তারেক রহমানকে নিয়ে আবারো মুখ খুললেন আন্দালিব রহমান পার্থ!

বাংলাদেশে সংবিধান নিয়ে তো এখন কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করে না, কারণ সংবিধানতো এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থ।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্যতো আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ। অথচ আওয়ামী লীগই তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে এতো কথা পেপার-পত্রিকায় লিখলো। কারণ ওনারা মনে করেছেন, তারেক রহমানের এই বক্তব্য আসার পরে বিরাট কিছু একটা হয়ে যাবে।

সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, কিন্তু এখানে কিছুই নাই কারণ তারেক রহমান জনগণের মানুষ, তারেক রহমান জনগণের রাজনীতি করে, জাতীয়তাবাদী শক্তির কেন্দ্রবিন্দু।

তারেক রহমান জনগণের যেকোনো খারাপ সময় তাদের পাশে দাঁড়াবে, বিএনপি চেয়ারপারসন দাঁড়াবে বা আমরা দাঁড়াবো, যেন এটাকে পলিটিসাইস না করা হয়। কারণ আমরা যদি বেশি কথা বলতাম, তাহলে এটাকে পলিটিসাইস করা হতো। আমি মনে করি এটা রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা যে আজকে ৪০ বছর পরও এই বাচ্চা ছেলেগুলো আন্দোলন করছে, তারা কী চাচ্ছে?

এরাতো টাকা চাচ্ছে না, পয়সা চাচ্ছে না বা ঘুষ চাচ্ছে না তারা শুধু চাচ্ছে চাকরি। আর সবচেয়ে বড় ডেভেলপমেন্টটা কিন্তু হচ্ছে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট। আপনি রাস্তা করেন, ঘাট করেন এটা কিন্তু ডেভেলপমেন্ট না।

পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগতো আমাদের প্রত্যেক কথা নিয়ে কিছু না কিছু বলবেই। কিন্তু আমি মনে করি জনগণের যেকোনো দাবির সাথেই আমরা থাকবো। তাই তারেক রহমান সাহেব যে কাজটি করেছেন সেটি জনগণের কাজ করেছেন। আর এখন কিন্তু মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলনতো হতে হবে, গণতান্ত্রিত জিনিসটা হতে হবে এবং মানুষের ভোটের ব্যাপরটাও থাকতে হবে। তারেক রহমান সাহেব বা আমাদের নেত্রীকে দুর্নীতিবাজ বানানোর যে প্রক্রিয়া বাংলাদেশের মানুষ সেটা একদমই গ্রহণ করছে না এবং গ্রহণ করবেও না।

বাংলাদেশের চেতনা ঠাকুর ষাড় জাফর ইকবাল কিছু সুনির্দিষ্ট ধারণা মানুষের মন-মগজে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। এইটা কি তার সফলতা? না কি অর্জন? আমি এই ঘটনাকে সফলতা বলবো না। বরং বলবো তার অর্জন। কারণ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার জন্য যে ইনস্টিটিউশনাল সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, সে চাহিদার কয়েকগুণ সরবরাহ জাফর ইকবাল নিরবিচ্ছিন্নভাবে পেয়ে এসেছে। তার কৃতিত্ব হলো আবেগের ব্যবহার। সুতরাং তার অর্জন হলো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা।

একটা ন্যারেটিভ হলো স্টোরি অফ স্টোরিজ। গ্রান্ড ন্যারেটিভের বড় ছাতার আশ্রয়ে অনেক ধারণা অথবা গল্প বেঁচেবর্তে থাকে। জাফরের আবিস্কৃত এরকম একটা ধারণার নাম দিতে চাই ঔরসজাত সন্তান থিওরি। জাফরের বিভিন্ন পলিটিকাল স্টেটমেন্টে এ থিওরির ব্যপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। একটু কান পাতলেই এর আওয়াজ আপনি পেয়ে যাবেন।

তার এ থিওরি বুঝতে হলে অবশ্য আপনাকে ফিরে যেতে হবে বাংলা সিনেমার আবেগঘন প্লটে। আমাদের দেশের নাটক-সিনেমাগুলোতে অনেক মূল্যবান জ্ঞান লুকিয়ে আছে।

এরকম গল্পে দেখা যায়, জমিদারের একজন ঔরসজাত সন্তান থাকে। এর পাশাপাশি দুই একটা পালিত সন্তান থাকে। ঔরসজাত সন্তান একটু দুষ্টু হয়। সে মানুষজনকে ত্যক্ত করে। কিন্তু তারপরও আপন রক্তবাহী সন্তান হিসেবে সে প্রশ্রয় পায়। সুতরাং পালিত সন্তানটি হিংসায় দুঃখে জ্বলে পুড়ে ঐ আপন সন্তানের চেয়েও খারাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়। সে হয়ে যায় বদের বদ, ভিলেন। এদিকে আপন সন্তান দুষ্টু হলেও যেহেতু সে একজন শরীফ রক্তের সন্তান, সে ভালো হয়ে যায়। এবং ভিলেনকে দুরমুশ করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে।

উপরোক্ত চিরায়ত লোককাহিনী থেকে আমরা যুগে যুগে শিক্ষা পেয়ে এসেছি, রক্তের টান সবকিছুর উপরে। আপন সন্তান যেরকম হয়, পরের সন্তান যত যাই কিছু হোক না কেন সেরকম হয় না। এদিকে আপন সন্তান যত খারাপই হোক না কেন, সে আসলে দুষ্ট হয় না, সে হয় দুষ্টু। সেই আপন ঔরসজাত সন্তানই শেষপর্যন্ত পিতামাতার মুখে হাসি ফোটায়। তাদের স্বপ্ন পূরণ করে। হলভর্তি দর্শকের হাতে তালিয়া বাজায়।

জাফর যেহেতু নিরপেক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে চায়, সে সরকারেরও সমালোচনা করে মাঝে মাঝে। তবে সব সমালোচনার পর তার শেষ কথা হলো, বাংলাদেশে সত্য ও ন্যায়ের পথে আছে একমাত্র আওয়ামী লীগ। যেহেতু তারা মুক্তিযুদ্ধের দল (অর্থ্যাৎ, তার ন্যারেটিভ বিজনেসের সাপোর্টিং পার্টি), সুতরাং একজন বাংলাদেশী একমাত্র আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করতে পারে। অন্য কোন দলকে সমর্থন করা বাংলাদেশী হিসেবে কবিরা গুনাহ। বাসদ জাসদ মাসদ এসব দলকে সমর্থন করলে হয়তো ছোটখাটো মাকরুহ গুনাহ হতে পারে।

কিন্তু বিএনপি-জামায়াতকে সর্মথন করলে সে কাফের হয়ে গেলো। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের আপন সন্তান না। তারা বাংলাদেশের পালিত সন্তান। তাদের রক্তে বিষ আছে। বড় হয়ে সেই বিষাক্ত রক্তের টানে তারা ভিলেনে রুপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশকে শেষ করে দিচ্ছে। একমাত্র আওয়ামী লীগই হলো বাংলাদেশের ঔরসজাত সন্তান। তারা একটু দুষ্টামী করলেও মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বুঝালে তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নায়ক হয়ে ঢিসুম ঢাসুম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগই হলো বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র আশা ভরসার জায়গা।

এই হলো সংক্ষেপে জাফর ইকবালের ঔরসজাত সন্তান থিওরির মূলকথা।

অনুপম দেবাশীষ রায় ফেইসবুকে বিভিন্ন ইস্যুতে ভিডিও এবং লেখা মতামত দেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তার যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনা অন্যদের মতো আমিও পছন্দ করেছি। তিনি পরশুদিন একটি নোট লিখেছেন, “কেন আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করি?” শিরোনামে।

লম্বা এ কৈফিয়তের সারসংক্ষেপে তিনি লিখলেন “—(আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করি কারণ) আওয়ামী লীগ কোন আদর্শবাদী মৌলবাদী লীগ না। জনগণ যা চায়-জনগণকে দলে টানবার জন্যে আওয়ামী লীগও তাই চায়। অথচ এটা যদি বিএনপি বা জামাত সরকার হতো-শত গণআন্দোলন করেও হয়তো তাদের রাজমানসিকতা পরিবর্তন করা যেতনা কারণ তারা মৌলবাদী একটা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে। কাজেই বিএনপির আমলের গণআন্দোলন হয় সরকার বদলের আন্দোলন আর আওয়ামী লীগের আমলের গণআন্দোলনের মূল আশা থাকে সরকারের রাজমানসিকতা পরিবর্তন।—”

