আর মাত্র কয়েকমাস বাকি থাকলেও তার আগেই শতাধিক আসনে একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন ২০ দলের শরিকরা। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগেই তালিকাটি হস্তান্তর করা হয় তার কাছে। এমনটি জানিয়েছেন ২০ দলের শরিক দলের একজন মহাসচিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগেই চূড়ান্তভাবে তালিকা তৈরি করেন শরিক দলের একাধিক নেতা। ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনেক যাচাই-বাছাই শেষে শতাধিক আসনে শরিকদের দাবিকৃত স্ব স্ব প্রার্থীদের নাম, আসন ও জেলাগুলো চিহ্নিত করেন। চিহ্নিত করার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে এই তালিকা জমা দেয়া হয়।
জমা দেয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অধিকাংশ আসনের ব্যাপারে সায় দেন। ফলে ২০ দলের নেতাদের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি অঙ্গীকারনামা তৈরি করা হয়। যাতে কেউ সরকারের লোভ-লালসার ফাঁদে পা না দেয়। অঙ্গীকার নামায় বলা আছে, যত রকমই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার হামলা-মামলার নির্যাতন করুক না কেন কেউ যেন জোট ছেড়ে না যায়।
সেজন্য জোটের শীর্ষ নেতারাও এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাম ঘরণার এক শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, জোট কখনো ভাঙবে না। জোট আরো শক্ত হবে। তিনি বলেন, শরিকদের সব দাবি মেনে নিয়েছে বিএনপি। এতে জোটের শরিক দলের নেতারা খুব খুশি।
এদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আসন ও তাদের প্রার্থীর নাম জমা দেন। এসব আসনে জোটগত ও স্বতন্ত্রভাবে দলটির নেতারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতারা হলেন, এম এ হাকিম (ঠাকুরগাঁও-২), মোহাম্মদ হানিফ (দিনাজপুর-১), আনোয়ারুল ইসলাম (দিনাজপুর-৬),
মনিরুজ্জামান মন্টু (নীলফামারী-২), আজিজুল ইসলাম (নীলফামারী-৩), হাবিবুর রহমান (লালমনিরহাট-১), শাহ হাফিজুর রহমান (রংপুর-৫), নূর আলম মুকুল (কুড়িগ্রাম-৪), আবদুল আজিজ (গাইবান্ধা-১), নজরুল ইসলাম (গাইবান্ধা-৩), আবদুর রহিম সরকার (গাইবান্ধা-৪), নুরুল ইসলাম বুলবুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), মো. লতিফুর রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), আতাউর রহমান (রাজশাহী-৩),
রফিকুল ইসলাম খান (সিরাজগঞ্জ-৪), আলী আলম (সিরাজগঞ্জ-৫), মতিউর রহমান নিজামীর পরিবারের কোনো সদস্য (পাবনা-১), ছমিরউদ্দিন (মেহেরপুর-১), মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (চুয়াডাঙ্গা-২), মতিয়ার রহমান (ঝিনাইদহ-৩), আজিজুর রহমান (যশোর-১), আবু সাইদ মুহাম্মদ সাদাত হোসাইন (যশোর-২), অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ (বাগেরহাট-৩), শহীদুল ইসলাম (বাগেরহাট-৪), মিয়া গোলাম পরওয়ার (খুলনা-৫), শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুছ (খুলনা-৬), ইজ্জতউল্লাহ (সাতক্ষীরা-১), আবদুল খালেক মণ্ডল (সাতক্ষীরা-২),
মুফতি রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), গাজী নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা-৪), দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে (পিরোজপুর-১ ও ২), শফিকুল ইসলাম মাসুদ (পটুয়াখালী-২), মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে (শেরপুর-১), অধ্যাপক জসিমউদ্দিন (ময়মনসিংহ-৬), ফরীদউদ্দিন (সিলেট-৫), মাওলানা হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬), ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের (কুমিল্লা-১১), শামসুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৪), হামিদুর রহমান আযাদ (কক্সবাজার-২) ও শাহজালাল চৌধুরী (কক্সবাজার-৪)।
এ আসনগুলোর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৫, ময়মনসিংহ-৬, সাতক্ষীরা-১, পটুয়াখালী-২, কক্সবাজার-৪ এই ছয়টি আসনে জামায়াত নতুন করে লড়তে যাচ্ছে। গত নির্বাচনে এ আসনগুলোতে জামায়াতের প্রার্থী ছিল না। তবে ময়মনসিংহ-৬ আসনে ২০০১ সালে জামায়াত প্রার্থী জোটের মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হন। সিরাজগঞ্জ-৫ ও কক্সবাজার-৪ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। এ কারণেই আসন দুটিতে ছাড় দিতে নারাজ তারা।
বিজেপি (নিবন্ধিত) সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ (ভোলা-১), ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মতিন সাউদ (ঢাকা-৫ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী)। খেলাফত মজলিশের (নিবন্ধিত) আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহম্মদ ইসহাক (পাবনা-১), মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪)।