গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ‘সিলেকশন’ হবে ছাত্রলীগের কমিটি !

যোগ্যতার ভিত্তিতে পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও মেধা- এসব বিবেচনায় নিয়ে সিলেকশন পদ্ধতিতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হবে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে কোনো প্রার্থীর নাম প্রস্তাব ও সমর্থনের প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে দলের নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত সভায় তিনি এমন তথ্য জানান।

সভায় নেতাদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি। ছাত্রলীগের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে কোনো দ্বিতীয় পর্বও থাকবে না। নেতা বানানো হবে জীবনবৃত্তান্ত দেখে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।’সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ আরও কয়েক সিনিয়র নেতা।

ওই সভায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি- সবক্ষেত্রে এবার সিলেকশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।’আগামী ১১ ও ১২ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু নেতা নির্বাচন এখনও আটকে আছে।

বিডি২৪লাইভ

বর্তমান স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে: মাহমুদুর রহমান

দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ব্রে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে। ফলে যে রকম নির্যাতন হওয়ার কথা সেই রকম নির্যাতনই হচ্ছে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে দখলদার প্রধানমন্ত্রী দেশ দখল করে বসে আছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে এখন দেশের ব্যাংকও দখলে নিয়েছে। এই দখলদার সরকারকে বিদায় করতে হলে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের দালাল, বিদেশী নতজানু এ স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। ডিইউজের সভাপতি আব্দুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, প্রেসক্লাবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হুসাইন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

মাহমুদুর রহমান বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন লাইফ সাপর্টে চলে গেছে। এ সরকারের বিরুদ্ধে যখন কোনো রিপোর্ট আসে তখন তা ভিতরের পাতায় সিঙ্গেল কিংবা দুই কলামে ছোট করে ছাপা হয়। আর যখন কোনো পুরস্কারের ঘোষণা আসে তা প্রথম পাতায় লিড কিংবা সেকেন্ড লিড করা হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর এমন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে যে, কোন নিউজ করা হবে আর কোন নিউজ করা হবে না। কোন নিউজ পত্রিকার কোথায় যাবে, ছোট হবে না বড় হবে, সব সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেয়া হচ্ছে।

বেশ কিছু সম্পাদক ও নিউজ এডিটর আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, কিভাবে নিউজ যাবে তা সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। আমি তাদের প্রশ্ন করি প্রতিবাদ করছেন না কেন? জবাবে তারা বলেন, আমাদের মিডিয়াগুলোকে আমার দেশ পত্রিকার মতো সাহসী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারছি না। এছাড়া সাংবাদিকদের রুটি রুজিরও ব্যাপার আছে। তাই টিকে থাকতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের আইনমন্ত্রী বলেন, ৫৭ ধারায় যে সুযোগ রাখা হয়েছিল ৩২ ধারায় তা রাখা হবে না। অথচ ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে আমাকে চার বছর জেল খাটানো হয়েছে। অথচ আজও সেই মামলার চার্জশিট পর্যন্ত দেয়া হয়নি। সেই মামলায় আমার দেশ পত্রিকাও অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। আমার দেশ বন্ধের কারণে পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক বেকার হয়েছে। অবশ্যই এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, অনলাইনসহ অসংখ্য সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে সরকার শত শত সাংবাদিককে বেকার করে দিয়েছে। সাগর রুনি হত্যার বিচার আমরা আজও পাইনি। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ের আন্দোলন করতে পারিনি। মিথ্যার সাথে কখনো আপোস করা যাবে না। ন্যায্য দাবি আদায়ে সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে হবে। অথচ সাগর-রুনি আন্দোলনের কারণে এক সাংবাদিক নেতার পদোন্নতি হয়েছে। এ সব নেতাকে আমরা সবাই চিনি। তাদেরকে অবশ্যই চিহ্নিত করে রাখতে হবে।

আমার দেশের সম্পাদক বলেন, বিএনপির সময় যেসব পত্রিকা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে নিউজ করেছে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলেছে। অথচ সেসব সম্পাদক কিংবা পত্রিকার বিরুদ্ধে কোনো হস্তক্ষেপ হয়নি। এটাই ছিল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।

তিনি বলেন, তারেক জিয়ার নিউজ প্রকাশ করা আদালত কর্তৃক নিষেধ আছে। অথচ ৭১টিভি তারেক জিয়ার নিউজ প্রচার করলো তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশান নেয়া হলো না। অথচ স্কাইপে কথা বলা নিয়ে আমার দেশে রিপোর্ট হওয়ার কারণে তা বন্ধ করে দেয়া হলো। এতেই বুঝা যায় দেশে আইনের শাসন নেই।

তিনি বলেন, দেশ দুই স্বৈরাচারের কবলে। একজন হলো বেহায়া স্বৈরাচার অন্যজন আন্তর্জাতিক স্বৈরাচার। কেন না রিপোর্ট বেরিয়েছে নতুন করে যে পাঁচটি দেশ স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বেহায়া স্বৈরাচারকে হটাতে সাংবাদিক আতাউস সামাদ, শফিক রেহমানসহ সাংবাদিকরা যেভাবে গণমাধ্যমে ভূমিকা রেখেছিল এখন এই আন্তর্জাতিক স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে সে রকম ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস আমদানি করেছে হাসানুল হক ইনু। সন্ত্রাসবাদের জন্য তার বিচার হওয়ার কথা। অথচ সেই ইনু সাহেব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। এটাই জনগণের দুঃখ।

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাতা সিং এরশাদকে হুমকি দিয়ে নির্বাচনে এনেছিল। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তার বইয়ে লিখেছেন ফখরুদ্দিন মঈনুদ্দিন সরকার ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছিল। এরপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিভাবে বলেন, ভারত আমাদের দেশের নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

রুহুল আমিন গাজি বলেন, মাহমুদুর রহমান হলো অন্যায় ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মূর্তপ্রতিক। তিনি বিশ্বে একমাত্র সম্পাদক যিনি সংবাদপত্রের অধিকার আদায়ের জন্য অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। তবুও অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। বর্তমানে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। নির্যাতন মামলা-হামলা, গুম-খুনে দেশ ছেয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে কারাগারে যে খারাপ অবস্থায় রাখা হয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারও এমন খারাপ জায়গায় রাখেনি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে আমাদের অবস্থা কোথায়। এ নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সে কঠিন লড়াইয়ে শরীক হতে হবে। সম্মিলিত দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এ ফ্যাসিবাদি সরকারের পতন হবে ইনশাল্লাহ।

শওকত মাহমুদ বলেন, বর্তমান নতজানু সরকার দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মামলা-হামলা, গুম-খুনের এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ দফা দাবি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। এ দাবির আন্দোলন এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বেগম জিয়া বলেছেন, বেঈমানদের সাথে কোনো রকম ঐক্য হবে না। ঐক্য হতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ঐক্য হতে হবে ইস্পাত কঠিন। সেই ঐক্যের মাধ্যমে গড়ে উঠবে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্লাটফর্ম। গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। শপথ নিতে হবে সে আন্দোলনে আগামী দিনে আমরা সবাই শামিল হবো।

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল হাই শিকদার বলেন, দেশ এক জঘন্য, বাকরুদ্ধকর, ভয়ংকর অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে নতুন নেতৃত্বের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

-সংগ্রাম