নতুন মোড়, ‘স্বপ্নভঙ্গে’ তাসফিয়ার আত্মহত্যা !

প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে onebd.news er ফেসবুক পেজে লাইক দিন

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন খুন হননি! প্রেমের স্বপ্নভঙ্গে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করতে পারেন এমনটি ধারণা পুলিশের। তার ‘প্রেমিক’ আদনান মির্জাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিও ফুটেজ, সৈকতে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের কথোপকথন ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সর্বোপরি আদনান মির্জার কল লোকেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে এমনটিই ধারণা করছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এরপরও পারিপার্শ্বিক আলামত, আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এটি হত্যাকাণ্ড নাকি অাত্মহত্যা সেটা নিশ্চিত হতে পারছে না পুলিশ। তবে প্রেমঘটিত কারণেই তাসফিয়ার মৃত্যু সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে এটাকে হত্যা নয়, আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। হয়তো প্রেমের স্বপ্নভঙ্গের হতাশা থেকে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আবেগের বশে পতেঙ্গা সৈকতে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রেমিকের সঙ্গে প্রথম ডেটিং এ তার স্বপ্ন হয়তো পূরণ হয়নি। এছাড়া পরিবার থেকেও তাদের প্রেম নিয়ে বারণ ছিল। এরপরও প্রথম ডেটিং এ তারা বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে সিআরবি যায়। সেখান থেকে স্টেডিয়াম সংলগ্ন গ্রিডিগার্টস রেস্টুরেন্টে বসে সেখানেও কিছু খায়নি তারা। পরে দুজন সিএনজি অটোরিক্সা করে গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে আসে। সেখানে আইসক্রিম অর্ডার করলেও আইসক্রিম খাননি কেউ। পরে দুজন দুটি সিএনজি করে পৃথকভাবে চলে যায়।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট চায়না গ্রিল থেকে সিসিটিভির একটি ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। ওই রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়া ও আদনানকে একসঙ্গে বের হতে দেখা যায়। এ সময় আদনানকে বিল দিতেও দেখা যায়।

.চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করে তাসফিয়া ও আদনান। তারা ৬টা ৩৭ মিনিটে বের হয়ে যায়। ওই রেস্টুরেন্টের যে কর্মচারী তাদের আইসক্রিম সার্ভ করেছিলেন তার নাম উজ্জ্বল দাস। তিনি জানান, এ জুটি ২০-২২ মিনিট দোকানে ছিল। তারা দুটি আইসক্রিম অর্ডার করেছিল। দুটি আইসক্রিমের দাম আসে ভ্যাটসহ ৩৭৫ টাকা। বিল দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর ওই টেবিলে গিয়ে দেখতে পান গ্রাহক আইসক্রিম খায়নি। কিন্তু বিল পরিশোধ করে চলে গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, রেস্টুরেন্টেই কোনো ধরনের সমস্যা হয়েছিল দু’জনের মধ্যে। নয়তো অর্ডার করার পরও কেন তারা আইসক্রিম খেল না।’

এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার ছিনতাইকারিদের হাতে তাসফিয়া নিহত হতে পারেন এমনও সন্দেহ পুলিশের। চায়না গ্রিল থেকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিক্সা করে রওনা দেওয়ার সময় তাসফিয়া আমিনের হাতে একটি দামি মোবাইল ফোন ও স্বর্ণের আংটি ছিল। তাসফিয়ার লাশ উদ্ধারের পর সেই মোবাইল ফোন ও আংটি পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, আশাহত মনে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে একাকি সময় কাটাতে গিয়ে ছিনতাইকারিদের শিকার হতে পারেন তাসফিয়া।

এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় যেস্থানে তাসফিয়ার লাশ পাওয়া গেছে সেখানে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তাকে একাকি বসে থাকতে দেখেন চট্টগ্রামের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটর শ্যালক। এসময় তিনি তাসফিয়ার পাশে একটি ক্যান এবং ফায়ার বক্স দেখতে পান বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন। এসময় নিচে নেমে পাথরের কাছে গিয়ে তাসফিয়াকে হাঁটাহাঁটি করতেও দেখেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের শ্যালক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ বলছে, সেই ক্যানে বিষজাতীয় কিছু থাকতে পারে, যা পান করে আত্মাহুতি দিতে পারেন তাসফিয়া।

তবে হত্যা না আত্মহত্যা তা নির্ভর করছে ময়নাতন্দন্ত প্রতিবেদনের উপর। প্রতিবেদন পেলেই এ মৃত্যুরহস্যের জট খুলবে। সে অপেক্ষায় আছে পুলিশ।এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে একটি নিয়মিত মামলা হবে এবং আদনানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন এডিসি আরেফিন জুয়েল।

radiotodaydsubd .com