অবশেষে সাকিবের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিল বিসিবি, সাময়িক সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম

সাকিব আল হাসানের গত ৬ মার্চের বক্তব্যের পর থেকেই শুরু হয়েছিল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তিনি জানিয়েছিলেন, ক্রিকেট খেলার মতো যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস নেই তার, এজন্য এখন তার ছুটি প্রয়োজন।

এ নিয়ে বোর্ড সভাপতি, টিম ডিরেক্টরও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন বেশ। এবার জানা গেল, আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে বিশ্রাম চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই আজ বিকেলে ধানমন্ডিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কার্যালয়ে সভায় বসেছিলেন বোর্ডের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। সভায় সাকিবের অনুরোধ মেনে নিয়ে তাঁকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।

সভা শেষে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা চাই সাকিব সব সংস্করণের ক্রিকেটেই খেলুক। কিন্তু সে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে বিশ্রাম চেয়েছে। তাকে চাপ দেওয়া ঠিক হবে না। সে কথা বিবেচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তার মানে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে, টেস্ট কোনো সিরিজেই সাকিবকে পাবে না বাংলাদেশ দল।আজ সভা শেষে জালাল ইউনুস জানান, আগামীকাল রাতে সাকিব দুবাই থেকে ঢাকা ফেরার পর পরশু তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বিসিবির কর্মকর্তারা। সে আলোচনায় বিসিবি সাকিবের কাছে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইবে।

জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে কাল রাতেই দুবাইয়ে অবস্থানরত সাকিবের সঙ্গে মুঠোফোনে এক দফা আলোচনা হয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের। আজ সভায় বসার আগে সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছেন জালাল ইউনুসও। তখনও সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিতে চান বলে জানিয়েছেন। তারপরই তাঁকে বিশ্রাম দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।

আজ সভা শেষে জালাল ইউনুস জানান, আগামীকাল রাতে সাকিব দুবাই থেকে ঢাকা ফেরার পর পরশু তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বিসিবির কর্মকর্তারা। সে আলোচনায় বিসিবি সাকিবের কাছে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইবে।

গত রোববার দুবাইগামী বিমানে ওঠার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাকিবের আলাপের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। গত দুদিনে এ নিয়ে সরগরম ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ এ নিয়ে কথা বলেছেন। অবশেষে আজ বেক্সিমকো কার্যালয়ে সাকিবের ব্যাপারে বিসিবির সিদ্ধান্ত জানালেন জালাল ইউনুস।

দুবাই যাওয়ার আগে গত বুধবার বিমানবন্দরে সাকিব বলেন, সদ্যসমাপ্ত আফগানিস্তান সিরিজে নিজেকে দলে ‘প্যাসেঞ্জার’ মনে হয়েছে তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে খেলার মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থা তাঁর নেই বলেও জানান সাকিব।

‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে বলতে হয়, আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে যে অবস্থায় আছি, মনে হয় না আমার পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব। এ কারণেই আমার মনে হয়, আমি যদি একটা বিরতি পাই, যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার জন্য খেলাটা সহজ হবে’—বিমানবন্দরে বলেছেন সাকিব।

সেটি শুনে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে সাকিবের কথা অনুযায়ী সাকিব দুবাই থেকে ফিরে ১১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকাগামী বাংলাদেশ দলকে বহনকারী বিমানে উঠবেন। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন, এভাবে চললে তাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন, যা পছন্দ হবে না ক্রিকেটারদের।

সাকিবও বলেছেন, বিমানবন্দরে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না যাওয়ার কথা সরাসরি বলেননি। ‘আমি তো বলিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাব না। বলেছি দুই দিন পর এটা নিয়ে আলোচনা হবে। এই দুই দিন আমি ভাবব, আশা করি বিসিবিও ভাববে। সিদ্ধান্ত হবে আলোচনার পর’—বলেছেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজে না খেলে টেস্ট সিরিজে খেলার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন সাকিব।

এর মধ্যে গতকাল বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বিমানবন্দরে সাকিবের এমন কথার তীব্র সমালোচনা করেছেন। আইপিএলে সাকিবের দল না পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘সাকিব যেহেতু আইপিএলে খেলছে না, সাকিবের কাজটা কী? দল পেলে তো আইপিএলেই খেলতে যেত!’

বিসিবির চুক্তিতে থাকা সাকিব এবং অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়মিত বিশ্রাম কিংবা বিরতি চাওয়া নিয়ে বিরক্তিও জানিয়েছেন মাহমুদ, ‘এখনই যথার্থ সময়। বারবার এমন হতে পারে না যে চাইলাম খেললাম না, চাইলাম খেললাম। শুধু সাকিবকে না, ওদের সবাইকে ছাড়াই খেলার কথা ভাবতে হবে।’