আল্লামা সাঈদী পুত্রের আবেগঘন লেখা, কি অপরাধ করেছেন আমার বাবা ?

প্রিয় মুফাস্সিরকে হাটু এবং কোমরের চিকিৎসার জন্য আজ হাসপাতাল ডাক্তার দেখাতে আনলে সরাসরি ওনার পাশে গিয়ে সালাম দিলাম, ওনি হাসি মুখে আমার সালামের জবাব দিলেন এবং আমি আমার নাম বলে পরিচয় দিলাম, এর পর ওনাকে গাড়িতে উঠানোর সময় ওনি ওনার তৃতীয় সন্তান জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান Masood Sayedeeভাইয়ের কপালে চুমু খেলেন,সে সুযোগে বিদায় দিতে গিয়ে হাত ধরে দোয়া চাইলাম হুজুর দোয়া করতে লাগলেন এবং আমি এরপরে হুজুরের মুখের দুপাশে হাত দিয়ে সরাসরি কপালে চুমু খেলাম এবং চোখের জ্বলে আবারো বিদায় দিলাম৷

আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাস্সিরে কুরআন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়। জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা দেখার পর আবার তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।

দেশবাসী স্বাক্ষী, রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কোনকালেই তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। বরাবরই আমার আব্বার বিচরন ছিলো কোরআনের ময়দানে। জনগনের কাছে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে উৎসাহিত করাই ছিল তার কাজ।

আজ প্রায় ৭টি বছর সেই মানুষটি সরকারের রাজনৈতিক রোষানলে কারাগারে বন্দী। তার জবানীতে পবিত্র কোরআনের বিজ্ঞানময় তাফসীর শোনা থেকেও মানুষ বঞ্চিত আজ ৭টি বছর। আচ্ছা, কি অপরাধ কবেছেন আমার বাবা !?কি অপরাধ করেছেন তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে ?
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় দৃস্কৃতকারী, পাকিস্তান আর্মির সহযোগী, রাজাকার, শান্তি কমিটির লোকজনের অপকর্মের বিচারের জন্য স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দালাল আইন প্রনয়ন করা হয়। লক্ষ লক্ষ লোককে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়। ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।পিরোজপুরেও শত শত রাজাকার এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী যদি সরকারের কথিত মতে সত্যিই রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কেউ একটি মামলাও করলনা কেন?

আজকে যারা তথাকথিত ‘ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য’ হিসেবে নিজেদের দাবি করেছেন, ট্রাইব্যুনালে এসে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন, তারাই বা কেন স্বাধীনতার পর থেকে নিয়ে ২০১০ সাল (আমার আব্বাকে গ্রেফতারের বছর) পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আমার আব্বার বিরুদ্ধে পিরোজপুরের কোন থানায় মামলা তো দূরের কথা, থানায় সামান্য একটি সাধারন ডায়েরী (জিডি) করলেন না কেন ?!?!

আল্লামা সাঈদী যে ৩টি (১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮) নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করেছেন তার প্রত্যেকটিতেই পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, স্বনামধন্য প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা সাঈদীকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আল্লামা সাঈদী যদি সরকারের কথিত মতে স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীই হতেন তাহলে স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধারা কী আল্লামা সাঈদীর পক্ষে এক মুর্হূতের জন্যও কাজ করতেন ?? আল্লামা সাঈদীর যদি স্বাধীনতাবিরোধী কোন ভূমিকা থাকত, তিনি যদি যুদ্ধাপরাধীই হতেন তাহলে কি পিরোজপুরের মানুষ আল্লামা সাঈদীকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করতেন !!??

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জিয়ানগরের জনগন আল্লামা সাঈদীকে ভালোবাসে বলেই তারা তাকে ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছেন, আমাকেও ভোট দিয়ে এই উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। ১৯৭১ সালে আল্লামা সাঈদী যদি জিয়ানগরের হিন্দুদেরকে জোর করে মুসলমান বানাতেন, নির্যাতন করতেন, লুটপাট করতেন, বাড়ি ঘরে আগুন দিতেন তবে কি এইসব মানুষেরা আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীকে ভোট দিতেন !! আমাকে ভোট দিতেন ?? তাহলে আমার আব্বার অপরাধ কি ?! কি অপরাধ করেছেন তিনি !!

বিগত পঞ্চাশটি বছর আল্লামা সাঈদী বিশ্বব্যাপী মানুষকে কোরআনের কথা শুনিয়েছেন। আমার আব্বার তাফসীর মাহফিলগুলোতে হাজারো লাখো মানুষ অংশগ্রহন করতো। এইসব মাহফিল থেকে তার কথা শুনে অসংখ্য অগনিত মানুষ সঠিক পথের দিশা পেয়েছে, নামাজি হয়েছে। এটাই কি আমার আব্বার অপরাধ ?

দেশ বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ আমার আব্বার উপর আস্থা রাখেন, তাকে বিশ্বাস করেন, তাকে ভালবাসেন। আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী লক্ষ কোটি মানুষের চোখের পানি মিশ্রিত দোয়া ও ভালবাসায় সিক্ত। এই ভালবাসাই কি তার অপরাধ?

বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে তিনি কোরআনের দাওয়াত বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন, এটাই কি তার অপরাধ ??

প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে onebd.news er ফেসবুক পেজে লাইক দিন