খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের প্রচারের কৌশলে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তৎপর প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ইতোমধ্যেই দলের অঙ্গ-সংগঠন নয়, কিন্তু মতাদর্শগত মিল থাকা বিভিন্ন সংগঠনকেও প্রচারে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। নির্বাচনি প্রচারে বিভিন্ন উপায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে প্রধান প্রতিপক্ষ দল দুটি।
আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে শনিবার (২৮ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিকরা ‘খুলনা সচেতন সাংবাদিক সমাজ’র ব্যানারে সংঘবদ্ধ হয়েছেন। তারা রবিবার থেকে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারে নামবেন।খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মুন্সী মাহাবুব আলম সোহাগ বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। সেখানে তার সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য উপাত্ত দেওয়া হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালেকের গণসংযোগের ছবিসহ সংবাদটি তাৎক্ষণিক সরবরাহ করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে ছবিসহ সংবাদটি সাংবাদিক ও সংবাদপত্র অফিসে মেইল করা হচ্ছে। এজন্য সাংবাদিকদের নিয়ে সেল গঠন করা হয়েছে।’আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ওয়ার্ডপর্যায়ের কমিটি মাঠে প্রচারে তৎপর রয়েছে। তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গ্রুপ ভিত্তিতে নৌকা ও স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে একক ও যৌথ প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং খুলনার উন্নয়নের পক্ষে থাকা সাধারণ মানুষ নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে প্রচার চালাচ্ছেন।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীর প্রচারে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রচারণার একটি সূচি তৈরি করে মিডিয়াসহ এলাকায় এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সূচি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ খালেকের সঙ্গে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন।পিছিয়ে নেই বিএনপিও। দলটির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে ইতোমধ্যে নেমেছেন আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয় রয়েছেন।খুলনা মহানগর বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর মিডিয়া সাব-কমিটির সদস্য সচিব এহতেশামুল হক শাওন বলেন, ‘ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আইটি গ্রুপকে সক্রিয় করা হয়েছে।
তারা ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিমূহূর্তের সংবাদ ছবিসহ আপলোড করছেন। প্রার্থীর বক্তব্য তুলে ধরছেন। মঞ্জুর পক্ষে একটি অ্যাপস ব্যবহার করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে ভোটের সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।প্রচারে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনসহ সাবেক ছাত্রদল নেতারা প্রকাশ্যে মাঠে রয়েছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারাও প্রচারে নেমেছেন। পেশাজীবীরাও প্রকাশ্যে মাঠে রয়েছেন। আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় পর্যায়ের নাগরিক নেতারা ধানের শিষের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। ওয়ার্ডপর্যায়ে থাকা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলো সক্রিয়ভাবে প্রচারে রয়েছে।
তারা মেয়র ও ২ কাউন্সিলর মিলে ৩ জনের জন্যই একসঙ্গে ভোট চাইছেন। যেখানে দল কাউন্সিলর প্রার্থী উন্মুক্ত করেছে, সেখানে ধানের শীষকে প্রাধান্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের প্রচার চলছে। মিডিয়া সাব-কমিটির সদস্য সচিব এহতেশামুল হক শাওন বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে সাংবাদিক নিয়ে প্রকাশ্যে প্রচারের জন্য কোনও টিম গঠন করা হয়নি।’খুলনা সাংবাদিক ইউয়িনের সভাপতি এস এম জাহিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আশরাফ উল হক ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সারোয়ার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘আসুন বদলে দেই খুলনা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে খালেকের পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেউইজে) নেতৃত্বে খুলনার সচেতন সাংবাদিকরা সংঘবদ্ধ হয়েছেন। ‘খুলনা সচেতন সাংবাদিক সমাজ’ এই ব্যানারে খালেকের পক্ষে রবিবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেস ক্লাব চত্বরে তারা সমাবেশ করবেন। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু হবে।