ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ভবনে ৮ এপ্রিল দিন পেরিয়ে গভীর রাতে যে হামলা হয়, ওই সময় সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালন করেছে আটটি গ্রুপ। এর মধ্যে হামলায় অংশ নেয় দুটি গ্রুপ। আর অন্য ছয়টি গ্রুপ উপাচার্যকে রক্ষাসহ নানান ভূমিকা পালন করে।অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ওই রাতের হামলার সময়ের চিত্র। ওই সময়ের কিছু অপ্রকাশিত ছবিও পাওয়া গেছে। এসবে মুখে কাপড় বাঁধা কয়েকজন হামলাকারীকে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলা শুরু হয় রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। চলেছে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত।
উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, হামলা শুরু হয় ১টা ২৫ মিনিটে। ফটক ভেঙে বাসভবনের ভেতর প্রবেশ করে ১টা ৩০ মিনিটের দিকে। তখন তার মেয়ে, স্ত্রী, ছেলে সবাই আলাদা হয়ে পড়েন।
তবে এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো হামলার সঙ্গে জড়িত কাউকে সনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। শুরু থেকেই উপাচার্য বলছেন, হামলাকারীরা বহিরাগত।
হঠাৎ ২৪ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার, ঢাবিতে উত্তেজনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে ১০ এপ্রিলের ঘটনায় ২৪ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এ নিয়ে পুরো ঢাবি জুড়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।সোমবার রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে এবার এষা বিরোধীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করলো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। গত ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হলের সভাপতি এষাকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পড়ানো ও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।
হলের সহ-সভাপতি মোর্শেদার পা কাটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেই মোর্শেদাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। কোটা ইস্যুতে আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ঘটনায় আরো ২৪ নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিস্কৃতরা হলেন, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদা হোসেন মুন,ঢাবি ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মুর্শেদা খানম,আতিকা হত স্বর্ণা,মিরা,সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতী আক্তার সুমি, সহ-সম্পাদক শ্রাবণী,যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার সুমি, ঢাবি চারুকলা বিভাগের উপ-তথ্য ও গবেশষনা সম্পাদক আশা, নাট্যকলা বিভাগের লিজা, মিথিলা নুসরাত বৈতী, সঙ্গীত বিভাগের মোনম সীথি, চারুকলার সুদীপ্তা মন্ডল,সঙ্গীত বিভাগের প্রিয়ংকা দে, নৃ বিজ্ঞান বিভাগের শারমিন সুলতানা,উর্দু বিভাগের মিতু, ভূতত্ত্ব বিভাগের শিলা,জাকিয়া,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মনিরা, রুনা, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের জুঁই,চারুকলা বিভাগের অনামিকা দাস, সঙ্গীত বিভাগের প্রভা, বাংলা বিভাগের তানজিলা ও সমাজকল্যাণ বিভাগের তাজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ ছাত্রলীগ নেত্রী।
গেলো ৮ এপ্রিল থেকে কোটা সংস্কারের দাবি টানা আন্দোলন শুরু হয়। চতুর্থদিনের মাথায় সুফিয়া কামাল হলে গভীর রাতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যাওয়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইশরাত জাহান এশা কয়েকজনকে নির্যাতন করে আহত করেছেন।
নির্যাতিতরা জানান, তারা সকলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ সময় হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মুর্শেদা খানমের পা কেটে যাওয়া ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে মুহূর্তেই অন্যান্য হল থেকে সুফিয়া কামাল হলে জড়ো হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা হল সভাপতি এশার বিচার দাবি করেন।পরে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয় হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইশরাত জাহান এশাকে। তবে বহিষ্কার করার তিন দিনের মাথায় এশাকে নির্দোষ দাবি করা হয়। স্বপদে ফেরায় ছাত্রলীগ।
জানা যায়, সোমবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুর্শেদা খানম ছাড়াও সহ সভাপতি আতিকা হক স্বর্ণা, মিরা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমি, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শারমিন আক্তার, সহ সম্পাদক শ্রাবণীসহ যে ২৪ নেতাকর্মীর নাম প্রকাশ হয়েছে, তাদের সবাই ওইদিন রাতে এশার নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলেন।এছাড়া সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বের হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সম্মেলনপ্রত্যাশী অংশের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরেফিন সিদ্দিক সুজন, সহসম্পাদক ইমরান জমদ্দার ও জহুরুল হক হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী তার কাছে সম্মেলন নিয়ে কথা বলতে যায়। সোহাগ তাদের সঙ্গে কথা না বলতে চাইলে তারা সোহাগের দিকে তেড়ে যায় এবং বিভিন্ন কটূক্তি করে। এ সময় পাশে থাকা সোহাগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে শুরুতে বাগ্বিতণ্ডা এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের বিষয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা ছাত্রলীগ সভাপতির কাছে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। আমরা তাকে বলি যে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার নিয়ে পোস্ট দিচ্ছে? আপনি নিশ্চুপ কেন? তারেক জিয়া (তারেক রহমান) আপনাকে কত টাকা দিয়েছে? এ কথা বললে, সোহাগ আমার দিকে তেড়ে আসে। পরে তার নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে সাগর হোসেন, মিশু, মিশকাত, আল আমিনসহ ৫ নেতাকর্মী আতহ হন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে এই ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন হল থেকে সোহাগের প্রায় পাঁচ শতাধিক সমর্থক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসে। এ সময় তারা ‘সোহাগ ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, কিছু বহিষ্কৃত ও সাবেক নেতা এসেছিল। যারা মার্ডার মামলার আসামি। তারা ঝামেলা করতে এসেছিল। আমি তাদের মিটিয়ে দেই।
সেদিন মধ্যরাতে কী ঘটেছিলে ঢাবির সুফিয়া কামাল হলে?
১০ এপ্রিল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাবির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বেগম সুফিয়া কামাল হলের বাসিন্দা ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোর্শেদা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করার খবর পাওয়া গেছে।আহত মোর্শেদাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।মারধরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবি দেখে ফজলুল হক হল, শহীদুল্লাহ হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই হলের সামনে উপস্থিত হয়।
এ ঘটনায় ওই হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় বেগম সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে তারা অবরুদ্ধ করে রাখেন।পরে তাকে এশাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় এর আগে তাকে হল ও ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার গভীর রাতে কবি সুফিয়া কামাল হলে সাধারণ ছাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় হল প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে এশাকে হল থেকে বহিষ্কার করেন।অপরদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এশাকে সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রলীগের হামলায় মাঝরাতে ঢাবিতে কোটা আন্দোলনরত ১০ ছাত্রী রক্তাক্ত
ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে ১০ জন ছাত্রী আহত হয়েছেন।সোমবার প্রথম প্রহরের (রাত আড়াইটা) দিকে এই ঘটনা ঘটে।
রাত দেড়টার দিকে ছাত্রীদের একটি মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসির সামনে অবস্থান নিয়ে কোটা পদ্ধতি সংস্কার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।একপর্যায়ে রাত আড়াইটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়ে। এসময় ইটের আঘাতে ১০ ছাত্রী রক্তাক্ত হন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি। আহতের সংখ্যা আরো বড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
এর আগে, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় সরকার, রাত দেড়টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাসে গিয়ে এমনটা জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। সেইসাথে আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
Desh24.com