বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত

তারিখ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩
সংবাদ সম্মেলন
এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী-সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব

গতপরশু ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ বিএনপির মহাসমাবেশে বর্তমানের কর্তৃত্ববাদী সরকারের বংশবদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী যৌথভাবে যে হিংস্র পরিকল্পনার মাধ্যমে হামলা, তান্ডব, ও জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে বিএনপি তাতে ঘৃণা, ক্ষোভ ও ধিক্কার জানায়। বন্ধুরা,গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত জুলাই ২০২২ থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে বিএনপি পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সমাবেশ ও ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে যে লোক সমাগম হয়েছে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব। পথে পথে বাঁধা অতিক্রম করে দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার আপামর জনসাধারণ এসব কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহন করেছেন। সাধারণ মানুষ বিএনপির দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে যেভাবে যোগ দিয়েছেন, তা বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক দলের নেতা-কর্মিকে অনুপ্রানিত করেছে, তাদের দাবী যে জনগণের দাবী তা প্রমাণ করেছেন। নারী-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ, শ্রমিক-কৃষক কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে পার হয়ে, চিড়া-মুড়ি সাথে নিয়ে আমাদের সমাবেশগুলোতে যোগ দিয়েছেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে বাঁধা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ ও তার ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গতকপরশু ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ এবং আজ ২৯ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা চার (৪) জন, গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীর সংখ্যা ৬৯০জন, মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ২০টি এবং আহত ৩,০০০ এর অধিক নেতা-কর্মী। এছাড়াও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৩ অক্টোবর হতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দিনে মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬৪০ জনের অধিক নেতা-কর্মী এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে ৪৫ টি। গত ২৮ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে ২৯ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে ৪৪২টি, গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৩১০ জন, মোট আসামী ৩১,৯৮০ জন, এবং হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে ৫,১১০ জনের চেয়েও বেশি নেতা-কর্মীকে। বিচারবিভাগের রাজনীতিকরণ করে ১৫টি মিথ্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ ও প্রায় ৯০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যান কেবল গত জুলাই থেকে আজ অবধি, গত ১৫ বছরে লাখো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, কারাগারে কয়েক লাখ বিএনপি কর্মী অন্তরীন হয়েছে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ও নির্যাতনে সন্তান হারিয়েছেন হাজারো বাবা-মা।

এসব নির্যাতন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছেন, সরকারের সমালোচনা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেই অত্যাচার ও মামলার খড়গ নেমে এসেছে। কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ২০১৮ এর কবলে পড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, কার্টুনিস্ট, লেখক, কলামিস্ট ও সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা অত্যাচারিত হয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে ও কারাগারে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছেন। গুমঘর আর আয়নাঘরের দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে অসংখ্য বেদনার ইতিহাস, গুমরে মরেছে নানা প্রাণ। বিচার-বহির্ভূত হত্যা আর গুম হয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্য আর ছোট্ট অবুঝ সন্তানদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সোচ্চার রয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে যুক্ত তার স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রমান দাখিল করেছে। এই নজিরবিহীন অত্যাচার, নির্যাতন, ও খুনের শিকার হয়েও বিএনপি সহ গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি। নেতা-কর্মীরাও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে স্বত:স্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির গণতন্ত্র পুন:রুদ্ধারের যৌক্তিক দাবির সাথে একমত পোষণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একত্রে জোর আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। গণতন্ত্রের পক্ষের সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো একটি সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। দেশের ভেতরের সাধারণ মানুষ ও বাইরের আন্তর্জাতিক শক্তির জোর সমর্থন পাবার ফলে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন যখন সফল হতে যাচ্ছে, তখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে উঠেছে। এই অন্তিম অবস্থায় আওয়ামী লীগ যৌক্তিক জ্ঞান হারিয়ে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। গত ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে একটি সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করার পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত রাজনৈতিক পুলিশ বাহিনী। যে বিপুল গণজোয়ার ঢাকার পথে আসতে শুরু করে তা বাঁধা দেবার জন্য তারা সারা দেশব্যাপী ধরপাকড় শুরু করে। ঢাকার প্রবেশপথ গুলোতে পুলিশ চেক-পোস্ট বসিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মোবাইল চেক করা হয়। বিএনপি নেতা-কর্মী পরিচয় জানলেই নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়।

