বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বতীকালীন সরকার বলে কিছু নেই : শাহদীন মালিক

বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বতীকালীন সরকার বলে কিছু নেই : শাহদীন মালিক
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বতীকালীন সরকার বলে কিছু নেই। না জেনে, না বুঝে তত্ত্বাবধায় সরকারের ধারণাটাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে ধরে নিয়েছি।একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।

সংবিধানে ১২৬ ধারায় ষ্পষ্ট করেই বলা আছে নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তাকে সবধরনের সহযোগিতা করবে সরকার। সহযোগিতার বিষয়টি সরকারের দায়িত্ব নয়, সাংবিধানিক কর্তব্য। সংবিধান মতে মন্ত্রিসভায় সংসদের নির্বাচিতদের মধ্য থেকে কারা থাকবেন তা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপরেই।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সরকারের আকার নির্ধারণ বা তাদের কাজের পরিধি নির্ধারণের বিষয়টি ছিল প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছের প্রতিফলন। এটা তো সংবিধানের কথা নয়। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন, তিনি কত জন মন্ত্রীকে নিয়োগ দেবেন, সেটা এখতিয়ার করবেন।এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের ওপর।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, এই কথাগুলো সরকার বলছেন, যেহেতু আমরা বলছি নির্বাচন কালীন সরকার, তারা সেটাকে বাইপাস করার জন্য অন্যভাবে বলছেন। তারা বলছেন,‘আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার। আপনাদের সাথে আলোচনার কোনো দরকার নেই।’

আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশেষ সরকারের ব্যবস্থা ছিল, সীমিত ক্ষমতা ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধান থেকে বিলুপ্ত হয় নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা। হয়তো ঐটাই না জেনে, না বুঝে তত্ত্বাবধায় সরকারের ধারণাটাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে ধরে নিয়েছি। বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বতীকালীন সরকার বলে কিছু নেই।

ক্ষমতাসীন দল বলছে, এবারো নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই এ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাঁদলেন, কাঁদালেন দলের নেতা-কর্মীদের সামনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘নির্বাচনের আগেই কাঁদতে চাই, যেন নির্বাচনের পরে সবাই হাসিমুখে থাকতে পারি।’

মেয়র প্রার্থীর এই বক্তৃতায় নেতা-কর্মীরাও তাঁদের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। ছলছল চোখে সমর্থন দিয়েছেন তাঁর প্রতি।

গতকাল শনিবার সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় গণপূর্ত উপবিভাগের কার্যালয়ে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ যৌথ সভার আয়োজন করে।

দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘আমি আপনাদের ভাই, আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। আপনাদের হাতে-পায়ে ধরে বলছি, নৌকার জন্য ভোট চান। রাস্তায় রাস্তায় না ঘুরে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যান। মান-অভিমান ভুলে সবাই একসঙ্গে কাজ করেন।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর-১ আসনের সাংসদ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মদ হোসেন, বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদার, সাধারণ সম্পাদক মুরাদ কবীর, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশরাফ সিকদার প্রমুখ।

সভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। তবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান উপস্থিত ছিলেন না। তিনিও এবার মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

সভায় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন আলাদা। বিএনপি বলেছে, তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমাদের হলুদ কার্ড ও জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে লাল কার্ড দেখাবে। আসলে ওনারাই তো লাল কার্ড খেয়ে মাঠ থেকে বিতাড়িত হয়ে গেছেন।’ তিনি বলেন, গাজীপুর আওয়ামী লীগের দুর্জয় ঘাঁটি। এই দুর্জয় ঘাঁটি আছে, থাকবে।

সভায় আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, ৫৭টি ওয়ার্ডের জন্য ১১৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতি কমিটি ১০ সদস্যের। সভায় মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগকে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। সভায় অনেকে অভিযোগ করেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারকাজের চেয়ে কর্মীদের মধ্যে সেলফি তোলা আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ বেশি।

আতঙ্কের মহানায়ক গাজীপুরের এসপি হারুন: বিএনপি

সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে গাজীপুরে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ তুলে জেলার পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, গতকাল গাজীপুরের মৌচাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এক যৌথ নির্বাচনী সভায় জাহাঙ্গীর কবির নামক এমপি. বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, আহমদ হোসেন এমপি ও গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীরকে বিজয়ী করতে আহ্বান জানান, যা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।

“শুধু তাই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন নির্যাতন চলছে দুই সিটিতে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হচ্ছে এমনকি নেতা-কর্মীদের বিনা কারণে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। নির্বাচনী প্রচারণার সময় জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহসহ ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“পুলিশ প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ‍গাজীপুরের পুলিশ এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্কের মহানায়ক হচ্ছেন এসপি হারুন।”এজন্য পুলিশ সুপার হারুনকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিও জানান রিজভী।
বিএনপির এই নেতা তিনি বলেন, “দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীনদের বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি, সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

“দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কালো টাকার ছড়ানো ও তাদের প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসিতে জমা দিলেও নির্বাচন কমিশন অন্ধের মতো ভূমিকা পালন করছে।”প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘অপপ্রচার সেল’ খোলার অভিযোগ করে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “বিভিন্নভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নানা অপপ্রচারের জন্য সেল খোলা হয়েছে, একটি বিশেষ কক্ষ খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপ-প্রেস সচিবের ফেইসবুক আইডিতে নানা মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।”

‘‘ এই ধরণের হীন অপপ্রচার নিম্নরুচির পরিচায়ক। যারা কুরুচি সম্পন্ন এবং যারা অপরাজনীতি ও অসভ্যতার চর্চা করে তারাই কেবল অসত্য ও নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেয়। তাদের এসব অপপ্রচার জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে কারাবন্দি স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে আবার রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম উপস্থিত ছিলেন।

সবাইকে জানিয়ে দিতে নিউজটি অবশ্যই শেয়ার করুন