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (নিবন্ধিত) একাংশের সভাপতি মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস (যশোর-৫) থেকে ২০০১ সালে জোটের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, এবারো তিনি সেই আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এ ছাড়া শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মহীউদ্দিন ইকরাম, মুফতি রেজাউল করিম, আব্দুর রব ইউসুফি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির (জাফর) (অনিবন্ধিত) সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীরা হচ্ছেন ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি (গাইবান্ধা-৩), মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১), আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২)। এ ছাড়া নবাব আলী আব্বাস খান (মৌলভীবাজার কুলাউড়া), সেলিম মাস্টার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মজিবুর রহমান (মুন্সিগঞ্জ), নাসের চৌধুরী (চট্টগ্রাম), গোলাম মোস্তাফা বাটুল (রংপুর), সাইদুর রহমান মানিক (ময়মনসিংহ), জাফরউল্লাহ খান চৌধুরী (কুষ্টিয়া-৩), এস এম এম আলম (চানপুর), খালেকুজ্জামান চৌধুরী (ঢাকা-ডেমরা), শফিউদ্দিন ভুইয়া (সোনারগাঁ নারায়ণগঞ্জ), অ্যাডভোকেট মাওলানা রুহুল আমিন পিরোজপুরে প্রার্থী হতে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের অনেকেই সাবেক এমপি।
কল্যাণ পার্টির (নিবন্ধিত) সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক (চট্টগ্রাম-৪), মহাসচিব এম.এম. আমিনুর রহমান (পাবনা-১), আলহাজ কাহির মাহমুদ এফসিএ (সিলেট-১), অ্যাডভোকেট আজাদ মাহবুব (পিরোজপুর-১), মো. ইলিয়াস (চট্টগ্রাম-৮), সাহিদুর রহমান তামান্না কুমিল্লা ৬, ইসমাইল ফারুক চৌধুরী (কক্সবাজার সদর), প্রফেসর ড. ইকবাল হাসান (নারায়ণগঞ্জ-২), আলী হোসাইন ফরায়েজি কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম।
বাংলাদেশ ন্যাপের (নিবন্ধিত) সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি (নীলফামারী-১), মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া (নরসিংদী-৩), আলহাজ্ব গোলাম সারওয়ার খান (মৌলভীবাজার-২), সাদ্দাম হোসেন (কুমিল্লা-১০), সৈয়দ শাহজাহান সাজু (কুমিল্লা-৭), ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি (রংপুর-৩), মো. শহীদুননবী ডাবলু (পিরোজপুর-১), মো. কামাল ভূঁইয়া (নারায়ণগঞ্জ-৪), মো. নুরুল আমান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১), মো. তারিকুল ইসলাম (পাবনা-২), মো. জাহাঙ্গির আলম (পাবনা ৫), অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম কাঞ্চন (ঝিনাইদহ ৩), কাজী ফারুক হোসেন (খুলনা ০৩), স্বপন কুমার সাহা (ঢাকা ৬), অজিউল্লাহ অজু (নারায়ণগঞ্জ ৩), অ্যাডভোকেট এসএম আবদুস সাত্তার (বাহ্মণবাড়ীয়া-৫), রেজাউল করিম রিবন (লালমনিরহাট-২), মো. মঞ্জুরুল আলম (দিনাজপুর-৩), ওসমান গণি শিকদার (চট্টগ্রাম-৮), মো. মঞ্জুরুল আলম (দিনাজপুর-২), আতিকুর রহমান ((ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ৬), এখলাসুল হক (নরসিংদী-৪), অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম (ঢাকা ১৬)।
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া জানান, আমাদের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে কোনো কারণে যদি জোটগত নির্বাচন না হয়, তাহলে এককভাবে শতাধিক আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।
জাগপার (নিবন্ধিত) চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান মারা যান। তিনি দিনাজপুর-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতেন। সেই আসনে এবার তার সহধর্মিণী অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, তিনিও খুব অসুস্থ। এ অবস্থায় শফিউল আলম প্রধানের একমাত্র কন্যা ও দলের সিনিয়র সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানায়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব খন্দকার লুৎফর রহমান বগুড়া-১ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনপিপি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২), মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা (ঢাকা-১৩), এম ওয়াহিদুর রহমান কুমিল্লা-১০ থেকে নির্বাচন করতে চান। এনডিপি খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা (পাবনা-২), মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা খুলনা-৩ আসনে নির্বাচন করতে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের এএইচএম কামরুজ্জামান খান কিশোরগঞ্জ-৫, অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী চট্টগ্রাম-১ আসনে নির্বাচন করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
ইসলামী ঐক্যজোট (অনিবন্ধিত) মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ও মুফতি ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বে মূল অংশ জোট থেকে বের হয়ে গেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রাকিব ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল করিম নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। ডেমোক্র্যাটিক লীগ-ডিএল সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ময়মনসিংহ-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ছাড়া জোটভুক্ত দল বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস্ লীগ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় বলে জানা গেছে। এসব আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি জোটের প্রধান খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করতেও মাঠে অবস্থান রয়েছে শরিক দলগুলোর নেতারা। মানবকণ্ঠ