চট্টগ্রামে সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুর সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁয় যায় দু’জন। সেখান থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও গিয়েছিল কি-না এবং তাসফিয়ার হাতে টাকা ছিল না, তাহলে কীভাবে নেভাল এলাকায় গেল সে- এ দুটি প্রশ্নের উত্তর মিললে মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে মনে করছে পুলিশ।
এদিকে তাসফিয়াকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করে হত্যা মামলা করেছেন তার বাবা মো. আমিন। বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা থানায় এ মামলা করা হয়। মামলায় তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হলো- মো. সোহাইল, শওকত মিরাজ, আসিফ মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম ও মো. ফিরোজ। আদনান মির্জাসহ অন্য আসামিরা সবাই যুবলীগ নেতা ফিরোজের অনুসারী বলে জানা গেছে । বর্তমানে নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী অঞ্চল) জাহেদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে তাসফিয়াকে নেভাল এলাকায় যারা দেখেছিল, তারা ও বন্ধু আদনান মির্জার কথার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। দুপক্ষের বক্তব্যের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তাসফিয়া কীভাবে নেভাল এলাকায় গেল, কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, বাসা থেকে বের হওয়ার পর দু’জনই সিআরবি এলাকায় গিয়েছিল। এরপর গোল পাহাড় চায়না গ্রিলে কিছুক্ষণ সময় কাটায় দু’জন। সেখান থেকে একসঙ্গে বের হয়। তবে সে আর বাড়ি ফেরেনি।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বন্ধু কর্ণফুলীর তীরে দেয়ালের ওপর এক কিশোরীকে বসে থাকতে দেখে। এক পর্যায়ে সেখানে তাকে আর দেখেনি তারা। কিছুক্ষণ পর কর্ণফুলীর তীরে পাথরের ওপর ওই কিশোরীকে বসে থাকতে দেখে। এক পর্যায়ে একটি চিৎকার শোনে। কিছুক্ষণ পর সেখানে স্থানীয় লোকজন ও তিন বন্ধু গিয়ে কাউকে দেখতে পায়নি আর। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে কর্ণফুলীর তীরে পাথরের ওপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকায় অবস্থায় ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, আদনান তাসফিয়াকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেওয়ার পর বাসায় না গিয়ে অন্য কোথাও গিয়েছিল কি-না কিংবা বাসায় গিয়ে আবার বের হয়েছিল কি-না তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাসফিয়ার হাতে কোনো টাকা ছিল না, তাহলে কীভাবে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা নেভাল এলাকায় গেল তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বুধবার রাতে আটক তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পতেঙ্গা থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসাইন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামী রোববার শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।’এদিকে তাসফিয়ার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে নাসিরাবাদ সানশাইন গ্রামার স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা।
সমকাল
প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে onebd.news er ফেসবুক পেজে লাইক দিন