২৫ বছরের যুদ্ধে সোয়া কোটি মুসলিম নিহত, যা একটি বিশ্বযুদ্ধের সমান ক্ষয়ক্ষতি

তার্কিস হিস্টরিক্যাল সোসাইসির পরিচালক রেফিক তুরান ইস্তাম্বুলের এক সম্মেলনে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছেন যে, গত পঁচিশ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে সাড়ে ১২ মিলিয়ন তথা সোয়া কোটি মুসলিম নিহত হয়েছে যা একটি বিশ্বযুদ্ধের সমান ক্ষয়ক্ষতি।তিনি বলেন, যুদ্ধ সাধারণত দুই দেশের মধ্যে হলেও অনেক সময় নিজ দেশের মধ্যেও যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের ফলাফল কখনোই অনুমান করা যায় না। তুরস্ক ও সিরিয়া অসমাপ্ত যুদ্ধে লিপ্ত বলে মনে হচ্ছে। খবর ডেইলি সাবাহ’র।

তুরান আরো বলেন, আমেরিকা রাশিয়া ও ইরান নিজেদের স্বার্থে সিরিয়াতে শান্তি চায় না তা ইতোমধ্যেই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।মানবিজ থেকে সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করার পর সিরিয়াতে একটি আশার আলো দেখা দিয়েছে, পুরো সিরিয়াকে মুক্ত করা এখন সময়ের দাবি মাত্র।গত ২০১১ সাল থেকেই সিরিয়া একটি অমানবিক যুদ্ধে লিপ্ত, আসাদ সরকার ক্ষমতার লোভে যে কোনো উপায়ে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী কয়েক লাখ মানুষ শুধু সিরিয়াতেই নিহত হয়েছে।

এছাড়া বিগত বছরগুলোতে ইরাক, আফগানিস্থান, পাকিস্থান, ইয়ামেন, মায়ানমার, ফিলিস্তিন ও ভারতসহ আফ্রিকার কিছু দেশে অগণিত মুসলিম নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু নিহত হয়েছে অন্য দেশের সাথে যুদ্ধে আবার কিছু নিহত হয়েছে গৃহযুদ্ধে।

আরো পড়ুন . . .

সিরিয়ায় গণকবরে ২০০ লাশের সন্ধান

সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সাবেক ঘাঁটি রাকায় একটি গণকবরে ২০০ মানুষের লাশ পাওয়া গেছে। এগুলো জিহাদি ও বেসামরিক মানুষের লাশ।শনিবার (১০ই মার্চ) স্থানীয় এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি।রাকা সিভিল কাউন্সিল কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আব্দাল্লাহ্ আল-এরিয়ান বলেন, ওই গণকবর থেকে প্রায় ৫০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে দুইশর মতো লাশ রয়েছে।

একটি হাসপাতালের কাছে ফুটবল খেলার মাঠে গণকবরটি পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়া ও ইরাকের আইএসের দখলে থাকা বেশ কয়েক জায়গায় গণকবর পাওয়া গেছে।

সিরিয়া পরিস্থিতি: মুখোমুখি পরাশক্তিরা!

সিরিয়ার বারোয়ারি যুদ্ধের ময়দানে প্রতিনিয়ত উত্তেজনা বাড়ছে। সিরিয়ায় বিবাদমান বিভিন্ন পক্ষ একে অপরের অবস্থান নিয়ে উত্তপ্ত হুঁশিয়ারি বিনিময় করলেও, সরাসরি কেউ কারো প্রতি সামরিক আক্রমণে যায়নি!

সিরিয়ায় আমেরিকা আক্রমণ নিয়ে যত কথাই বলুক না কেন রাশিয়া, শেষ পর্যন্ত কিন্তু সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি এই দু’টি দেশ। বরং এই সপ্তাহে হাওয়া উল্টোদিকেই বইছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে শুক্রবারই জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।

তবে তিনি বলেছেন, এর জন্য আমেরিকা পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে রাশিয়া। আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুটিনকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ করেছিলেন মার্চ মাসে।গত ৭ এপ্রিল সিরিয়ায় পূর্ব গৌতায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দুমায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ ওঠে। সেখানে প্রায় ৭০ জন শ্বাসকষ্টে মারা যায়। অসুস্থ হয় আরও পাঁচশ’র বেশি মানুষ।

এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সিরিয়ার তিনটি রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার লক্ষ্য করে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। জার্মানি ও তুরস্ক এ হামলা সমর্থন করলেও চীন, ইরান, জর্ডান ও ইরাক বিপক্ষে অবস্থান নেয়।রাশিয়া ১৪ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে এ হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলে। বলিভিয়া ও চীন ছাড়া ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে আর কেউ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি।

এদিকে ওই হামলায় আমেরিকা নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় ফ্রান্সের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ফ্রান্স সরকারের দেওয়া মর্যাদাপূর্ণ লেজিওঁ দ’নর খেতাব ফিরিয়ে দেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ।সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আসাদ বলেন, তিনি এমন কোনো দেশের পুরস্কার পরবেন না, যারা আমেরিকার ‘দাস’।

অবশ্য আসাদকে দেওয়া এ খেতাব প্রত্যাহারে ‘আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম’ শুরু হয়েছে, ফরাসি সরকারের এমন ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নিজেই তার সম্মাননা ফেরত দিলেন।বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেই ফ্রেঞ্চ সরকারের কাছ থেকে লেজিওঁ দ’নরের সর্বোচ্চ পদক ‘গ্র্যান্ড ক্রসে’ ভূষিত হয়েছিলেন আসাদ।

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়া নিয়ে ইরান এবং আমেরিকা সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনাও এখন চরমে। দু’টি দেশই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে একে অপরের উপস্থিতি নিয়ে হুমকি-ধামকি বিনিময় করলেও এখন পর্যন্ত সেটি সামরিক তৎপরতায় গড়ায়নি।

সিরিয়ার ময়দানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষের সেনারা মার্কিন মদদপুষ্ট কুর্দি বাহিনী এবং তাদের বিমান ঘাঁটিতে হামলা করছে। আসাদের পক্ষের সেই সেনাদেরই লক্ষ্য করে আক্রমণ করছে অ্যামেরিকা। যদিও এখন পর্যন্ত তারা ইরানিয়ান রেভুলশনারি গার্ডের ওপর হামলা চালায়নি। ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড আসাদের পক্ষের যোদ্ধাদের এবং সিরিয়ার পক্ষের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি সহযোগিতা করছে।

অন্যদিকে সিরিয়ায় নাক গলানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার সতর্ক করে আসলেও এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ইরানের মদদপুষ্ট যোদ্ধাদের আমেরিকা সৈন্য বা দেশটির সমর্থনে থাকা সেনাদের সরাসরি আক্রমণের কোনও নির্দেশ বা ইঙ্গিত দেয়নি।আমেরিকা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ইরানের কট্টর সমালোচক জন বল্টনকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।

জাতিসংঘে আমেরিকা দূত নিকি হ্যালি আগুনে ঘি ঢেলেছেন আরও বেশি। তিনি বলেছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে ইরানের অনুপ্রবেশ ঠেকানো ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্যের একটি।মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মূল শত্রু দেশগুলোর একটি হচ্ছে ইসরাইল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, সিরিয়ার মাটিতে ইরানের বাহিনীকে আক্রমণের আগে ইসরাইলকে মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের সাথে পরামর্শ করে নেয়ার ব্যাপারে বলেছে।

ওয়াশিংটনে আরব সেন্টারের প্রধান জো ম্যাকারন বলেছেন, ‘আমরা এখন দেখছি আগ্রাসী এবং রক্ষণশীল উপদেষ্টাদের পরামর্শে অ্যামেরিকা সিরিয়ার ময়দানে নামছে। ইসরায়েলের ইন্ধনে আমেরিকা ঐ যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার, যা সম্পূর্ণ বিপরীত।’

‘তবে ট্রাম্প নিজে পেন্টাগনকে নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতে হয়তো ইসরাইলের লড়াই তাদের নিজেদেরই করতে হবে,’ বলেন তিনি।এদিকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটা অতিরঞ্জিত।

ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের প্রফেসর স্কট লুকাস বলেন, ‘দু’পক্ষের (ইরান ও অ্যামেরিকা) মধ্যে চূড়ান্ত সংঘাতের কোনো সুযোগ নেই। কেননা দুপক্ষই যা পাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি দিতে হবে।’‘আপনাকে এর জন্য প্রচুর সম্পদ নিয়োগ করতে হবে। এবং কেউই জানেনা এটা কতোদূর গড়াবে!’বলেন লুকাস।বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তেজনা টানটান থাকলেও সিরিয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সামরিক কোনও পদক্ষেপ নেবেনা অ্যামেরিকা, ইরান এবং রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো।

আপনার ফেসবুক একাউন্ট দিয়ে মন্তব্য করুন