যে শর্তে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে ছাড় দিল জামায়াত

আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হয়েছে। এতে জামায়াতের মেয়র প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।এর বিনিময়ে গাজীপুরে ছয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন চেয়েছে জামায়াত। বিএনপির ছাড় দেওয়ার আশ্বাসে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী নগর আমির অধ্যক্ষ এস এম সানাউল্লাহ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।

রবিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন। এর আগে শনিবার রাতে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে বিএনপি। এই বৈঠকে জামায়াতকে ডাকা হলেও তারা আসেনি। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা টেলিফোনে যোগাযোগ করেন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে। প্রার্থী-জটিলতা দূর করতে কথা বলেন তারা।মেয়র পদে জোটসঙ্গীকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তে একমত হয় জামায়াত। এর মধ্যদিয়ে গাজীপুরে দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানের অবসান হতে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, মেয়র প্রার্থী নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে সমস্যার সমাধান হয়েছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জোটের একক প্রার্থী থাকবেন হাসান উদ্দিন সরকার।

এ বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গাজীপুরে মেয়র পদ নিয়ে আর সমস্যা নেই। সেখানে জোটের একক প্রার্থী থাকবেন। কিন্তু কাউন্সিলর পদে আমাদের কিছু দাবি আছে। আমাদের দাবি পুরোটা এখনও মানা হয়নি।তিনি আরো বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনে আমরা জামায়াতের প্রাথীর পক্ষে বিএনপির সমর্থন চেয়েছি। সেখানে আমাদের মেয়র প্রার্থী শক্তিশালী। এটা নিয়ে এখনও সমঝোতা হয়নি। এতে আমরা অনড় আছি। খুলনায় আমাদের পাঁচজন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা থাকবেন। বিএনপির সাথে কথা হয়েছে।

জামায়াতের নেতারা জানান, ইতোমধ্যে দেশের সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে জামায়াত। এর মধ্যে ৩৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ১২৬টিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় গাজীপুর মেয়র ও কাউন্সিলর ও খুলনায় শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন।

প্রসঙ্গত, আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। গাজীপুরে জামায়াতের নগর আমীর অধ্যক্ষ সানাউল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। এছাড়া ৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। খুলনায় জামায়াত মেয়র প্রার্থী না দিলেও ৫টি ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। জামায়াত গাজীপুরে তাদের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিল, যা ছিলো বিএনপির জন্য মাথাব্যথার কারণ। যদিও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল- সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোট একক প্রার্থী মনোনয়ন দিবে এবং তাদের পক্ষে জামায়াতসহ সকল দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। কিন্তু জামায়াত কথা রাখেনি।

খুলনায় জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় তারা মেয়র প্রার্থী দেয়নি। তবে ৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। এগুলো হলো-খুলনা ৩১ নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন হেলাল, ১৯ নং ওয়ার্ডে এডভোকেট মনিরুল ইসলাম পান্না, ১২ নং ওয়ার্ডে মাস্টার শফিকুল আলম, ৩ নং ওয়ার্ডে ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ১ নং ওয়ার্ডে আজিজুর রহমান স্বপন।

এই ৫টি ওয়ার্ডে জামায়াত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে।

গাজীপুরে মেয়র ছাড়াও ৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। ওয়ার্ডগুলো হলো-২৮, ৩৩, ৩৭, ৪৯, ৫১ এবং ৫৪। এই ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির প্রার্থীও রয়েছে।

এদিকে ইসির তফসিল অনুযায়ী খুলনা ও গাজীপুরে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেয়ার শেষ সময় ছিলো ১২এপ্রিল, তা যাচাই-বাছাই হয় ১৫-১৬এপ্রিল এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় হলো ২৩ এপ্রিল। ২৪ এপ্রিল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। ১৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আরটিএনএন