বেগম জিয়াকে জেলে রেখেই নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দে জরিয়ে পরেছেন শর্মিলা-জুবাইদা!

দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া জেলে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়ার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান এবং শার্মিলা রহমান সিঁথি বিএনপির নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনের আগে ছাড়া পাবেন কিনা তা নিয়ে দলের ভেতরেই রয়েছে সংশয়। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারেক রহমান লন্ডন নির্বাসনে। এ অবস্থায় দলটির প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে জিয়া পরিবারের কেউই থাকছে না।

এতে আগামী নির্বাচনে দলকে টেনে নেয়ার মতো নেতৃত্ব থাকলেও ভোটের মাঠে সেটা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনায় আছেন জিয়া পরিবারের দুই পুত্রবধূ জোবাইদা ও শর্মিলা রহমান।তাদের মধ্যে যে কেউ দলের হাল ধরতে পারেন- গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন গুঞ্জন চলছে। শিগগিরই এক পুত্রবধূকে নিয়ে প্রচারাভিযানে নামতে পারে বিএনপি।

নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান শহীদ রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা ডা. জোবায়দা রহমান। তিনি পেশায় একজন ডাক্তার। শর্মিলা রহমান সিঁথি সাবেক প্রকৌশলী হাসান রাজার মেয়ে। তার জন্ম মাগুরায় মামাবাড়িতে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান না হলেও বৈবাহিক সূত্রে চলে এসেছেন রাজনীতির আলোচনায়।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, রায়ে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য হলে তার জন্য নির্ধারিত পাঁচটি আসনেই নির্বাচন করবেন এই পুত্রবধূদের যেকোনো একজন।গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার পর থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে জোবাইদা রহমানের আগমনের বিষয়টি দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। গত নির্বাচনের আগেও জোবাইদার রাজনীতিতে যোগ দেয়া নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল। তবে চেয়ারপারসনের অনাগ্রহের কারণেই সেটা থেমে গেছে।

জানা গেছে, রাজনীতির মাঠে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে জিয়া পরিবারের যেকোনো একজন সদস্যকে সামনে নিয়ে আসার পক্ষে দলের অধিকাংশ নেতা। ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কারণে জোবাইদা রহমানকেই প্রথম পছন্দ দলের।তিনি রাজনীতিতে এলে বিএনপির ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে বলে মত জ্যেষ্ঠ নেতাদের। জামিনে মুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পেলেও শারীরিক অবস্থার কারণেই সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়া কঠিন হবে খালেদা জিয়ার। আর সেক্ষেত্রে ডা. জোবাইদার ইতিবাচক ইমেজ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।

তবে শুধু জোবাইদায় নয় শর্মিলা রহমান সিঁথি রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালেও সময়ের প্রয়োজনে হাইকমান্ডের নির্দেশে দলের নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে সিঁথির লন্ডন থেকে দেশে আসা, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কয়েকবার কারাগারে সাক্ষাৎ, খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনাসহ তার নানা কর্মকাণ্ড ওই সম্ভাবনা জোরালো করেছে।

বিএনপির ওই নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে তারেক রহমানই দলের পথনির্দেশক। তাকে সহায়তা করার জন্য যে কেউ কাজ করতে পারেন। তিনি পরিবারের সদস্য হলে আরো ভালো।

এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব) মাহবুবুর রহমান ফেমাসনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামীতে বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবে সেটি এখনি বলা মুশকিল। নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে। খালেদা জিয়া না থাকলে তো নির্বাচনই হবে না। নেতৃত্ব দিয়ে কী হবে?তবে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপিতে কে নেতৃত্বে থাকবেন আর কে থাকবেন না তা নির্ভর করবে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর।

আমরা আইনজীবীদের মাধ্যমে চেয়ারপারসনের সঙ্গে পরামর্শ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা করছি। এখন যদি তাদের পরামর্শে কেউ দায়িত্ব নেন সেটাও দুজনের পরামর্শ মতে হবে। তবে সেটি ভবিষ্যতের কথা। এ মুহূর্তে এ নিয়ে আমরা ভাবছি না।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেমাসনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলেও বিএনপি অংশ নেবে। তখন জিয়া পরিবার থেকে কেউ দলের হাল ধরবে। সেক্ষেত্রে শর্মিলা রহমান থেকে ডা. জোবাইদা এগিয়ে আছেন। আবার এমনও হতে পারে- দুজনকেই দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

amardesh.xyz