বিএনপির দুশ্চিন্তা জামায়াতের ভোট!

ঈদের পর ভোট, প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে আগাম। প্রস্তুতিতে খায়রুজ্জামান লিটন। কিন্তু বিএনপি চুপচাপ। বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচন করতে চান। তবে দল কী সিদ্ধান্ত নেয়, নিশ্চিত নন। তাই অপেক্ষায়।

আগামী ১৫ মের ভোটকে সামনে রেখে এখন গাজীপুর ও খুলনায় চলছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রচার যুদ্ধ। ২০১৩ সালের মেয়র নির্বাচনে এই দুই নগরেও জিতেছিলের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। কিন্তু দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচনে দুই মেয়রের একজনও পাননি ধানের শীষ প্রতীক। বিএনপিতেই প্রার্থী বদলের জোর দাবি উঠেছে বরিশালেও। তবে রাজশাহীতে বুলবুলের বাইরে কোনো নাম উঠছে না।

বুলবুল সমর্থকরা প্রার্থিতা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। তবে জোটের শরিক জামায়াত ইসলামী আর বিএনপির ভেতর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে দ্বন্দ্বের গুঞ্জন ভাবাচ্ছে তাদের। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এরই মধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বেন। রাজশাহীতে জামায়াতের ভোট আছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। তাই বিএনপিতে দুশ্চিন্তা।

১৯৯১ সালের সংসদীয় আসনে ভোটে রাজশাহীতে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ হতে পারেনি। সে সময় জামায়াতই চ্যালেঞ্জ করেছিল বিএনপিকে।

জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসেন প্রার্থী হচ্ছে, এসে গেছে ঘোষণা। অবশ্য গত ১২ মার্চ দলটির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সিদ্দিককেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেটাকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন না দলের নেতারা। বলছেন, কারাগার থেকে ভোট করার ইতিহাস আছে। আর এতে বরং সহানুভূতি পাওয়া যায়।

জামায়াত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছিল সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট না থাকার পরও। দলটির রাজশাহীর নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে মহানগরে বারবার তারা বিএনপিকে ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু তাদেরকে একটি না একটিতে বিএনপির ছাড় দেয়া উচিত। আর পাঁচ নগরে ভোটের আনুপাতিক হারে রাজশাহীতেই সব চেয়ে শক্তিশালী জামায়াত। এই বিবেচনায় এই নগরে তাদের দাবি জোরাল।

বিএনপির নেতাদের ধারণা, জোটের একক প্রার্থী হলে আবার জয় হবে তাদের। তবে জামায়াতের সিদ্দিক হোসেন প্রার্থী হলে জয় কঠিন হয়ে যেতে পারে।

জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘জামায়াত জোটের শরিক দল। তারা প্রার্থী ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থী এখনও ঘোষণা হয়নি। আমরা চাইব, জামায়াত এই নির্বাচনে প্রার্থী না দিক। কারণ, তারা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের শরিক। সিটি নির্বাচনটাও আন্দোলনের একটা অংশ। আমরা এই আন্দোলনে জিততে চাই।’

বুলবুলের বিকল্প আপাতত নেই

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, সে ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি ঠিকই, তবে কারাবরণের আগে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বর্তমান মেয়র বুলবুলকে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী বুলবুলকেই আমরা প্রার্থী হিসেবে ধরে রেখেছি। তফসিল ঘোষণা হলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

জানতে চাইলে মেয়র বুলবুল বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে প্রার্থীতার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা এখন নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন নিয়েই ব্যস্ত। তবে সিটি নির্বাচনের আগে দলের নির্বাহী কমিটির সভা হবে। সে সভাতেই সিদ্ধান্ত হবে প্রার্থী হবেন কে। আমি সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।’

নিজের প্রার্থিতার নিশ্চয়তার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি বুলবুল। তবে দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত বুলবুল ছাড়া অন্য কোনো নাম শুনছেন না তারা।আগের মেয়রের তুলনায় বুলবুলের উন্নয়ন তৎপরতা কম। নগর উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে না পারার বিষয়টি আছে ভোটারদেও মনেও।

অবশ্য এ জন্য সরকারকে দায়ী করছে বিএনপি। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলা, কারাবরণ ও একাধিকবার বরখাস্ত হয়েছেন বুলবুল। অন্তত ১৯টি মামলার আসামি তিনি।

বুলবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুধু বিএনপি করি বলে নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার অসহযোগিতা করেছে। আমাকে দুই বছরের বেশি সময় থাকতে হয়েছে বহিষ্কার হয়ে। কারাগারে থাকতে হয়েছে কয়েক মাস। কৌশলে আমাকে উন্নয়ন কাজ করা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এখন দায়িত্ব পেয়ে বহু কাজ করেছি। রাজশাহীর মানুষ তা জানে এবং বোঝে। কাজেই প্রার্থী হলে জয় হবেই।’

রাজশাহীতে মেয়র পদে প্রথম ভোট হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সেবার জিতেছিলেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। ২০০২ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনেও জয় পান তিনি। ২০০৮ সালে মিনু কারাগারে থাকায় ভোটে দাঁড়াননি। বিএনপির প্রার্থী করে সে সময়ের যুবদল নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ওই নির্বাচনে জিতেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর উত্তরেরর এই মহানগরে প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। পাঁচ বছরে নগরের চেহারাই অনেকটা পাল্টে যায়। তবে নানা সমীকরণে ২০১৩ সালে লিটনকেই বড় ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বুলবুল।

ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও প্রত্যাহার করে নেন মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। তাকে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) সংসদীয় আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দেয়া হলে তিনি মেয়র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে পরে বিএনপি আর সংসদ নির্বাচন করেনি।

এবার ভোটের আগে রাজশাহী বিএনপিতে বিভেদেও আভাস।

কয়েক মাস আগে মহানগর শাখায় পছন্দের নেতাদের স্থান দেওয়াকে কেন্দ্র মিনু ও মিলনের মধ্যে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। দলীয় কার্যালয়ে ঝুলেছে তালা। তখন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন মিলন। তবে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি। বলেছেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে নেই।মিজানুর রহমান মিনুও সিটি নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। ফলে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে বুলবুল ছাড়া বিএনপির সাম্ভাব্য কারও নাম সামনে আসছে না।

মিনু-বুলবুল ‘দ্ব›দ্বও’ আলোচনায়

মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মিনুর সঙ্গে বুলবুলের বিরোধ এখনও মেটেনি। ফলে মিনুর অনুসারীরা বুলবুলকে প্রার্থী হিসেবে মানতে পারছেন না। তারা চাইছেন, এবার মিনুই নির্বাচন করুক। তবে মিনু আর মেয়র পদে ভোট করতে চান না। তাই বিকল্প হিসেবে মিনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত যুবদলের এক নেতাকে ভোটে দাঁড় করাতে চান তারা।

তবে এমন কথা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মিনু। বলেন, ‘বিএনপির সব নেতা ঐক্যবদ্ধ। আগে কিছুটা বিভেদ থাকতে পারে। তবে এখন দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনকে ঘিরে সবাই এক কাতারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আমরা আমাদের প্রার্থী পাব। তখন তাকে জয়ী করতেই সবাই মাঠে নামব।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের শেষ নির্বাচনে ভোট হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। লিটনকে হারিয়ে জেতা বুলবুল শপথ নেন ওই বছরের ২১ জুলাই। দায়িত্ব পান ১৮ সেপ্টেম্বর। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের বাধ্যবাধকতা আছে। তবে জুলাইয়ে ভোট হবে, সম্প্রতি রাজশাহী এসে জানিয়ে গিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

ঢাকাটাইমস/০১মে/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন