লন্ডনে তারেক জিয়া গোয়েন্দা নজরদারি এবং সীমাবদ্ধ চলাচলের মধ্যে রয়েছে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া তারেক কোথাও যেতে পারছেন না এবং কারও সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তাঁর বাসার সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি (তারেক জিয়া) পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও যেতে পারবেন না। যুক্তরাজ্য পুলিশ গত ১৬ এপ্রিল থেকে তারেক জিয়াকে এরকম গৃহবন্দী অবস্থায় রেখেছে।
লন্ডন পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক অভিযোগের কারণে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ এপ্রিল থেকে লন্ডনে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর দেশে ফেরার কথা।
বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে লন্ডন পুলিশের কাছে পাঠানো এক অভিযোগে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে থাকা তারেক জিয়া একজন দণ্ডিত অপরাধী। বাংলাদেশে দুটি মামলায় সে দণ্ডিত হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরের সময় তারেক জিয়া কোনো অপকর্ম করতে পারে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস মনে করে।’ এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারেক জিয়ার নির্দেশে লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। এ কারণেই লন্ডন পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহ নিয়েছে।
১৫ এপ্রিল লন্ডন পুলিশের পক্ষ থেকে তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে লন্ডন পুলিশের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ১৭ এপ্রিল তারেকের সঙ্গে কোকোর স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি দেখা করেন। সম্প্রতি সিঁথি বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে ফিরে গেছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত তারেক বাসা থেকে বের হননি।
যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে গিয়ে ৬ মাসে আটক ১৭১ বাংলাদেশি
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ (সিবিপি) বলেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে এপ্রিলের ১২ তারিখ পর্যন্ত মেক্সিকোর সাথে টেক্সাসের লারেডো সীমান্তে ১৭১ বাংলাদেশিকে তারা আটক করেছে।
মেক্সিকোর সাথে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টার সময় তাদের আটক করা হয়।২০১৭ অর্থ-বছরে (অক্টোবর-আগস্ট) ওই একই সীমান্তে ১৮০ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছিল।মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের আমেরিকায় ঢোকার এই পরিসংখ্যানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনবিরোধী বৃহত্তম এবং প্রভাবশালী সংগঠন ফেডারেশন ফর আমেরিকান ইমিগ্রেশন রিফর্মস (এফএআইএ)।
ইমিগ্রেশন রিফর্ম ডটকম নামে সংস্থার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি নিবন্ধ লিখেছেন গবেষণা বিভাগের প্রধান ম্যাট ও ব্রায়েন।তিনি লিখেছেন- অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, টেক্সাসের লারেডো সীমান্ত লাতিন আমেরিকা হয়ে দক্ষিণ এশীয় ও আফগান অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার প্রধান রাস্তা হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশিদের নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রায়েন। তার উদ্বেগের দুটি কারণ তিনি দেখিয়েছেন-প্রথমত আইসিস ও আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (এ কিউআইএস) এবং আরও কিছু জঙ্গিগোষ্ঠী বাংলাদেশে তৎপর। এরা বাংলাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে।
তিনি বলেন, সুতরাং সম্ভাবনা রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা এসব অবৈধ অভিবাসীদের কারও কারও সঙ্গে ওই সব সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগাযোগ থাকতে পারে।দ্বিতীয়ত যদি বাংলাদেশের মতো দূরবর্তী একটি দেশ থেকে লোকজন লাতিন আমেরিকায় ঢুকে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুতে যেতে পারে, তাহলে অন্য যেসব দেশে সন্ত্রাসবাদের সমস্যা রয়েছে, সেখানকার লোকজনও উৎসাহিত হয়ে একই পথ বেছে নিতে পারে।
ব্রায়েন বলেন, প্রায় অরক্ষিত দক্ষিণের সীমান্ত যেন সন্ত্রাসীরা অপব্যবহার না করতে পারে, তা নিশ্চিত করার সময় এসেছে।
গত বছর মার্কিন সাময়িকী লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, লাতিন আমেরিকা হয়ে মেক্সিকোর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি, ভারতীয়, নেপালি ও পাকিস্তানিদের অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার সংখ্যা প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১১ মাসে এই চার দেশের চার হাজার ৬০ নাগরিক এই পথে আমেরিকায় ঢোকে। যাদের মধ্যে তিন হাজার ৬০৪ জনকে আটক করা হয়। অথচ সাত বছর আগে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২২৫ জন।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস লিখেছে, দক্ষিণ এশীয় এসব অবৈধ অভিবাসী প্রধানত দুবাই থেকে চার্টার্ড বিমানে ব্রাজিলে এসে নামে। তার পর সেখান থেকে স্থলপথে বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, পানামা সিটি এবং গুয়েতামালা হয়ে মেক্সিকোতে ঢোকে।
এত পথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পৌঁছতে অনেক সময় কয়েক মাস লেগে যায়। পথে পড়ে বিপজ্জনক জঙ্গল ও পাহাড়। চাঁদাবাজ ও ডাকাত দলকেও মোকাবেলা করতে হয় তাদের।এর পর সীমান্ত দিয়ে রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে ঢুকতে না পারলে অনেক সময় ধরা পড়ে যায় অথবা নিজেরাই ধরা দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চান।
২০১৬ অর্থবছরে মেক্সিকো সীমান্তে প্রায় চার হাজার দক্ষিণ এশীয়কে আটক করা হয়।
সূত্র: বিবিসি