পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বঘোষিত ‘রাজাকার’

একাত্তরের কুখ্যাত বাহিনী রাজাকারকে ঘৃণার সঙ্গে দেখা হলেও এক তরুণ গর্বভরে ঘোষণা করেছেন তিনি রাজাকার। তবে গায়ে, গেঞ্জিতে রাজাকার লেখা তরুণের ছবি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আর সাহস করে প্রকাশ্যে আসছেন না তিনি। প্রায় এক মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে নিজের গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল।

এ সময় ওই তরুণ নিজেকে ‘রাজাকার’ ঘোষণা দিয়ে নামেন।এই ছবি তখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও পুলিশ বলছে তারা এই ঘটনা জানেই না। যদি কেউ অভিযোগ ওই তরুণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।ওই তরুণ নিশ্চিতভাবেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কারণ, তিনি যে দলটির সঙ্গে দাঁড়িয়ে কোটা নিয়ে আন্দোলন করছিলেন, সেই দলে ওই এলাকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাব ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাই ছিলেন।তবে ওই তরুণের খোঁজে বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে গিয়ে বহু ছাত্র এবং কর্মকর্তাদেরকে জিজ্ঞেস করেও তার নাম, পরিচয় কিছুই পাওয়া যায়নি।

এর মধ্যে একাধিক ছাত্র জানিয়েছেন, ওই ‘রাজাকার’ কে তারা স্ট্যামফোর্ড’ ইউনিভার্সিটিতে দেখেছেন। তবে সেই দিনের ঘটনার পর আর দেখা যায়নি।তবে ‘স্টামফোর্ড’ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা সুপা সাদিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই ছেলে আমাদের এখানকার ছাত্র মনে হচ্ছে না। তবে অনুসন্ধান করে দেখব।’

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী।

এই দেশেরই বেসামরিক মানুষদেরকে নিয়ে গঠন করা এই বাহিনীটিই পাকিস্তানি সেনাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবারের সদস্য, বাড়িঘর চিনিয়ে দিত। তাছাড়া গ্রাম এলাকায় বিভিন্ন সড়ক, সেতু, নদীর ঘাট বা নদীপথে পাহারা দিত রাজাকাররা।নিজ দেশের মানুষদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মতোই গণহত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের অভিযোগ ছিল রাজাকারদের বিরুদ্ধে।নিয়মিত বেতনভোগী বাহিনীটি মূলত জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দিয়েই গঠন করা হয়। যুদ্ধ চলাকালে মে মাসে সে সময়ের খুলনায় খানজাহান আলী রোডে একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনীর প্রথম ইউনিট গঠন করেন সে সময় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের ডেপুটি আমির আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ।রাজাকার বাহিনীর সদস্যটা এতটাই পাকিস্তানপ্রেমী ছিল যে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও দেশের বেশ কিছু এলাকায় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছে রাজাকাররা।

মুক্তিযুদ্ধের পর পর রাজাকারদের বিচার চললেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দালাল আইন বাতিল করে তাদেরকে মুক্ত করে দেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আর এই সুযোগে রাজনীতি ও সমাজে প্রতিষ্ঠিতও হয় তারা।তবে ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজাকারদের ‘সুদিন’ কমতে থাকে আর এখন ঘৃণিত শক্তি হিসেবেই তাদের দেখা হয়।তবে এই তরুণ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে নিজেকে কেন রাজাকার ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা জানার সুযোগ হয়নি। তার কোনো হদিসই মিলছে না।

ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা যায়, ধানমন্ডির ৯/এ ইবনে সিনা হাসপাতালের উল্টা দিকের রাস্তায় সাদা গেঞ্জি ও কালো রঙ্গের প্যান্ট পড়া তরুণটির দুই হাতে লাল ও কালো রঙয়ের কালি দিয়ে ‘রাজাকার’ এবং সাদা গেঞ্জিতে ‘আমি রাজাকার লেখা’।বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মহাজোটের সহ-সভাপতি ওয়াসেক হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহিতা।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও একটা ছেলে নিজেকে রাজাকার ঘোষণা করবে, আর তাকে কেউ কিছু বলবে না, এটা হতে পারে? তাকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’এই মু্ক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘যে ছেলে এত বড় অপরাধ করলো তাকে পুলিশ এখনও কেন আটক করতে পারেনি? ঘটনার দিনই তাকে আটক করা উচিত ছিল।’কোটা আন্দোলন নিয়ে ওয়াসেক বলেন, এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমি রাজাকার যে লিখেছিল যে ছেলেটি তারাই আজ জিতল। তারা জিতে গেছে মিছিল মিটিং করে। আমরা যারা স্বাধীনতা এনে দিলাম তারা আজ খারাপ হয়ে গেলাম।’‘কোটা নিয়ে আন্দোলনে আমাদের বিপক্ষে নানা কথা বলা হয়েছে। তারা অবশ্যই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। তাহলে কি আমাদের অপমান করা হল না? সরকার এর বিচার করবে না?’

‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কিছুই চাইনি কোন সরকারের কাছে। এমনকি কোন দিন কোন কিছুর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলনও করেনি। আমরা কোটাও চাইনি, ভাতাও চাইনি। বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের অভাব অনটনের খবর মিডিয়া এসেছে। এগুলো দেখে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের উপর সহানুভূতি দেখিয়ে ভাতা দিয়েছে।’‘পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশের মানুষের জন্য কোটা ছিল মাত্র শতকরা ১০ ভাগ। কিন্তু তাতে আবার ভাইটাল বা গুরুত্বপূর্ণ পদে দিত না।

কিন্তু আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে দেশের মানুষ ১০০ ভাগ কোটা পাচ্ছে।’স্বঘোষিত রাজাকারের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ছেলেটা যদি এমনটি করে থাকে তাহলে অবশ্যই অপরাধ করেছে। আমি এই বিষয়ে জানি না, এর আগে এমন কোন সংবাদ পাইনি বা শুনিনি। ঘটনার বিষয়টি নিয়ে কেউ থানায় অভিযোগও দেয়নি।’‘অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব’-বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঢাকাটাইমস

প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে onebd.news er ফেসবুক পেজে লাইক দিন