সিরিয়াসলি? নিজেকে গবেষক দাবীদার কারো কাছ থেকে এমন অথর্ব ক্লেইম আশা করিনি। সাথে সাথেই অবশ্য মনে পড়লো, এদেশে আবুল বারাকাত মুনতাসির মামুনরাই গবেষক।

বিএনপি কি ধরণের ‘আদর্শবাদী মৌলবাদী’ দল হলো, অথবা রাজনীতিতে ‘মৌলবাদী আদর্শবাদী’ দল হওয়া জামায়াতের জন্য কি ধরণের অমার্জনীয় অপরাধ হয়ে গেলো, কোন নিক্তিতে হলো, এসব জানার প্রবল ইচ্ছাও জাগ্রত হলো। তবে বাংলাদেশে এসব ইচ্ছাপূরণ হবে না। বাংলাদেশে যা হবে তা হলো আই ডোন্ট নো এর অর্থ শুনে জনতার হৈ হৈ বিজয় মিছিল বের হয়ে যাবে। যুক্তির একটা ন্যুনতম পর্যায় থাকা উচিত। বাংলাদেশে যুক্তি এবং উপমা/তুলনা এই দুইটা জিনিসকে প্রায়শ লাঞ্ছিত করা হয় এবং এ করেই আমরা বাহাদুর বনে যাই।

তারপরও একটু হতাশ লাগলো এই কারণে যে নতুন প্রজন্মের যারা নিজেদেরকে সাহসী প্রতিবাদী হিসেবে দাবী করে সামনে আসতে যাচ্ছে তারাও জাফরের সেই বস্তাপঁচা ঔরসজাত সন্তান থিওরির ঝান্ডা উড়িয়ে ঘোমটা খুলে তাদের গান্ডু চেহারাটা দেখিয়ে দিচ্ছে।

জার্মানীতে একসময় নাতযি পার্টির নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিলো। তাদেরও এরকম বহু গান্ডু বুদ্ধিজীবি ছিলো। সেই নাতযি পার্টি সময়ের সাথে সাথে নিষিদ্ধই হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যেভাবে ফ্যাসিবাদের চর্চা করছে তারাও সে একই পথে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগকে অতীতের রাজনৈতিক দল হিসেবে সমর্থন করা কোন অপরাধ না, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের সমর্থন করা নিঃসন্দেহে অপরাধ। গুম খুন দখলদারির কৈফিয়তদাতারা ঐ খুনিদের সহযোগী। মানুষের রক্ত এদের হাতেও লেগে যাবে।

পরিবর্তনের কথা বলতে গেলে, সাহসের কথা বলতে গেলে, মানুষের কথা বলতে গেলে ফ্যাসিজমের গান্ডুগিরি করাটা একসাথে কোনভাবেই যায় না। নাম যশ পদবী ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু কামাতে পারবেন অবশ্যই, তবে এভাবে চিন্তার ধারা নির্ণয় করলে শেষ পর্যন্ত গুপ্তকেশ কামিয়ে ইতিহাসে আসল জায়গাটা হবে ভুলে যাওয়া আবর্জনার স্তুপে। সুতরাং আসুন আমরা দালাল না হই, বরং মানুষ হয়ে উঠি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নিশ্চিত করার আহবান পূনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কেবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে কারো কারাদণ্ড হতে পারেনা বলেও মনে করে দেশটি।

২০১৭ সালের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে শুক্রবার ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিং এমন অবস্থানের কথা জানান স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এডভাইসর এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক ব্যুরো প্রধান এ্যাম্বেসেডর মাইকেল জি কোজাক।

বিশেষ ওই ব্রিফিংএ সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান- আপনাদের রিপোর্ট অনুসারে ১৬২ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। এমনিভাবে বছরের প্রথম ১০ মাসে ১১৮ জন বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেই চলেছে। গণতান্ত্রিক চর্চা সম্পর্কে বলা হয়েছে বিরোধীদের সভা-সমাবেশের অধিকার খুব সীমিত, বিশেষত প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সমাবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেনা।