ঢাকায় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলগুলোতে ও বাড়িতে রাতের গভীরে হামলা চালিয়ে আটক করা হয় হাজারো নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গ্রেফতার-নির্যাতন সত্ত্বেও আগের রাত থেকেই মহাসমাবেশের স্থান নয়াপল্টন নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে লাখো মানুষ নয়া পল্টনে উপস্থিত হয়। সকাল ৯ টার মধ্যেই সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে আশেপাশের এলাকাগুলো বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। এত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এই অভূতপূর্ব জনসমাবেশ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ও পুলিশ বাহিনীকে আরো ভীত করে তুলে। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী, কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বানচাল করে পুলিশী হামলাকে বৈধতা দেবার উদ্দেশ্যে সহিংস আচরণ শুরু করে। আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সংলগ্ন একটি গেটে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা পুলিশকে লক্ষ করেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখা দরকার, সেখানে পুলিশ নিজেই আক্রমণাত্মক হয়ে মাত্রাতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করা শুরু করে। যেখানে মূল জনসভার কেউ এই সহিংস ঘটনায় যুক্ত ছিলো না, সেখানে পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণ পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে জনসভায় হামলা শুরু করে। মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেড চার্জ করা হয় নিরীহ ও নিরস্ত্র জনগণের উপর। পুরো কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকায় যুদ্ধ-পরিস্থিতির মত ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। পুলিশের লাঠি-চার্জ, রাবার-বুলেট নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেডে শত শত নিরস্ত্র নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হন।

ন্যাক্কারজনক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই হামলা চালানো হয় সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীদের গাড়িতে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর সফলতা আঁচ করতে পেরে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির বিপক্ষে গণমাধ্যম ও বিচারবিভাগকে মুখোমুখি করাতেই এই সহিংসতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদী সরকার ও তাদের পুলিশ বাহিনী। দেশবাসী তথা বিশ্ববাসী বিস্ময় ও ক্ষোভের সাথে প্রত্যক্ষ করেছে, গতপরশু ২৮ অক্টোবর শনিবার বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ, যেখানে লক্ষ-লক্ষ মানুষ ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকার কি নৃশংস তান্ডব চালিয়েছে!বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সশস্ত্র হামলা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের বক্তব্যেরই প্রতিফলন এই রক্তাক্ত আক্রমণ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ করেও যখন সরকার মহাসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি — তারা যখন দেখেছে বাধা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে লক্ষ-লক্ষ লোক যোগ দিয়েছে তখন তারা পরিকল্পিতভাবে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করে, হামলার মাধ্যমে, আমাদের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশ স্থলে আগে থেকেই ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় আওয়ামী অপশক্তির আজ্ঞাবহ প্রশাসন। বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ সংযোগ ও বক্তব্য প্রচারের মাইকের লাইন। বিনা উস্কানিতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি, তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, একের পর এক টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠি ও ব্যানেট চার্জ চালাতে থাকে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক — ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সংঘটিত এ যৌথ হামলায় নির্বাচারে আঘাত ও আহত করা হয় বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের। গতপরশু পুলিশি সহিংসতার এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের স্থানীয় নেতা শামীম মিয়া। গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মহাসমাবেশে অংশগ্রহণকারী হাজার-হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষ। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী আজও হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন। গতপরশু পুলিশের টিয়ার গ্যাসে আহত সাংবাদিক নেতা ও জাতীয় প্রেসক্লাবে সদস্য রফিক ভূইয়া আজ বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

