‘কুত্তার বাচ্চা’ গালি শুনেও সাংবাদিক নেতারা চুপ কেন?

একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসেবে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে লাম্পট্যপনার সংবাদ প্রকাশের পর আমাকে যিনি গুলি হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন সেই একই ব্যক্তি সংবাদ পাঠিকাকে হুমকি দেয়ার সময় সম্প্রতি সাংবাদিকদের ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলে গালি দেন। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ যুগান্তর পাঠক এবং যমুনা টিভির দর্শক নিজ কানে শুনেছেন। শুনেননি শুধু আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতারা। ওই নিউজ প্রকাশের তিন দিন অতিবাহিত হলেও আমাদের ভোটে নির্বাচিত নেতাদের মুখে কলুপ আর হাতে তালা। কোন গ্রহ থেকে এসেছেন ওই কর্মকর্তা? কত ক্ষমতা তার? কেন নেতারা কুত্তার বাচ্চা গালি শুনেও বিষয়টির প্রতিবাদ করতে পারছেন না? খুব জানতে ইচ্ছে করে।

তাহলে নিরীহ সংবাদকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর রহস্যজনক প্রতিশ্রুতিতে ভোট নিয়ে আপনারা কী করছেন? আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকির অডিও প্রকাশের পরও আমি গত প্রায় চার মাসেও থানায় জিডি করতে পারলাম না। ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে হুমকির অডিও শুনিয়ে আসলাম। তিনি নিরাপত্তাহীন মনে করলে থানায় জিডি করতে পারেন বলেও পরামর্শ দেন। তারপরও আমার জিডি গ্রহণ হলো না।

কয়েকদিন আমার গাড়ির পেছনে অনুসরণ করতেও দেখি। এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার পর অনুসরণ চোখে পড়েনি। আমি এবং আব্দুল্লাহ তুহিন ডিএমপির সম্মানিত কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে জিডি না নেয়ার বিষয়টি জানালাম। তারপরও জিডি নথিভুক্ত করা হয়নি।

সংবাদ পাঠিকাকে এভাবে হুমকি দেয়ার পরও নেতাদের কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করছি না। যমুনা টিভির আব্দুল্লাহ তুহিনও নিরাপত্তাহীন। এভাবে যদি একজন ব্যক্তির ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদ করার সাহস না থাকে তাহলে আজ সংবাদকর্মীদের স্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কি সাংবাদিক নেতারা একটু ভেবে দেখেছেন? অন্য কোনো দেশে যদি এমন ঘটনা ঘটতো তাহলে এর পরিণাম কী হতো?

আপনারা চুপ কেন? আমি ছোট এবং ক্ষুদ্র সাংবাদিক বলে? সংবাদ পাঠিকা নারী তাই বলে প্রতিবাদ করা যাবে না? তাঁর চোখের পানি কি আপনাদের হৃদয় গলাতে পারেনি? আপনারা যারা সিনিয়র আছেন তারা কি কোনোদিন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কোনো কর্মকর্তার মুখে হত্যা করে ৬৪টি টুকরা করার এমন হুঙ্কার শুনেছেন? পদস্থ কোনো কর্মকর্তার দ্বারা এভাবে নারীর সম্ভ্রমহানির অশুভ ইঙ্গিতের লজ্জায় কোনো মেয়ের হাউমাউ করে কান্নার আওয়াজ শুনেছেন? যদি না শুনে থাকেন তাহলে বিষয়টি নিয়ে নিরীহ সংবাদ পাঠিকার পাশে কেন দাঁড়াচ্ছেন না? এর দায় কি আপনারা এড়াতে পারবেন?

কোথায় আজ মানবাধিকার কমিশন? এই কমিশনের কাজটা কী? খুব জানতে ইচ্ছে করে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সাধারণ মানুষ কিন্তু নানান কথা বলতে শুরু করেছে। কোথায় আজ নারী নেত্রীরা যারা সম্ভ্রম নিয়ে সোচ্চার থাকেন?

লেখক:
নেসারুল হক খোকন
সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক যুগান্তর