রিপোর্ট বলা হয়েছে বিগত ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বয়কট করেছে। মূলত শুধু বিএনপিই বয়কট করেনি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বয়কট করেছে। কেনোনা যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ সকলে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠানো স্থগিত করে। আমরা তখনো দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া। যাকে একতরফা নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী কারাগারে আটক রয়েছেন। এই বিষয়গুলো সার্বিক ভাবে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনে যুক্তরাষ্টের ভূমিকাই বা কি?-

জবাবে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেন, আমার ধারনা আপনি রিপোর্টি ভালো করে পড়েছেন। আজকে প্রকাশিত রিপোর্টটি গত ক্যালেন্ডার বছরের রিপোর্ট। যার মধ্যে ওই সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। এর পরে অনেকগুলো ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। যা আপনিও বলেছেন। আগামী বছরের রিপোর্টে তা উঠে আসবে।

মাইকেল কোজাক বলেন, নির্বাচন আসন্ন। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে এবং যা হতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।

অবাধ প্রতিযোগিতা , উন্মুক্ততা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এটি একটি উপায়। আমরা ক্রসফায়ারের ঘটনা নিয়ে প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। এটি সাধারণত একটি বিতর্কের বিষয় যা কিনা একটি বৈধ সামরিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়। কিন্তু এটা আমাদের উদ্বেগের বিষয়। আমরা এই বিষয়ে মানুষদের সাথে কথা বলি।

আরেকটি বিষয় যা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, যদি আমাদের কাছে তথ্য থাকে যে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তখন আমরা প্রশিক্ষণ ও সরজ্ঞামাদি প্রদান বন্ধ রাখি। যতক্ষণ না সরকার অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসে।

খালেদা জিয়ার কারাদন্ড প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মাইকেল কোজাক বলেন, “জিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারের আহ্বান আমরা জানিয়েছি, এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে কারো কারাদন্ড হতে পারেনা।”

তিনি বলেন, “আমরা নানা উপায়ে মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করি। একেক দেশে একেক রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়। যেমন- বিবৃতি প্রদান, সরঞ্জামাদি প্রদান না করে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় উত্সাহিত করা। কখনও কখনও লোকেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যাতে তারা তাদের মানবাধিকার কর্মক্ষমতা উন্নত করে। সুতরাং সার্বিক ভাবে নানা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের মধ্য দিয়ে আমরা সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হচ্ছি। তবে রিপোর্ট সমস্যা সম্পর্কে, সমাধান সম্পর্কে নয়।”

রোহিঙ্গদের মানবিক বিপর্যয় ও যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান থাকা সত্তেও মিয়ানমার সরকারের আন্তর্জাতিক চাপ অগ্রাহ্য করার বিষয়ে বাংলাদেশী সাংবাদিক শিহাব উদ্দিন কিসলুর করা অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাম্বেসেডর মাইকেল বলেন, নিঃসন্দেহে এটা এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধন। ভয়াবহতম বিপর্যয়। এখান থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। আমরা ইতোমধ্যে এই ঘটনায় দায়ী সিনিয়র জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য করনীয় সকল কিছুই যুক্তরাষ্ট্র করবে উল্লেখ করে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করায় বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এই নীতিনির্ধারক।

মানবাধিকার লংঘন ও সভা-সমাবেশের অধিকার সংকুচিত

বাংলাদেশের মানবাধিকারের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যেসব খাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০১৭ এর বাংলাদেশ অংশে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বর যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন, খেয়ালখুশিমতো ও বৈআইনিভাবে আটকে রাখা, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে জোর করে গুম করা, নাগরিক স্বাধীনতা সীমাবদ্ধতা। রয়েছে সংবাদ মাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতা রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নেই।

রয়েছে দুর্নীতি, সহিংসতা, লিঙ্গগত বৈষম্য, রয়েছে যৌনতা বিষয়ক অপরাধ, ধর্মীয় বিষয়। আর রয়েছে জবাবদিহিতার অভাব।

