সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি গুটিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন কর্মসূচির আয়োজক বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে ছাত্রলীগের শোকদিবস পালন করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে কর্মসূচি গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা। বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডি এস ডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন আয়োজকরা নিজেদের সাবেক ছাত্র এবং তাদের পুনর্মিলনী করবে বলে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। তাই তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রলীগ জানলে অনুমতি দেওয়া হতো না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালনের বক্তব্য অনুযায়ী নিজেদের পরিচয় গোপন করে শোকসভা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল বুয়েট ছাত্রলীগ। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা সেটা ঠেকিয়ে দিয়েছে। পরিচয় লুকিয়ে অনুমতি নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যানারে আওয়ামী লীগের ঘোষিত শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিলেন তারা। ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করে। ইতোমধ্যে দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এ কর্মসূচি পালন করছে আগস্ট মাসের শুরু থেকে।
শনিবার (১২ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি গুটিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন কর্মসূচির আয়োজক বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। বুয়েটের সেমিনার হলে এই কর্মসূচীর আয়োজন করেছিলেন তারা।
ছাত্রলীগের শোক সভার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী শ্লোগানে ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। ছাত্র লীগের আস্তানা-এই বুয়েটে হবে না। ছাত্রলীগের ঠিকানা-এই বুয়েটে হবে না। রাজনীতির ঠিকানা-এই বুয়েটে হবে না। আবরারের রক্ত-বৃথা যেতে দেব না। শোক অনুষ্ঠান শুরুতেই এই শ্লোগানে, শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। নিজেদের আত্মগোপন করে বুয়েট ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য শোক দিবস পালন করতে এসেছিলেন ছাত্রলীগ। কিন্তু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের তোপের মুখে শোক সভা বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগের কথিত সাবেকরা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনে শহীদ হয়েছিলেন বুয়েটের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদ। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বুয়েটে। তাদের দাবির মুখে সে বছরের ১১ অক্টোবর ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি। এরপর থেকে বুয়েটে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা স্তিমিত রয়েছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে বুয়েটে শোকসভার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করেন।
শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৬টার দিকে এ সভা শুরু হয়। সভা শুরুর পরপরই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত অনুষ্ঠান শেষে করে সেখান থেকে চলে যান কর্মসূচির আয়োজন ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বুয়েটের শহীদ মিনারে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুয়েট অডিটোরিয়ামের সামনে ব্রিফ করেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন।
ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করলেও তাতে ফল মেলেনি।
ছাত্রলীগ নেতারা নিজেদের ৭০-৮০ দশকের সাবেক বলে অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার অনুরোধ করলেও তাতে শিক্ষার্থীরা সাড়া দেয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সাবেক ওই সাধারণ সম্পাদক ও বাকি নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডি এস ডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, বলা যায়, তারা আমাদের থেকে অনুমতি নিয়েছে, আবার নেয়ও নি। অনুমতি নেওয়ার সময় জানিয়েছে, তারা সাবেক শিক্ষার্থী, পুনর্মিলনী করবে ক্যাম্পাসে।
সে কারণে আমরা অনুমতি দেই। কিন্তু তারা বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ব্যানারে প্রোগ্রাম করতে গেলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। তিনি বলেন, আমরা যদি জানতাম তারা বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ, তাহলে অনুমতিই দিতাম না। তাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার আছে। আমি এই মুহূর্তে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। নইলে স্পটে যেতাম। কাল সকালে আমরা শিক্ষার্থীদের কথা শুনব।
উৎসঃ আমার দেশ