কী হবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে?

এই মুহূর্তে দেশের মানুষের মধ্যে যে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা ও চাপা আতঙ্কও বিরাজ করছে, নিঃসন্দেহে সেটি আগামী জাতীয় নির্বাচন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যা হয়েছে, তা আর প্রত্যাশা করে না বাংলাদেশের জনগণ। সুষ্ঠুভাবে ভোট নিয়ে নিজের পছন্দের সরকার চায় তারা।গত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায়, তা হয়ে দাঁড়ায় একতরফা একটি নির্বাচন। এমনকি সংসদের বেশিরভাগ সদস্যই বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। এর সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেশে। এবারের নির্বাচনে অবশ্য বিএনপি অংশ নেবে বলেই এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক নির্বাচন বিশ্লেষক শামসুল আরেফিন মনে করেন, এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে। তার ভাষায়, ‘এ বছর আমরা ১৭০ আসনে জিতে সরকার গঠন করবো।’তবে একটু ভিন্ন সুর অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কণ্ঠে। আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও তার পর্যবেক্ষণ ভিন্ন। আনিসুজ্জামানের ভাষায়, ‘আওয়ামী লীগ হয়তো জিতবে, তবে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে।’

নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও অবাধ হয় এবং আমরা যদি অংশ নিই, বড় ব্যবধানে জিতবো।’ রিজভীর কথার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি হচ্ছে ‘যদি’।নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দলটির দুটি দাবি: ১. শর্তহীনভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে ও তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। ২. নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।

আপাতদৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ এসব দাবি না মানার ব্যাপারে অনঢ়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ায় আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। আইন নিজের গতিতে চলবে, আমাদের কিছু করার নেই। এছাড়া সাংবিধানিক ভিত্তি না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও সম্ভব নয়।’বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু তা না এলে আমরা কী করতে পারি। আমরা কাউকে বাধ্য করতে পারি না। এক্ষেত্রে নভেম্বরের নির্বাচনে আমরা ও অন্য দল অংশ নেবে।’

এদিকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করায় ভোটে অংশ নিতে পারবে না বিএনপির প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী। এ ব্যাপারে দলটির মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই আন্ডারগ্রাউন্ডে। এই মুহূর্তে বলা কঠিন কতজন প্রার্থী দল থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়বে, আর কতজন বিএনপির টিকিটে লড়বে।’তার ভাষায়, ‘শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে ও ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।’

জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের জোট কোনো আদর্শগত জোট নয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার একই লক্ষ্যে একটি একটি কৌশলগত জোট।’বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগেরও সমস্যার শেষ নেই। প্রথমত, প্রায় এক দশক ধরে তারা দেশ পরিচালনা করছে।

এই সময়ে দেশের জনগণের মধ্যে চলমান শাসনবিরোধী মনোভাব মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্ধত মানসিকতা তৈরি হয়েছে। তৃতীয়ত, দলটির নেতারা খুব বাজেভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সর্বোপরি, দেশে একদলীয় শাসন তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদের ভাষায়, ‘এটি একটি একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার, যার শেষ হতেই হবে।’

বিএনপির সমালোচনার জবাব আওয়ামী লীগ দিচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে। তবে শেষ পর্যন্ত সামনের নির্বাচনে কী হবে- বলা কঠিন। নির্বাচনে লড়াইটা হবে কর্তৃত্ববাদী শাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে। চূড়ান্ত ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।

ব্রেকিংনিউজ