স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য সহ বিএনপির অন্তত ২১ জন নেতার বিদেশ সফরের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন
এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এদের বিদেশে যেতে না দেওয়ার জন্য বিমানবন্দর কতৃপক্ষ এবং ইমিগ্রেশন বিভাগকে জানিয়েছে।
স্থায়ী কমিটির যে পাঁচ সদস্যের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাঁরা হলে, মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। এছাড়াও আব্দুল আউয়াল মিন্টু, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির মোট ২৬ জন নেতার উপর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএনপির আট নেতার ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তদন্ত করছে। দুদক তদন্তের স্বার্থে এই আটক নেতার বিদেশ গমনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইমিগ্রেশন ও বহিঃগমন বিভাগকে অনুরোধ করেছে। গত ১৫ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন এই অনুরোধ করে। এছাড়াও বিভিন্ন মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বাকি নেতাদের বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তারেক রহমানকে টার্গেট করেছে সরকার: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দেওয়ার পেছনে সরকারের কোনো গভীর চক্রান্ত রয়েছে। এতে তার জীবন নিয়ে আমরা গভীর শঙ্কায় আছি।
তিনি আরো বলেন, ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা সাঁজানো মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে অমানবিক আচরণ করেও ক্ষ্যান্ত হননি এখন তিনি টার্গেট করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে আমরা বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কারাকর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। বরং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ মর্যাদায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ডাহা মিথ্যাচার। সরকারি মেডিকেল বোর্ড দেশনেত্রীকে অর্থপেডিক বেড দেয়াসহ যেসব চিকিৎসার সুপারিশ করেছিল তা এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না।
তিনি বলেন, বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দ্বারা যেসব চিকিৎসা সেবা পেতেন সে সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। মনে হচ্ছে এর পেছনে সরকারের কোনো গভীর চক্রান্ত রয়েছে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করার পর থেকে কারাকর্তৃপক্ষ ও সরকার যে ধরনের আচরণ করেছে এবং তার চিকিৎসা নিয়ে যে টালবাহানা করছে তাতে আমরা দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি। বেগম খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও তার জামিন স্থগিত করাও ঐ চক্রান্তেরই অংশ।
সরকার বেগম জিয়াকে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলতে চক্রান্ত জাল বুনছে দাবি করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও অসুস্থতা আড়াল করতে সরকার নানা ফন্দিফিকির করছে। এগুলো বন্ধ করে তার নিজস্ব চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং অবিলম্বে দেশনেত্রীকে তার পছন্দানুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য আবারও জোর দাবি জানাচ্ছি।
কমনওয়েলথ সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, সেখানে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনের টিভি চ্যানেল-ফোর এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। এটা যুগে যুগে স্বৈরশাসকদেরই একটা আচরণ বলেন রিজভী।
বিএনপি এ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেও একদিন প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দিতেই হবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে সরকার পতন ঠেকানো যাবে না।
কোটা বাতিল করা নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চাকুরিতে সম্পূর্ণ কোটা প্রত্যাহার করে নেওয়া এক ভয়ঙ্কর দুরভিসন্ধির অংশ। এখন এই দুরভিসন্ধির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর সরকারের বিপজ্জনক আক্রমণের ছোবলের মধ্য দিয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরওয়ার, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।
‘তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে তো আওয়ামী বিচার হচ্ছে এখানে হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার এটা তো প্রকৃত আইনের বিচার না। আইনের শাসনকে তারা কালো কাপর দিয়ে জুড়ে রেখেছে। তার যে মনের ক্ষোভ প্রতিহিংসা সেটার চরিত্রার্থ করার জন্যই তাকে (তারেক) টার্গেট করেছে। আরও একটি রোডম্যাপ তিনি করেছেন। এটাতে কোনো লাভ হবে না। পৃথিবীর সব দেশ তো শেখ হাসিনার দেশের মতো অগণতান্ত্রিক দেশ না, নিষ্ঠুর নির্দয়ের দেশ না।’