খুলনায় বিএনপির ১৯ নেতাকে আটক : নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কেসিসি) বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। খুলনা মহানগর যুবদল সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারু ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়ানির এবং বাড়ি বাড়ি তল্লাশীর প্রতিবাদে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টায় মহানগরীর মিয়া পাড়া রোডে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে মঞ্জু নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত নগরজুড়ে পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণায় জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ১৯ নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে। এছাড়া অসংখ্য নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশির নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচনের কাজে যুক্ত থাকলে পরিণতি হবে ভয়াবহ বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণামূলক সব কার্যক্রম বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের না ছাড়া পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আজ দুপুর ১২টায় প্রেস ব্রিফিং করে পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

খুলনায় নির্বাচনী প্রচারণায় এসে বাগেরহাটের যুবদল নেতা গ্রেফতার
খুলনা ব্যুরো, ০১ মে ২০১৮
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বাগেরহাট জেলা যুবদল সভাপতি মেহবুবুল হক কিশোর। গতকাল দুপুরে গল্লামারী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মেহবুবুল হক কিশোর সকাল ১০টা থেকে খুলনা মহানগরী এলাকায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সাথে তিনি রূপসা, টুটপাড়া ও চানমারি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে প্রচারণা কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তিনি গল্লামারী যাওয়ার উদ্দেশে একটি ইজিবাইকে ওঠেন। তাকে বহন করা ইজিবাইকটি গল্লামারী পৌঁছলে খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দলীয় সমর্থনে ও দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রচারণার কাজে অংশ নিতে শুধু খুলনা নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসছেন। এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়। অন্যান্য প্রার্থীর পক্ষেও তাদের দলীয় কর্মীরা ভিন্ন জেলা থেকে আসছেন এবং সেসব সংবাদ ও ছবি পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি কর্মীদের বেছে বেছে গ্রেফতার ও হয়রানি করা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

খুলনা সিটি নির্বাচনে বাড়ছে সহিংসতা : বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের পথসভা পণ্ড
এরশাদ আলী, খুলনা ব্যুরো
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার গতি বাড়ার সাথে সাথে সহিংসতাও বাড়ছে। প্রচারকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, পোস্টার টাঙানোয় বাধা প্রদান, নির্বাচনী সভা বাধা দিয়ে পণ্ড করে দেয়া, হামলা করে নির্বাচনী অফিস ভেঙে দেয়াসহ নানা ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার সাথে শাসকদলীয় প্রার্থীর কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে। কয়েকটি ঘটনায় থানা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর মওলাবাড়ী এলাকার ঠেকের বাজারে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে পথসভা পূর্বনির্ধারিত ছিল। সভায় বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বক্তৃতা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার আগে থেকেই সে জায়গা প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা দখলে নেন। ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরা গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পরে ধানের শীষের কর্মীরা সেখান থেকে চলে আসেন এবং পথসভা পণ্ড হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে বিএনপির মিডিয়া উপকমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, যুবলীগ নেতাকর্মীদের বাধা, মহড়া ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর মওলার মোড়ের দক্ষিণে ঠেকের বাজারে বিএনপি আয়োজিত পথসভার কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে।

কর্মসূচিতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডুর বক্তব্য রাখার কথা ছিল। পরে দলের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোড এলাকায় মিছিল করে। সোমবার সন্ধ্যায় ঠেকের বাজারে পথসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাগরিবের পর থেকেই যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে মহড়া দেন এবং একাধিক হ্যান্ডমাইকে স্লোগান দিতে থাকে। তারা পথসভায় যোগ দিতে আসা বিএনপি কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান।

বিএনপির পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করা হলেও তারা না শুনে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়। তাদের হুমকি ও মহড়ায় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জলিল খান কালাম, অ্যাডভোকেট এস আর ফারুকের নেতৃত্বে মিছিল করেন। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা ঘটনার জন্য নগর যুবলীগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু এবং যুগ্ম আহবায়ক হাফেজ শামীমকে দায়ী করেন।

নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বানরগাতী বাজারে বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান আরজুর নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিম নামে একজন যুবদল নেতাকে মারধর ও অফিস ভাঙচুর করে নৌকাপ্রার্থীর কর্মীরা। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা শেখ শহীদ আলীর স্ত্রী ও মহিলাকর্মীদের হয়রানি করা এবং প্রচারকাজে চলমান মাইকম্যানকে গালিগালাজসহ হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে অপর এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। গত সোমবার রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন শেখ শহিদ আলী।

নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গত ২৯ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে শিপইয়ার্ড রোডের অক্সিজেন কোম্পানির মোড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আরিফ হোসেনের প্রচার মাইক আটকে মেমোরি কার্ড ও লিফলেট ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় লবণচরা থানায় করা জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, আটটি মোটরসাইকেলে অজ্ঞাত ২০ জন লোক আরিফ হোসেন মিঠুর প্রচার মাইক অপারেটর মো: মহসীনের কাছ থেকে মেমোরি কার্ড ও লিফলেট ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাবেক কাউন্সিলর মো: আরিফ হোসেন মিঠু।

নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী ফারুক হিল্টনের প্রার্থিতা সমর্থনকারী মো: মোবাশ্বির হোসেন শ্যামলকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ফারুক হিল্টন খালিশপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ এপ্রিল দুপুরের পর মোবাশ্বির হোসেন শ্যামল নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে বঙ্গবাসী মোড় থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে নয়াবাটি ফিরোজ স্মৃতি সংসদে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তারা তাকে আটকে রেখে কাজী তালাত হোসেন কাউটের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পোস্টার ঝুলানোয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা জানান, কয়েকটি স্থানে তারা পোস্টার টাঙাতে গেলে আওয়ামী লীগের লোকজন বাধা দেয়। সেখানে তারা পোস্টার টাঙাবে জানিয়ে বিএনপিকর্মীদের অন্যত্র যেতে বলে।

পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ :

বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচন উপকরণ বিভিন্ন কেন্দ্রে সরবরাহ সংক্রান্ত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত খুলনা জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আবু হোসেন বাবুর বাড়িতে রূপসা থানা পুলিশ অভিযানের নামে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ও ডিবির কর্মকর্তারা তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং অন্যান্য নেতাদেরকেও নির্বাচনী তৎপরতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়।

পুলিশ অভিযানের সময় বেশ কিছু নির্বাচনী উপকরণও নষ্ট করে। এ বিষয়ে গতকাল বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

Naya Diganta