আমরা দিনের আলোয় ঘটা প্রতিটি বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করছি। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার এই ঘৃণ্য আওয়ামী অপসংস্কৃতিকে আমরা বিএনপি ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধিক্কার জানাই। দায়িত্ব পালনরত গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরাও কাল নির্মম নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। তাঁদের সকলের প্রতি আমাদের সর্বাঙ্গীন সহমর্মিতা আছে ও সর্বদা থাকবে। গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি যে স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিক নিরাপত্তা, তাদের উপর এই আঘাতের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। মহাসমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের সশস্র ও যুদ্ধাঙ্গদেহী হামলার মুখেও আমাদের নিরস্ত্র কর্মীরা বুক চিতিয়ে আতœরক্ষার্থে রুখে দাঁড়ায়। পুলিশের একপাক্ষিক হামলা প্রতিরোধে তৃণমূলের নীরস্ত্র কর্মীদের যে স্বত:স্ফুর্ত তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ, সেটিকেই পরিকল্পিত বয়ানে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ করে পূর্বনিয়োজিত সন্ত্রাসীরা। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, বাস, মোটরসাইকেলসহ বেশ কটি গাড়িতে আগুন দেয় তারা। হামলা করে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। এ ছাড়া কাকরাইল, ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও শান্তিনগর এলাকার কয়েকটি পুলিশ বক্স তারা পুড়িয়ে দেয়। অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, যাদের মানবতা লঙ্ঘনের ইতিবৃত্ত আজ সারা বিশ্বে সমালোচিত — সেই পুলিশের অজস্র সদস্যের উপস্থিতিতে, দিনের আলোয়, তাদেরই প্রধান কার্যালয়ের হাসপাতাল বা এম্বুলেন্স পুড়িয়েছে গুটিকয়েক বিএনপির কর্মী, ভেঙেছে পুলিশ বক্স — এই বয়ানটি আষাঢ়ে গল্প হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশবাসী তথা সংশ্লিষ্ট সকল মহল। প্রকৃতপক্ষে, গতপরশু ঘটে যাওয়া প্রতিটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার স্থল ছিল মূল মহাসমাবেশ তথা পল্টন থেকে দূরে। সেখানে আমাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতি বা দলীয় অবস্থানের প্রশ্নই উঠে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একই সময় একটি তথাকথিত সমাবেশ করে নয়াপল্টন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে। তাদের প্রায় সব নেতা-কর্মীর হাতে লাঠি ছিল, যা ব্যবহার করা হয়েছিল সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উপরে, এবং সেই অনাচারের দায়ই বিএনপির উপর চাপানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের চিরন্তন যে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক বৈশিষ্ট, সেই ধারাবাহিকতায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের অংশগ্রহণে, সরকারী স্থাপনা ও বেসামরিক যানবাহনে নিজেরা হামলা করে ও পুড়িয়ে দিয়ে তারা বিএনপির উপর দোষ ও মামলা চাপানোর অপপ্রয়াসে আবারও লিপ্ত হয়েছে। তিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে — যে কিভাবে পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা, কিংবা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উপস্থিতিতে বাস পোড়ানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। স্বীকারোক্তি দিয়েছে পুড়িয়ে যাওয়া যানবাহনের ড্রাইভার ও হেলপাররা। পুলিশ ও বিচার বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা যে লাগামহীন হামলা, মামলা, বাধা, তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করে চলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে ও ধৈর্যের সাথে সেগুলোকে মোকাবিলা করে আমরা দেশজুড়ে একের পর গণসমাবেশ, পদযাত্রা, গণ-অনশনসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছি। রাজপথে অহিংস থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আমরা সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি বলেই, সরকার পতনের চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে এসে গতপরশু আমাদের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে সহিংস রূপ দেওয়ার হীন কৌশল অবলম্বন করেছে জনবিচ্ছিন্ন ফ্যাসিস্ট সরকার।

এই লক্ষ্যে, শনিবার রাত ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ক্রাইম সিন লিখা ফিতা টানিয়ে দেয় সিআইডি। সেখান থেকে তারা ১০ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে বলে অতীতের ন্যায় হাস্যকর ও প্রহসনমূলক দাবি করে। দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল, যার সমর্থনে রয়েছে প্রায় সকল গণতান্ত্রিক দল ও মানুষ — তাদের বিরুদ্ধে এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য একটিই — বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা ও পাতানো রায় তৈরীর নতুন কাহিনী রচনা করা। নিজেরা ধ্বংসযজ্ঞ ও আগুন সন্ত্রাস করে — জনগণের জান ও মালের উপর হামলা করে — সেই অপরাধে বিএনপিকে হেনস্তা করার যে ধিকৃত আওয়ামী সংস্কৃতি — তারই ধারাবাহিকতায় আবারও তল্লাশীর নামে নতুন ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট সরকার।
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সৃষ্ট যে সহিংসতা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগ, সেটিকে ব্যবহার করে, ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজারেরও বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীকে গত ২৪ ঘন্টায় আটক করা হয়েছে। রবিবার ভোর রাত থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে বাসায়-বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টায় গুলশানের বাসভবন থেকে আটক করা হয় বিএনপির সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এর আগে ভোর ৪টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করার জন্য তার শাহজাহানপুরের বাসা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোর ৬টার সময় তার বাসার ভিতর অভিযান চালালে তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। আমাদের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আটক করার জন্য তার বনানীর বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। আমির খসরু বাসায় না থাকায় তাকে আটক করতে পারেনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে না পেয়ে ছোট ছেলে তাজওয়ার এম আউয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দিবাগত রাত ১টার পর গুলশানের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এদিন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ছেলের লালমাটিয়ার বাসায় সকালে তল্লাশি চালায় ডিবি পুলিশ। না পেয়ে তার বনানীর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ডিবি পুলিশ প্রতিটি রুম তছনছ করে। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে আটকের জন্য তার বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই, প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কণিষ্ঠ পুত্র ইশফাক হোসেন এবং গাড়ির ড্রাইভার রাজিবকে ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালামের শান্তিনগরের বাসভবন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পল্লবীর বাসভবন, এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বাসভবনে তাদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

