হিটস্ট্রোকের যে তথ্যগুলো জানা জরুরি

টিবিটি লাইফ-স্টাইলঃ প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা আকস্মিক বেড়ে গেলে সাধারণত হিটস্ট্রোক হয়। গরম আবহাওয়ায় কাজ, ব্যায়াম কিংবা বসে থাকলেও হিটস্ট্রোক হতে পারে। একে প্রধানত বহির্মুখী তাপ-চাপ ও অন্তমুর্খী বা ক্লাসিক তাপচাপে ভাগ করা হয়। হিটস্ট্রোক হলো স্বাস্থ্যের এমন এক গুরুতর অবস্থা, যেটি সব সময় জরুরি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তা না হলে আপনার ভেতরের অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আবার দীর্ঘদিন যদি একে গুরুত্ব না দেন তাহলে তা আপনার জন্য আরও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে। তাই হিটস্ট্রোকের লক্ষণ, কারণ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে প্রত্যেকের জানা জরুরি।সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রায় ৭ হাজার ৪১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এবার স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিকেলনিউজটুডে অবলম্বনে জেনে নিন হিটস্ট্রোকের নানা তথ্য-
# হিটস্ট্রোক একটি গুরুতর অবস্থা এবং এটি মারাত্মক হতে পারে। মাথা ঘোরা, মানসিক পরিবর্তন এবং বমি বমি ভাব এর লক্ষণ হতে পারে।

# যদি শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে উঠে এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে একে হার্টস্ট্রোক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

# কিছু লোক বিশেষ করে যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিরা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

# গরম আবহাওয়ায় শারীরিক পরিশ্রমের কারণেও হিটস্ট্রোক হতে পারে।

# হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।

লক্ষণ

যে কোনো বয়সের লোকেরাই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি কারো অনেক বেশি গরম লাগে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি চলে যায় তাহলে সেসব ব্যক্তি অনেক ক্লান্ত বোধ করেন। একই সঙ্গে গরম আবহাওয়ায় তিনি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েন এবং তার মাংসপেশী অসার হয়ে আসে। এ সময় শরীর যদি সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তাহলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর ফলে আপনার হিটস্ট্রোক হতে পারে।

এর লক্ষণগুলো হলো-
শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা: শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাওয়াই হলো হিটস্ট্রোকের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

মানসিক পরিবর্তন: বিভ্রান্তি, হৃদরোগ, প্রলাপ, বিরক্ত হওয়া, অসুস্থতা প্রভৃতি হতে পারে।ঘামে পরিবর্তন: গরম আবহাওয়ায় চামড়া শুকিয়ে শুষ্ক হয়ে যায়। এ সময় ঘাম শরীরে গরম একটা অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়।বমি বমি ভাব: গরম আবহাওয়ায় অসুস্থ বোধ হয় এবং বমি বমি লাগে।
মাথাব্যথা: হিটস্ট্রোকে মাথাব্যথা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।রঙ পরিবর্তন: শরীর গরম হয়ে গেলে ত্বক লাল হতে পারে।শ্বাস: শ্বাস দ্রুত এবং শ্বাস কষ্ট হতে পারে।হৃদস্পন্দন : শরীর যখন ঠাণ্ডা করার পদক্ষেপ নেয় তখন হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।


চিকিৎসা
কোনো ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব তার ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা জরুরি। হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসাই হলো-রোগীর তাপমাত্রা কমানো এবং সম্ভাব্য ক্ষতি প্রতিরোধ করা। এ ক্ষেত্রে যেসব কাজ আপনি করতে পারেন-
নিমজ্জিত রাখা: কোন ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ঠাণ্ডা পানিতে নিমজ্জিত রাখতে হবে অথবা
বরফ স্নান করাতে হবে।
বাষ্পীভবন: ঠাণ্ডা পানি শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যেতে সাহায্য করে। ফলে শরীরও ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
ভেজা কম্বল এবং আইস প্যাক: হিটস্ট্রোকে ব্যক্তিকে ভোজানো কম্বলে মুড়িয়ে রাখুন। আবার ত্বক বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন অংশে আইস প্যাকের ব্যবহারও শরীরের তাপমাত্রা কমাতে কাজ করে।

মাংসপেশী শিথিল: শরীরের তাপমাত্রা কমাতে চাইলে বেনজোডিয়াজেপিনস নামের ওষুধও ব্যবহার করতে পারেন।
হিটস্ট্রোক মূলত এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যে কেউ এতে আক্রান্ত হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যাবেন তার আগে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন। তবে এ সময় অবশ্যই অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

রোগ নির্ণয়
কোনো ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করতেই পারেন-রক্ত পরীক্ষা: রক্তে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা এবং সেন্ট্রাল নার্ভাল সিস্টেমের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করা দরকার।

প্রস্রাব পরীক্ষা: কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করতে প্রস্রাব পরীক্ষা জরুরি। প্রস্রাবের গাঢ় রঙ রোগীর হার্ট কোন অবস্থায় আছে সেই চিহ্ন বহন করে।মাংসপেশী পরীক্ষা: মাংসপেশীর কোষে কোনো ক্ষতি হয়েছে এ পরীক্ষা সেটাই নির্দেশ করে।

এক্সরে: রোগীর ভেতরের কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কি না তা জানতে এক্সরে করতে পারেন।এ ছাড়া গরমের দিনে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করুন। একই সঙ্গে ঠাণ্ডা পাণীয় পানের পাশাপাশি সবসময় ঠাণ্ডা জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন। এতে সহজেই হিটস্ট্রোকের ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
thebangladeshtoday.com