যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ-দূতাবাসেই তারেকের এজেন্ট রয়েছে বলে মনে করছে সরকার। বেশ কিছু ঘটনায় দূতাবাস যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি তারেক জিয়াকে লন্ডনে রাখার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরকম অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহাকে গতকাল প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তালহার নেতৃত্বে দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা তারেকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে অনাগ্রহ দেখায়। খন্দকার এম তালহা তারেক জিয়া স্ত্রী জোবায়দা রহমানের আত্মীয়। তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনেরও আত্মীয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বাংলাদেশে দূতাবাসে হামলা করে বিএনপি। সে সময় তালহা ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ছিলেন। কিন্তু ঐ সময় তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো উদ্যোগে নেননি।
এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণেও তালহা গড়িমসি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে হামলার ঘটনায় ব্রিটিশ সরকারের কাছে যে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল, তাতেও তারেক জিয়ার নাম সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ হয়নি।
এ ব্যাপারে খন্দকার এম তালহার অনীহা ছিল বলে জানা গেছে। এছাড়াও তারেক জিয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা যে বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা যুক্তরাজ্যে করছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে দূতাবাস। এই ব্যর্থতার জন্য হাই কমিশনার সহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
তালহা দূতাবাসের আরও অন্তত ৩ জন পদস্থ কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
গাজীপুরের আজমতউল্লাহ খানকে সতর্ক করে ওবায়দুল কাদেরের ফোন
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের জয় নিশ্চিত চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমতউল্লাহ খানকে মোবাইল ফোনে সতর্ক করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হলে শেখ হাসিনার সরকারের অর্জন ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বড় অর্জনের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা থেকে তিনি এ সব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, ‘দলের সম্পাদকমণ্ডলী মনে করে, গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গেলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলবেন। তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে এর প্রভাব পড়তে আগামী জাতীয় নির্বাচনে। এ কারণে দলীয় প্রার্থীর জয়ের লক্ষ্যে যার যার অবস্থান থেকে স্থানীয় নেতাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সভায় বলা হয়েছে গতবার গাজীপুর সিটি নির্বাচন দেখভালের জন্যে উত্তরায় যে নির্বাচনি কার্যালয় করা হয়েছিল, সেখানেই ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার গাজীপুর ও খলনা সিটি নির্বাচনে বাইরে থেকে কাউকে না পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। ওই দুই সিটির যেসব নেতা ঢাকায় থাকেন, কেবল তাদেরই নির্বাচনি প্রচারণায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায়।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা জানান, গাজীপুর থেকে অভিযোগ এসেছে, সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমতউল্লাহ খান দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে আজমতউল্লাহ খানকে ফোন করে সতর্ক করে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি আজমতউল্লাহ খানকে তার ভূমিকার বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানাবেন বলেও সতর্ক করে দেন। মোবাইল ফোনে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হলে শেখ হাসিনার সরকারের অর্জন ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বড় অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
এদিকে, গাজীপুর নির্বাচনের বিষয়ে ২৯ এপ্রিল রবিবার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গাজীপুর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কিছু ভুল রয়েছে বলেও বৈঠকে বলেন ওবায়দুল কাদের। তবে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে ত্রুটিগুলো সংশোধন করা সম্ভব বলেও মনে করেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
বৈঠকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘দলের একেক জন নেতা একেক জনের সমালোচনা করেন।’ এই ধরনের সমালোচনা বন্ধ করার প্রস্তাব তোলেন তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে অন্যরা কথা না বলায় আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি বলেও জানা গেছে।
সভায় ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ভারত সফর ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাকে অভিনন্দন জানানোর প্রস্তাব করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রস্তাবটি উত্থাপন করলে অন্য সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তা সমর্থন করেন।
ওবায়দুল কাদেরের সতর্কতামূলক মোবাইল ফোনের কথা স্বীকার করে আজমতউল্লাহ খান বলেন, ‘দলে কোনও কোন্দল নেই।’