বিএনপির শুভাকাঙ্খী ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে রাত ৩টায় নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ মিছিল শেষে ফেরার সময় আদাবর থানা বিএনপির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রশিদকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে এবং নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ফরিদপুরের বিএনপি নেতা এসএম ইকরাম হোসেন লাবলুর বাড়িতে পুলিশি তল্লাশির সময় পুলিশি দুর্ব্যবহার ও অনাচারে, ভয়ে ও আতঙ্কে, হার্ট অ্যাটাক করে তার স্ত্রী মারা গেছেন।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তার গতানুগতিক ধারায় নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাস করে বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহের মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে। নিজেরা বিরোধী দলের উপর হামলা-মামলা, আঘাত-নির্যাতনের মাধ্যমে নৃশংস আক্রমণ করে — তার দায় সেই মানবতা লঙ্ঘনের শিকার হওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদেরই উপর দেওয়ার যে দুরভিসন্ধিমূলক বয়ান — তা কখনো কেউ বিশ্বাস করেনি, আজও করেনা।

ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশের সকল শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। একদিকে হিংস্র ফ্যাসিবাদ, অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণ। ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে একটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন আদায় করে গণতন্ত্রকামী জনগণের একমাত্র লক্ষ। আমরা দৃঢ়কন্ঠে জানিয়ে দিতে চাই যে, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে আমাদের যে চলমান আন্দোলন তা সহিংসতা দিয়ে দমানো যাবেনা। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর প্রতি জনগণের যে সমর্থন তা গতপরশু দিনের মহাসমাবেশে অভূতপূর্ব উপস্থিতির মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে। আরো তীব্র মনোবল, দৃঢ় অঙ্গীকার, ও সুসংগঠিত জনসমর্থন নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণ।

সংগ্রামী বন্ধুরা, আওয়ামীলীগের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে প্রভু ও জনগণকে দাসে পরিনত করেছেন। দেশের মানুষ বিরোধী দল সব অধমের অধম বলে তার আচরণের মধ্যে ফুটে ওঠে। ক্ষমতা-উন্মত্ত আওয়ামীলীগ জনগণের আস্থা ও সমর্থন হারিয়ে এখন অভিশপ্ত হয়ে শয়তানি মার্কা কাজ করছে। ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ ঘিরে সরকার করেছিলো এক বিস্ময়কর চক্রান্ত। সেই চক্রান্তের আলামতগুলি এখন প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। অংসখ্য ভিডিও ফুটেজ, স্থীরচিত্র ও তথ্য-উপাত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের অনুমতি দিলেও ভেতরে ভেতরে এঁটেছিলো সর্বনাশা হামলার পরিকল্পিত নীলনকশা। সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ থেকে নানা ঘটনায় মনে হয় সরকারের এজেন্টরা দেশের বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মন্দিরে নাশকতা করে দোষ চাপানোর চক্রান্ত করতে পারে। এবিষয়ে বিএনপি ও এর সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কুলভাঙ্গা নদীর ¯্রােতের মতো মানুষের খর¯্রােত দেখে দিশেহারা হয়েছিলো সরকার। উপচে পড়া মানুষের ঢলের কারণেই অজুহাত খাড়া করে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর পুরনো খেলায় মেতে উঠে তারা। এই জন্যই আমরা পরশুদিন দেখি নানামুখি সহিংস সন্ত্রাসের বিস্তার। উস্কানির অভিনব সবপন্থা অবলম্বন করা হয়, আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী আর পুলিশের যৌথ আক্রমণের নারকীয় দৃশ্য।

