স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে শেখ মুজিব কিভাবে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন ?

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে এদিন স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেছিলেন শেখ মুজিব। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের পাসপোর্ট গ্রহন করায় আইনগতভাবে শেখ মুজিব ছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এরপর পাকিস্তানী দখলদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয়মাস সশস্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন শত্রুমুক্ত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে নয় মাস পর শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে ফেরেন পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে। যে কোনো যুক্তিতেই হোক, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক শেখ মুজিব সজ্ঞানে পাকিস্তানী পাসপোর্ট গ্রহণ করা মানে আইনগত দৃষ্টিতে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা। শেখ মুজিব সম্পূর্ণ সজ্ঞানে ছবি তুলে পাকিস্তানী পাসপোর্ট গ্রহণ করেছিলেন যার সাক্ষী ডক্টর কামাল হোসেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একই ফ্লাইটে ঢাকা ফিরেছিলেন ডক্টর হোসেন।

২০১০ সালের ২৬ আগস্ট “সাপ্তাহিক“ নামক একটি ম্যাগাজিনে ডক্টর কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাতকারে তিনি তার নিজের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের নানা ঘটনার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের অগে ও পরে এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষে কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন সেই বর্ণনা দিয়েছেন।

ডক্টর কামাল হোসেন সাক্ষাতকারে বলেন, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী পাকিস্তানী কতৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমান এবং ডক্টর কামাল হোসেনকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার কথা জানায়। জানানো হয়, তারা শিগগিরই বাংলাদেশে ফিরছেন। তবে তারা (শেখ মুজিব-ড.কামাল) বাংলাদেশে কোন এয়ার রুটে ফিরবেন এ জন্য তাদেরকে দুটি অপশন দেয়া হয়। ডক্টর কামাল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করে ইরানের পরিবর্তে লন্ডন রুট ধরে বাংলাদেশে ফেরার পক্ষে মত দেন শেখ মুজিব। এরপর বাংলাদেশে ফিরে আসার প্রস্ততি শুরু হয়।

ডক্টর কামাল হোসেন জানান, পাকিস্তানী কতৃপক্ষ তাদের কারাগারে দর্জি পাঠায়। শীতকাল থাকায় গরম জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করে। পাকিস্তানী পাসপোর্ট করার জন্য শেখ মুজিবের ছবি তোলা হয়। এরপর দেয়া হয় পাকিস্তানী পাসপোর্ট।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ঠান্ডা মাথায় ছবি তুলে শেখ মুজিব পাকিস্তানী পাসপোর্ট গ্রহণ করলেন কিন্তু একবার কি তার মনে প্রশ্ন জাগেনি কেন তিনিঁ পাকিস্তানী পাসপোর্ট গ্রহণ করছেন? শেখ মুজিব সাধারণ কোনো অভিবাসী শ্রমিক ছিলেন না যে পাকিস্তানী পাসপোর্ট করা না করার ব্যাপারে তার কোনো প্রশ্ন করার অধিকার ছিলোনা। নেতা হিসেবে কেন তিনি দূরদর্শিতার প্রমান দিলেননা এখনো এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

পাকিস্তান থেকে কোন এয়ার রুটে শেখ মুজিব দেশে ফিরবেন সেই অপশন নিয়ে শেখ মুজিব আলোচনা করেছেন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে পকিস্তানী পাসপোর্ট গ্রহন করা না করার ব্যাপারে কেন কোনো প্রশ্ন করলেন না?

সেই সময় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিলোনা এই যুক্তি মানলেও সেক্ষেত্রে শেখ মুজিবের জন্য পাকিস্তানী পাসপোর্টের পরিবর্তে জাতিসংঘ ট্রাভেল ডকুমেন্ট গ্রহণের সুযোগ ছিল। শেখ মুজিব সেই সুযোগ গ্রহণ করেননি। এখানেই শেষ নয়, পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে শেখ মুজিব প্রথমে লন্ডনে আসেন এবং সেখানে একদিন থাকেন তারপর আসেন ভারতে। তারপর আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। লাখো মানুষের রক্ত আর অসংখ্য মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেসে ফিরছেন শেখ মুজিব অথচ এই দীর্ঘ সময়েও তিনি পাকিস্তানের পাসপোর্ট পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেননি। তাই পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসে সরাসরি রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহন আইনের দৃষ্টিতে সঠিক ছিলো কিনা এ প্রশ্নটির আইনগত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

banglamail71.info