যে কারনে শেষ বারের মতন প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘের কঠিন হুশিয়ারি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব শনিবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করে ধন্যবাদ জানান। তারা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী গত মাসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তার দেয়া ৫ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহায়তা কামনা করেন। রোহিঙ্গাদের যেন শিগগিরই ফিরিয়ে নেয়া হয় সেজন্য মিয়ানমারের প্রতি আরও চাপ দিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি গুতেরেসকে বলেন, আমি এ সমস্যার টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে ৫ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। এই ৫ দফা হল-মিয়ানমারকে অবশ্যই রাখাইন রাজ্যে অবিলম্বে এবং চিরতরে নিঃশর্তভাবে সন্ত্রাস এবং জাতিগত নিধন বন্ধ করতে হবে, জাতিসংঘ মহাসচিব মিয়ানমারে অবিলম্বে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠাবে, ধর্ম এবং জাতীয়তা নির্বিশেষে মিয়ানমারকে অবশ্যই সব বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের ভেতরে এ জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বলপূর্বক তাড়িয়ে দেয়া সকল রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশ থেকে টেকসই প্রত্যাবর্তন মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। কফি আনান কমিশন রিপোর্ট পুরোপুরি অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রেস সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবকে ফোন করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আগ পর্যন্ত তার অব্যাহত সহযোগিতা এবং সংযুক্তি কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে।মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের প্রশংসা লাভ করে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদেরও দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এর দুই প্রভাবশালী সদস্য রাশিয়া ও চীন মিয়ানমারকে সমর্থন করার কারণে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষ হয়। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরই এ ইস্যুতে মিয়ানমারের সমালোচনা ও বাংলাদেশকে সমর্থন করে আসছিলেন। জাতিসংঘ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী গুতেরেসকে বলেন, আপনি রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবেই অবহিত আছেন এবং আপনি জানের যে এই সমস্যার মূল মিয়ানমারেই রয়েছে এবং মিয়ানমারকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবকে এই সমস্যার পটভূমি এবং বাস্তবতা সম্পর্কে অবহিত করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগগিরই নিউইয়র্ক সফর করবেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও মিয়ানমার পাঠাচ্ছি।প্রেস সচিব জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনস্রোতের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, নিজের দলের কথা ভাবুন। ক্ষমতার বাইরে গেলে আপনাদের কী হবে তা একবার ভাবুন। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন সেটাও একবার ভাবুন। শুধু শুধু সস্তা বক্তব্য দেয়ার কী দরকার, আসল জায়গায় আসুন।

নিজেদের চরকায় তেল দেন। নিজের পার্টির অবস্থা দেখুন। সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অহংকার, দাম্ভিকতা বাদ দিয়ে দেশকে রক্ষার জন্য, চলমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। আলোচনায় বসে কীভাবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এর ব্যবস্থা করুন।মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, সরকার ছলচাতুরি করে টিকে আছে। তাদের কাছে শক্তি আছে, অস্ত্র আছে, রাষ্ট্রযন্ত্র আছে। এগুলো দিয়ে যারা বিরোধী মতে কথা বলছে তাদের দমন করছে।তিনি বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র নিয়ে আপনাদের ঘুম নেই। আমরা কাকে চেয়ারপারসন করলাম, কি করলাম না; তা নিয়ে আপনাদের মাথাব্যথা। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হয়েছেন। গঠনতন্ত্রে এই বিষয়টি আছে যে, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। এটা নিয়ে আপনাদের উদ্বেগ সন্দেহজনক।

সরকার একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই, এদেশের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে গণতেন্ত্রর জন্য লড়াই করছে। এতো সহজ মনে করবেন না যে পার পেয়ে যাবেন, দেশের স্বাধানীতা-স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করতে পারবেন। আমাদের মুখ বন্ধ করতে পারবেন। কিন্তু ষোল কোটি মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, সরকার পূর্বপরিকল্পিতভাবে নীলনকশা চরিতার্থ করার জন্য আদালতের ওপর ভর করে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে নিয়েছে। পুরো দেশই এখন কারাগার। থানা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে অসংখ্য গণতন্ত্রকামী মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু গতকালই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে প্রায় ৭’শ। সরকার নিম্ম আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, যে রায়ের কপি পাঁচ দিনে পাওয়ার কথা সেটি ১২ দিনে পাওয়া গেলো। গণতন্ত্রের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।

এনপিপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, জাগপার রেহেনা আক্তার প্রধান, সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।

এদিকে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল বলেন, তার মুক্তির জন্য আমাদের সবাইকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে স্বোচ্ছার হতে হবে প্রতিবাদ করতে হবে এবং আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই তাকে কারাগার থেকে বের করে আনতে হবে।

আজ ১২ দিন হতে চলেছে বেগম খালেদা জিয়া এখন সেই নাজিম উদ্দীন রোডের পরিত্যক্ত অন্ধকার কারাঘারের প্রকোষ্ঠে বন্দি হয়ে আছেন। আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বাধীনতা স্বার্ভমৌত্বকে রক্ষার জন্য যিনি আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন সেই নেত্রীকে আজ কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

ইত্তেফাক