তারেকের পর এবার হাসিনার টার্গেট জোবাইদা, দুর্নীতির মামলায় জোবাইদাও !

স্বামী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ও হবে শিগগির। আরও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শাশুড়ি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের তারিখ ধার্য হয়েছে। মা ইকবাল মান্দ বানুও মামলার আসামি। জোবাইদা রহমান নিজেও দুর্নীতির একটি মামলার আসামি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে রেখেছেন। ফৌজদারি বিবিধ মামলার রায়ে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জোবাইদা রহমানকে চার্জশিট আমলে গ্রহণের ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পত্নী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তিনি দেশে ফিরলে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের ওই মামলায় জামিনে না থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তার মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর তার গ্রেপ্তার নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মোহাম্মাদ জহিরুল হুদা তারেক রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে ডা. জোবাইদা রহমানকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলায় তারেক ও জোবাইদার সঙ্গে জোবাইদার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়। যদিও হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর তার অংশ বাতিল করেন।ফলে তিনি এখন আর এ মামলার আসামি নন। মামলার পর ২০০৭ সালের ১ অক্টোবর ওই মামলার বিরুদ্ধে তারেক রহমান হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন। ওই রিট পিটিশনের আলোকে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।

মামলায় ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইমলাম ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।

চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর জোবাইদা রহমানের পক্ষে ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল ফৌজদারি বিবিধ মামলা করলে হাইকোর্ট রুল ও স্থগিতাদেশ দেন। ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই রুল চূড়ান্ত শুনানিতে খারিজ করে দেন।

তবে হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তির রায়ে মামলাটির চার্জশিট আমলে গ্রহণের ৮ সপ্তাহের মধ্যে জোবাইদা রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল হাইকোর্টের ওই রায় নিম্নআদালতে পৌঁছলেও তারেক রহমানের পক্ষে স্থগিতাদেশ থাকায় চার্জশিট এখনো আমলে নিতে পারেননি আদালত।জোবাইদা রহমান দেশে ফিরলে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের সুযোগ আছে কিনা এ সম্পর্কে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এই সময়ে জোবাইদা রহমানকে গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, তারেক রহমানের সম্পদের দাখিলকৃত তথ্যবিবরণী অনুসন্ধান করে দুদক তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নামে ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর দেখতে পায়।

এ এফডিআরের টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করা হয়েছে অভিযোগে তারেক রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীকেও মামলায় আসামি করে দুদক। কিন্তু ২০০৫ সালে জোবাইদা রহমান তার পরিবার থেকে ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর উপঢৌকন হিসেবে পান।

মামলা হওয়ার পূর্ববর্তী তিন বছর এই টাকা তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন। ফলে এটি অবৈধভাবে উপার্জিত নয়, যা আমরা বিচারিক আদালতে প্রমাণ করব।এ সম্পর্কে দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করে রেখেছেন। তারেক রহমানে রিটের কারণে মামলাটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় চার্জশিট এখনো আমলে নেওয়া হয়নি।ফৌজদারি বিবিধ মামলার রায়ে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জোবাইদা রহমানকে চার্জশিট আমলে গ্রহণের ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে মামলার নথি সূত্রে দেখা যায়, ফৌজদারি বিবিধ মামলার ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জোবাইদা রহমানকে চার্জশিট আমলে গ্রহণের ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তিনি আইনগতভাবে মামলাটি মোকাবিলা করতে পারেন।

যেহেতু তারেক রহমানের রিটের কারণে হাইকোর্ট মামলাটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছেন, তাই চার্জশিট এখনো গ্রহণ করতে পারেনি সিএমএম আদালত।ওই কারণে চার্জশিট আমলে নেওয়ার জন্য বিচারিক আদালতে নথি এখনো পাঠানো সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, তারেক রহমানের রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নথি বিচারিক আদালতে পাঠানো সম্ভব হবে না। ওই কারণে জোবাইদা রহমান দেশে ফিরলে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই।

২০০৭ সালের ২৯ মে সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের জন্য তারেক রহমানকে কারাগারে নোটিশ দেয় দুদক। ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের তথ্য দাখিল করেন তারেক রহমান।

ওই তথ্য বিবরণী অনুসন্ধান করে তারেকের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ পায় দুদক। ওই অভিযোগে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর মামলাটি করা হয়।

মামলায় তারেক রহমানের নামে গাজীপুরে ১৯৯৩ সালে ৬৬ শতক এবং তার মেয়ের নামে ২০০৫ সালে বসুন্ধরায় ১৬ শতকের প্লট কেনা, জোবাইদা রহমানের নামে ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়ার অভিযোগ করা হয়।

উল্লেখ্য, নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। তার দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।২০০৮ সালে তারেক রহমান কারামুক্তির পর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে জোবাইদাকে বরখাস্ত করে সরকার।

সবাইকে জানিয়ে দিতে নিউজটি শেয়ার করুন

সূত্রঃ দৈনিক নতুন সময়