শেখ হাসিনা অত্যন্ত আপত্তিকর, উস্কানিমূলক ও অপরাধযোগ্য বক্তব্য রাখেন।(ভিডিও সহ)

“যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালো বিএনপি”

‘তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে’-অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যে বিএনপির সাংবাদিক সম্মেলন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য নিম্নে দেওয়া হলো :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলাদেশ ​​​​​​​​​​জিন্দাবাদ

প্রেস কনফারেন্স
রোববার ২২ এপ্রিল ২০১৮

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আস্সালামুআলাইকুম।

প্রথমেই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংক্ষিপ্ততম সময়ে এ প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত হওয়ার জন্য।

আপনারা ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছেন, বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেআইনি হুমকি-ধামকি প্রদানের কারণে আবারো খবরের শিরোনাম হয়েছেন। গত শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি অত্যন্ত আপত্তিকর, উস্কানিমূলক ও অপরাধযোগ্য বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্য দেশীবিদেশী সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে এবং আপনারা অনেকে নিজ কানেও শুনেছেন যা কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আওয়ামী ঘরানার অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম তাদের ২২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখের সংখ্যায় লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসে সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে লিখেছে, ‘হামলা মোকাবেলায় হাই-কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। আমি জানি না আমাদের হাই-কমিশনে তখন কারা বসে ছিলো এবং তারা সেখানে কিছুই করতে পারলো না কেনো?’

ভিডিও টি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম আরও লিখেছে, প্রবাসী বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে, তারা কোথাও চলাফেরা করে না? তাদের দেখেন না? যে হাত দিয়ে জাতির পিতার ছবি ভেঙেছে, তাদের যা করার তা করতে হবে। তাদের চেহারা চেনেন না?’

ব্যারিস্টার আবু সায়েম।

 

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।

অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর এহেন জবরদস্তিমূলক ও নিন্দনীয় বক্তব্যে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশ্ববাসী জানে, গত নয় বছরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত করেছেন। সেখানে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই, গণতন্ত্র চাপা পড়ে আছে কফিনের তলে, নেই মানুষের বেঁচে থাকার ন্যুনতম নিশ্চয়তা। যে বা যারা শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়, তাদের ওপরেই নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। গুম, খুন, ভয়াবহ নির্যাতন আর মিথ্যা মামলার শিকার আজ দেশের অগণিত মানুষ। কেউ এখন আর ভয়ে মুখ খুলতে পারে না; জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ করে শেখ হাসিনা দেশ চালাচ্ছেন তার তুঘলকি খেয়ালখুশিতে। বাংলাদশে আজ চলছে জঙ্গলের শাসন।

কেবল তা-ই নয়, হাসিনার ঔদ্ধত্যের সীমা আজ দেশের মাটি ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রসারিত হয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পুণ্যভূমি যুক্তরাজ্যে বসে শেখ হাসিনা শান্তিপ্রিয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন। তাদেরকে আঘাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের ওপর আক্রমণের উস্কানি ছড়ানো হচ্ছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছেন মারমুখী হওয়ার জন্য।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।

উপরোক্ত বক্তব্যে শেখ হাসিনা কার্যত নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় কর্মী-সমর্থক ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার জন্য। তিনি যুক্তরাজ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মধ্যমে শান্তি ভঙ্গের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করা শেখ হাসিনা এবার সন্ত্রাসের মদদ দিচ্ছেন খোদ যুক্তরাজ্যেও।

আমরা মনে করি, এতে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ উভয় দেশেরই আইন ভঙ্গ করেছেন তিনি। এখন যদি অত্যুৎসাহী কোন আওয়ামী লীগ সমর্থক, কর্মী বা নেতা কোন সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীর ওপর হামলা চালায় তাহলে তার দায়দায়িত্বতো শেখ হাসিনার ওপরেই বর্তাবে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।

আপনারা জানেন, লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঘটনা তদন্ত করছে ব্রিটিশ পুলিশ এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়াতেই এর নিষ্পত্তি হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা কর্তৃপক্ষের প্রতি আশাতীত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং কোনপ্রকার উস্কানিতে কান দিচ্ছে না। কিন্তু শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য প্রশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে তার স্বভাবসুলভ নিয়মে দলীয় নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মচারীদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দিতে আদেশ দিয়েছেন। এতে যুক্তরাজ্যে মারাত্মক অপরাধ সংঘটন ও শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা করছি আমরা। আমরা ভুলে যাইনি, শেখ হাসিনা অতীতেও ‘একটার বদলে দশটা লাশ’ ফেলে দেওয়ার এবং ‘লগি-বইঠা’ দিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যেহেতু শেখ হাসিনার বক্তব্য ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার সমতুল্য, সেহেতু তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। অন্যদিকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকেও বিষয়টি তদন্তের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

আমরা অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনভিপ্রেত, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সাথে ভবিষ্যতে তার যুক্তরাজ্য প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি এবং তার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আইনানুযায়ী যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আমরা যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।

আরও একটি বিষয় আপনাদের নজরে না এনে পারছি না। অবৈধ শেখ হাসিনার অবৈধ এক মন্ত্রী, পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, শারিয়ার আলম একই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাইকমিশনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন।’

আমরা আগেও বলেছি, শেখ হাসিনার একদলীয় সংসদ ও মন্ত্রীসভায় একের পর এক ভাঁড়ের দেখা মিলছে। শারিয়ার আলমও সে তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। দেশনায়ক তারেক রহমান কোথায়, কবে, কী পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বিসর্জন দিয়েছেন, বিনিময়ে কোন দেশের নাগরিকত্ব তিনি গ্রহণ করেছেন, সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রদান না করে একটি বিভ্রান্তিকর ও দুর্গন্ধযুক্ত বক্তব্য ছেড়ে দিয়েই আলম সাহেব দায়িত্ব শেষ করেছেন!

আমরা এ ইস্যুতে বেশী কিছু বলবো না, কেবল শাহরিয়ার আলমকে অনুরোধ করবো নগরিকত্বের ওপর দেশীবিদেশী শিশুতোষ কিছু আইন-কানুন সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য। বিশেষ করে তার জানা দরকার, আদৌ কোন পরিস্থিতি আছে কিনা যখন কোন ব্যক্তির জন্য বাংলাদেশী নাগরিকত্ব বর্জন করাটা জরুরী হয়ে পড়ে। জোকার সাজতে হলে সার্কাসে যেতে হয়, আলম সাহেবের মতো মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে থেকে নয়।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষের আশাভরসার আশ্রয়স্থল, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান ও তাঁর পরিবাবের কোন সদস্য কখনো বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেননি। তাঁরা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী – ছিলেন, আছেন ও থাকবেন আজীবন। জোকার শাহরিয়ার হয়তো শেখ হাসিনাকে খুশি করতে গিয়ে শেখ মুজিবের বহু উত্তরাধিকারীর মতো তারেক রহমানকেও ভিনদেশী বানানোর হাস্যকর চেষ্টা করেছেন। একাজের জন্য শেখ হাসিনা তাকে পুরস্কৃত করলেও প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তিনি পেয়েছেন একরাশ ঘৃণা।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ

পরিশেষে আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশে বসবাসরত আমাদের পরিবারের সকল সদস্যের নিরাপত্তা দাবি করছি।

আজকের প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।

আমরা আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

ভিডিও টি দেখতে এখানে ক্লিক করুন