বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর ওভার ট্রাম করতে গিয়ে এবার শেখ হাসিনানিজেই ধরাশায়ী । শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরুর অনেক আগে থেকেই তারেক রহমান সুনির্দিষ্টভাবে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। জনপ্রশাসনে মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি সরকার গঠন করলে কোটা পদ্ধতি পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যা এবং শিক্ষিতের হার বিবেচনা করে সুচিন্তিতভাবেই তিনি এই ঘোষণা দিয়েছিলেন।
দেখা যায়, কোটা সংস্কারে তারেক রহমানের এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় সারাদেশের ছাত্রসমাজ এটিকে গ্রহণ করেছে। কোটা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য ছাত্রসমাজ সারাদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছে। তারেক রহমান কোটা পদ্ধতি পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়ায় আন্দোলনে ভীত হয়ে শেখ হাসিনা ‘ওভার ট্রাম’ করতে গিয়েছিলেন। ‘ওভার ট্রাম’ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতিই বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ‘এখানেই ভুল করেছেন শেখ হাসিনা কারণ তার এই ঘোষণা সংবিধানের বিধিবদ্ধ বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের ২৮(৪) এবং ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল। দেশের পিছিয়ে পড়া কোনও জনগোষ্ঠী, কোনও এলাকার জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায় যদি সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের সুযোগ দিতে সংবিধান সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছে। এই ক্ষমতা বলেই চালু হয়েছিল কোটা পদ্ধতি । সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা আছে, ‘নাগরিকদের যে কোনও অনগ্রসর অংশ যেন সরকারি চাকরিতে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাদের কল্যাণে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হবে।’
সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা এবং প্রশাসনে দেশের সকল অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা মাথায় রেখেই বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল না করে বর্তমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের কথা বলেছিলেন। কিন্ত তারেক রহমানকে টেক্কা দিতে গিয়ে পুরো কোটা পদ্ধতি বাতিলের হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে ফেলেছেন। কারণ তার এই ঘোষণা বাস্তবায়নের সহজ পথ নেই ফলে আবারো রাজপথে নেমে আসতে পারে সারাদেশের ছাত্রসমাজ। ফলে রাষ্ট্র ও সংবিধান নিয়ে শেখ হাসিনার এই ছেলেখেলায় টানাপোড়েন চলছে সরকারে। কোটা পদ্ধতি নিয়ে শেখ হাসিনা আপাতত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরলেও এখন তারা স্বস্তিতে নেই।
কোটা নিয়ে শেখ হাসিনা টালবাহানা শুরু করলে ছাত্রসমাজের এবারের আন্দোলন ঠেকানোর উপায় নেই বর্তমান এই ব্যাংক ডাকাত সরকারের নেই এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এই সরকারের আশ্বাসে জনগণের বিশ্বাস নেই বলেই ওবায়দুল কাদেরের কথায়ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে যায়নি। বরং সরকারের বড়ো একটি অংশ মনে করেন, শেখ হাসিনার আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে র্যাব-পুলিশ আদৌ কোনো কাজে আসবেনা।
কারণ এবারও র্যাব পুলিশ দিয়ে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের রগকাটাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে এমনকি শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ গালি দিয়েও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করা যায়নি। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যকে ষড়যন্ত্রের অংশ আখ্যা দিয়ে পরিস্থিতি থেকে ফায়দা নিতে চাইলেও বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। সারাদেশের জনগণ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দেখেছে, বিএনপি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে ছিল এবং তারেক রহমানের বক্তব্য রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থের পক্ষে। কোটা পদ্ধতির সংস্কারের ব্যাপারে তারেক রহমানের বক্তব্য শেখ হাসিনা ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে জনগণকে গেলানোর চেষ্টা করলেও সারাদেশের শিক্ষার্থী এবং দেশের অধিকাংশ জনগণই মনে করে তারেক রহমান সঠিক সময়ে সঠিক কাজটিই করেছেন।
dailybdtimes.com