আওয়ামী লীগ তিনবার তার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, এবার আর সেই সুযোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, এবারও আওয়ামী লীগ তাকে দিয়ে ক্ষমতায় আসবে আশা করলে সেটা আশার গুড়ে বালি হবে।
মঙ্গলবার শ্রমিক দিবসের একটি অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় এরশাদ এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক পার্টি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন এরশাদ।
সেনাপ্রধান থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা এরশাদ আশির দশক প্রায় পুরোটাই ক্ষমতায় ছিলেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সেই সময়ের সব বিরোধী দলই তার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রের পুনঃযাত্রা হলে এরশাদের জায়গা হয় কারাগারে।
১৯৯৬ সালে ঝুলন্ত সংসদে এরশাদের সমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পেছনেও এরশাদের দলের বিশেষ ভূমিকা আছে।
আর বিএনপি ও কিছু বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না করা ২০০৪ সালের নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেন এবং আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং জাতীয় পার্টিকে মন্ত্রিপরিষদেও রাখা হয়। আবার সংসদে বিরোধী দলও জাতীয় পার্টি। আগামী নির্বাচনে এরশাদ কী করবেন এটা নিয়ে রয়েছে আলোচনা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দ্যেশ্য করে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত বলেন, ‘এরশাদ বেঁচে আছে, তাই আপনারাও বেঁচে আছেন। আমার মাধ্যমেই আপনারা তিনবার ক্ষমতায় এসেছেন। এবারও আসবেন বলে আশা করেন? সেই আশার গুড়ে বালি।’
এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এবার আর কাউকে ক্ষমতায় আনবে না বরং নিজেরাই ক্ষমতায় আসার জন্য শক্তিশালী হচ্ছে।’দেশের বিদ্যমান অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, বিভেদসহ নানা বিশৃঙ্খলার জন্য সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেন সাবেক এই সেনাশাসক। তিনি বলেন, ‘শুধু মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু। দেশ আজ অধঃপতনে গেছে। আমরা আর মানুষ নাই, আমরা অমানুষ হয়ে গেছি।’
ক্ষমতায় আসার আগে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, ‘শুনেছিলাম ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া হবে। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে ইয়াবা আছে। শুনেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন মাদকে টালমাটাল।’
নারীদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে সরকারের এমন দাবিরও সমালোচনা করেন এরশাদ। বলেন, ‘দেশে আজ নারীদের অবস্থান কোথায়? আমার স্ত্রীসহ হাতেগোনা কয়েকজন সংসদের সদস্য হয়েছেন। কিন্তু যারা গার্মেন্টসে কাজ করে তাদের অবস্থা কী? তাদের মধ্যে তো নারীর ক্ষমতায়ন দেখি না। নারী জাতি এখন নিষ্পেষিত। খবরের কাগজ পড়লেই বুঝতে পারি।’
‘দেশ-বিদেশে এখন শ্রমজীবীদের কোনো মূল্যায়ন নেই। মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে আমাদের শ্রমিকরা নির্যাতিত হচ্ছে।’জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে রক্ত ছাড়া কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব না। ১৮৮৯ সালে কর্মঘণ্টার ন্যায্য অধিকারের দাবিতে সেদিন শ্রমিকের ফাঁসি পর্যন্ত হয়েছে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে পারলে আগের মতো শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান সাবেক এই স্বৈরশাসক।
ঢাকাটাইমস