জুতার মালা পরার যে কষ্ট সেটা ভাগা-ভাগি করে নিচ্ছেন দেখে একটা সমবেদনা তৈরী হয়েছে। দু:খিত এবং সমব্যাথিত। আচ্ছা, একটা অডিও ভাইরাল হয়েছে ,যেটাকে বলা হচ্ছে সুফিয়া কামাল হলের নেত্রী এষা’র গেস্টরুমে সাধারন ছাত্রীদের ডেকে ডেকে টর্চার করার একটি অডিও। কয়েকটি কথা রুচি থাকলে শুনতে পারেন:
♦️‘তোর মত শ্রাবনীরে এখানে দাড়ায়ে মারতে মারতে মেরে ফেলতে পারি’
♦️‘শোন আমাদের কারো বাল উঠেনি, এমন না, তোমাদের যেমন বাল উঠেছে, আমারও বাল উঠেছে’
♦️‘তোর আসলে হলে থাকার কোন ইচ্ছা নেই, একা তোরে মেরে পিটিয়ে বের করে দিলে সব গুলো টাইট হয়ে যাবে’
♦️‘নদী কই? সে নদীরে ডাক দে, তুই আগে গিছিলি মিছিলে, নদী তোর পেছন পেছন ছিল, ওরে ডাক দে’
♦️’প্রোগ্রামের মিছিলে বললে তোমার কুড়কুড়ানি লাগে, রাত ১২ টার সময় মিছিলে যাও?
♦️‘পপি কই, পপি রে ডেকে নিয়ে আয় ত’
আমরা সারাজীবন চিৎকার করলাম নারীর মর্যাদা নিয়ে। আজকে যারা জুতার মালা বরণ করার কষ্ট মেনে নিতে না পেরে কষ্ট ভাগাভাগি করছেন, জাস্টিস ফর এষা’ প্লাকার্ড লাগাচ্ছেন, তারা কি এই অসভ্য নারীটির পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন? অথচ তার এখন কারাগারে আটক থাকার কথা ছিল, তাকে কিনা ফুলের মালা দিচ্ছেন? ভালই হলো, আলোচনাটা অব্যহত রাখার সুযোগ পাওয়া গেল।
প্রগতিশীলতা দেখান, মুক্তিযুদ্ধের বন্চনা নিয়ে মুখে ফেনা তুলে দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়াগায় নারী হলে, সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর কি অমানবিক অত্যাচার হয় কোনদিন খোজ নিয়েছেন? না নিলে এই অডিওটি শুনেন। এর পর, জুতার মালা গলায় দেয়ার কষ্ট ভাগাভাগি করে নিয়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশবিক আনান্দ তাতে আরো বাড়বে।
যারা বলছেন, বিচার করা যেত নির্যাতন হলে, জুতার মালা পরানো টা অন্যায়, তাদের সাথে দ্বিমত করছি না। বলছি, বিচার আপনি চেয়েছেন কিনা? কলা ভবনে অবরুদ্ধ ভিসিকে মুক্ত করার নামে যেই শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি করলো আরেক ছাত্রনেত্রী, তাকে দেশের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন ভারতে মোদির সাথে সাক্ষাৎ করাতে। আপনি বিচার চেয়েছিলেন তার? যেই ছেলেটিকে তার ক্যালকুলেটর চাওয়ার অপরাধে চোখ খুচিয়ে আঘাত করা হল, তার প্রতি অবিচারের বিচার চেয়েছিলেন। চাননি বলেই, যখন সুযোগ এসেছে, সাধারনের ক্ষোভটাই জুতার মালা হয়ে এসেছে। সেটা আপনাদের সবার গলাতেই যাওয়া উচিৎ। এই যে এখন পোষ্ট দিচ্ছেন, মানব বন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঐদিন সবাই্ মিলে মালাটা আবার পরবেন আশা করি। অগ্রিম সমবেদনা থাকলো।
আরেকটি কথা:
এমন এশা প্রতিটি হলে আছে।প্রতিটি গনমাধ্যমে আছে। প্রতিটি মন্ত্রনালয়ে আছে।প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে। নারী রুপে অথবা পুরুষ রুপে। এরা নির্যাতন কারী, নীল চাষী। যারা ছড়ি ঘুরায়, আর পুলিশ ডেকে রেইপ করার হুমকি দেয়। এরা এখন ভীত সন্ত্রস্থ। পুলিশি ব্যবস্থাপনায়, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এরা এতদিন নির্যাতন চালানোকেই টিকে থাকার পন্থা ভেবেছে। এখন সাধারণ ছাত্র/মানুষের ঐক্য হওয়ার চেষ্টা দেখে আরো ভীত, এবং মরণ কামড় দেয়ার চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
এদের কষ্ট আর ক্ষোভ দেখে, চলুন আমরাও একটু তাদের পাশে দাড়াই। জুতার মালাটার কষ্ট আসলেই বিধে গেছে তাদের বুকে। প্রতিজনের বুকে।
নোট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে লেখা অব্যহত থাকবে। না ভাল লাগলে দুর’ হউন।
লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কলাম লেখক, রাজনীতি বিশ্লেষক, বিবিসির একসময়ের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর প্রবীণ সাংবাদিক সাহেদ আলম।