না, কেননা এ তো আল্লাহরপক্ষ থেকে নির্দেশিত। কউে যদি কোন বস্তুকে লা’নত দেয়, আর সে যদি ঐ লা’নতের পাত্র না হয়, তাহলে সেই লানত লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। সুনানে তিরমিযি-১৯৭৮ নং হাদীস। সুনানে আবু দাউদ-২/২৭৬
এ সকল হাদীস থেকে বুঝা গেল মন থেকে লা’নত বা অভিশাপ দিবে সে যদি এই অভিশাপের উপযুক্ত না হয়, তাহলে এই অভিশাপ তার দিকে আসে না বরং অভিশাপকারীর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়্ এ জন্য অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া চাই। যেন অভিশাপ দেয়ার পর নিজেই পাত্র না হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল অনিষ্ট হতে হিফাযত করুন। আমীন!
উত্তর প্রদানেঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আরমান সাদিক
ইফতা বিভাগ, জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া