এখনও মানব পাচার একটি গুরুত্বর সমস্যা হয়ে আছে। রয়েছে শ্রমিকদের অধিকারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। শিশু শ্রমের অবস্থা একেবারে বাজে। এ ছাড়া রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ থেকে তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়ার ব্যাপকতা। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যেসব নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ড ঘটায় তা তদন্তে বা বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তামূলক সেবাখাতগুলোতে জনগণের রয়েছে অনাস্থা। এ জন্য তারা ফৌজদারি কোনো ঘটনা রিপোর্ট করতে বা সরকারি বাহিনীর সহায়তা নেয়া থেকে বিরত থাকেন।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি উদার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ একটি নির্বাচনে পুননির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ক্রসফায়ারে ১৬২ জন নিহত হয়েছে। তবে অধিকার বলছে, বছরের প্রথম ১০ মাসে নিহত হয়েছে ১১৮ জন।

বাংলাদেশে চলমান গুমের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়, মানবাধিকার সংস্থা আর গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে দেশটিতে গুম এবং অপহরণ চলমান রয়েছে। এর অনেকগুলো আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সংস্থাসমূহের দ্বারা ঘটে থাকে। এধরনের অপরাধ দমন কিংবা তদন্তে সরকারে নেয়া ভূমিকা নামকাওয়াস্থে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে গত বছর ৬০ জনকে গুম করা হয়।

অপহরণের চিত্র তোলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত তিন বিরোধী নেতার ছেলেদের আটক করে। এর মধ্যে এর মধ্যে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে ছেড়ে দিলেও এখনো নিখোঁজ মির আহমেদ বিন কাশেম ও আমান আজমী। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা তাদের এক রিপোর্টে জানায় ৪০ জনকে গুম করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বে-আইনী গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান সংবাদ মাধ্যম সহ মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু এই অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সংবিধানে সংবিধানের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান করে দেখানো হয়েছে। এমন রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৬ সালে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাংবাদিক কনক সারওয়ার সহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে মান্না ও কনক সারোয়ারের বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয় নি সরকার। ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ে এমন বক্তব্যকে সীমাবদ্ধ করেছে আইন। কিন্তু ঘৃণামুলক বক্তব্যের সংজ্ঞা কি তা পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয় নি। এর ফলে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সরকার বড় শক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পায়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়, বিদেশী বন্ধুপ্রতীম দেশের বিরুদ্ধে যায়, আইন শৃংখলার বিরুদ্ধে যায়, নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায়, আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে, মানহানি হয় অথবা অপরাধকে উসকে দেয় এমন সব বক্তব্য সীমিত করতে পারে সরকার।

বাংলাদেশে প্রিন্ট ও অনলাইন নিরপেক্ষ মিডিয়া সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। যেসব মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করেছে তারা সরকারের নেতিবাচক চাপের মুখে পড়েছে। মাঝে মাঝে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সহ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করেন। এতে গত অক্টোবরে একটি অনলাইন নিউজ আউটলেটের একজন সাংবাদিক উৎপল দাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অক্টোবরে উৎপল নিখোঁজ হলেও ডিসেম্বরে তাকে ফিরে পাওয়া যায়। তার পর উৎপল দাস যে বক্তব্য দিয়েছেন তার ফিরে আসা নিয়ে তাতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ ভীতি প্রদর্শনের পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে জোর করে গুম করা হয়েছিল।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ও সামাজিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুবাশ্বের হাসান গত বছর ৪৪ দিন নিখোঁজ ছিলেন। দ্য ওয়্যার নামে একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট অভিযোগ করে যে, একটি বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এই নিখোঁজের জন্য দায়ী। এর ফলে ওই ওয়েবসাইটটি ব্লক করে দেয় সরকার। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের মতে, ১৭ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশের দূতবাসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশী কোনো সাংবাদিক বিদেশ সফরে গেলে তাদের ওপর নজরদারি করতে নির্দেশনা দেয়া হয় ওই চিঠিতে।জাস্ট নিউজ

সবাইকে জানিয়ে দিতে নিউজটি অবশ্যই শেয়ার করুন