সমাবেশের জন্য আগত বিপুল সংখ্যক মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদনে গ্যাস ও রাবার বুলেটের বৃষ্টি নেমে আসে, সাউন্ড গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ও রাস্তার কালো ধোঁয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হাজারো নেতাকর্মী প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। শর্টগান থেকে অবিরাম গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে। স্প্রিন্টারে অনেকের দেহ চালুনির মতো ঝাঁঝরা হয়ে যায়। গুলিতে নিথর হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে যুবদল নেতা শামীম খান, সাংবাদিক রফিক ভূ্ইঁয়া। মৃত্যু আর রক্তাক্ত জখমের নগরীতে পরিণত করা হয় ঢাকা শহরকে। আহত নেতাকর্মীদের আর্তচিৎকারের আওয়াজে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। গতকাল হরতালেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাদ থেকে ফেলে দেয় মোহাম্মদপুরের বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদকে। তৎক্ষনাত মারা যায় সে। হরতালের দিন চলে শুধু গ্রেফতার আর সিনিয়র নেতাদের বাসা ঘেরাওয়ের দৃশ্য। দলের মহাসচিবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যায়। এরা স্বভাবগতভাবেই ক্ষমতা-পাগল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আবারও একতরফাভাবে নির্বিঘেœ করার জন্য তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত জুলুম নিপীড়নের তীব্র মাত্রার অংশ হিসেবে গ্রেফতার করা হচ্ছে ঢাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং পুরনো মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে ও আরো অনেক নেতাদের সাজা দেয়ার কাজ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর কঠোরভাবে চাপ দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার।

নির্বাচনী মাঠ শূণ্য করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে ন্যাক্কারজণক হামলা চালায়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন তাদের কাছে ঘৃণার বস্তু। তাই রাষ্ট্রশক্তিকে করায়ত্ব করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে হলেও তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ৪/৫ দিন থেকে শুরু হয়েছে পাইকারীহারে গ্রেফতার। গতকাল হরতালের দিনপর্যন্ত কয়েক হাজারে ঠেকেছে। আওয়ামীলীগ কখনোই যুক্তির শক্তিকে মানেনা। অসংখ্য লাশের উপর দিয়ে হলেও তারা ক্ষমতা আকড়ে রাখতে চায়। গত ২৮ তারিখে মহাসমাবেশ ছিলো অন্যান্য দাবীর মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবীসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবী। সেই কারণেই সমাবেশ পন্ড করতে রক্তাক্ত-পন্থা অবলম্বন করা হয়। একচ্ছত্র ক্ষমতা চিরদিনের জন্য আকড়ে রাখতে জনগণকে নির্বাক দেখতে চায়। এজন্য তারা ভাষার শক্তিকে হরণ করেছে। ভাষা তথা কথা বলার স্বাধীনতা এখণ সম্পূর্নরুপে হরণ করা হচ্ছে। দেশ এখন ক্রমাণয়ে প্রভু ও দাসের রেখা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। এখানে ব্যক্তির স্বয়ংসম্পূর্ণতা হওয়া সম্ভব নয়। এখানে কঠোর কর্তৃত্ববাদের প্রভু শেখ হাসিনা গোটা দেশকে পরাধীন করেছে। এই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গতে জনগণ এখন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আদর্শ ও ন্যায়ের সংগ্রাম কখনো পরাজিত হয়না। চক্রান্তকারী নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকারের পতন অত্যাসন্ন। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে চলমান আন্দোলন, মামলা, হামলা ও গ্রেফতার দিয়ে কখনোই থামানো যাবে না।

কর্মসূচি ঃ

দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দূর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটবাজীর ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত উর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবী আদায়ের লক্ষে আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়ী বাড়ী তল্লাশী, হয়রানী ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবী আদায়ের লক্ষে আগামী ৩১ অক্টোবর এবং ১ লা ও ২’রা নভেম্বর ২০২৩ তারিখ দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
 বিএনপির অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে ঃ
 সংবাদপত্রের গাড়ী
 অ্যাম্বুলেন্স
 অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ী ও
 জরুরী ঔষধ পরিবহন।
বার্তা প্রেরক
(মুহম্মদ মুনির হোসেন)
সহ-দফতর সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি