বিএনপিকে ছাড়াই কি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? গত দুই দিনে রাজনৈতিক অঙ্গন এবং কূটনৈতিক
পাড়ায় এই প্রশ্ন বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। সরকার বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে আগ্রহী থাকলেও সেই আগ্রহ থেকে সরে এসেছে।
অন্যদিকে বিএনপিও বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন নয়, এমন অবস্থানে ফিরে গেছে। দুই দলের মধ্যে অবিশ্বাস এবং সন্দেহের কারণে প্রস্তাবিত সমঝোতা ঝুলে গেছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকারের একাধিক সূত্রগুলো বলছে, বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যাপারে সরকার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সরকারের কাছে এরকম নিশ্চিত খবর আছে যে সমঝোতার চেষ্টা করলেও দেশে বিদেশে বিএনপি সরকার পতনের চক্রান্ত করছে। তবে এই ‘চক্রান্ত’ বা ষড়যন্ত্রের অবয়ব কি সে সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু বলা হচ্ছে না।
এ কারণেই বিএনপিকে আরও চাপে ফেলতে সরকার এখনই খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিতে রাজি নয়। সরকার মনে করছে বিদেশে গিয়ে বেগম জিয়া সরকার বিরোধী প্রচারণায় আরও সক্রিয় হবেন, এমনকি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, ‘বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠালে দেশে বিদেশে এটা প্রমাণিত হবে যে, আওয়ামী লীগ বোধহয় নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্যই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। বাস্তবে তো নয়, একটি দুর্নীতি মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়ে সাজা ভোগ করেছেন। আদালত যদি তাঁকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয় দিক। আমরা কেন আগ বাড়িয়ে তাঁকে বিদেশে পাঠাতে যাবো।’
আনুষ্ঠানিক এরকম বক্তব্য দিলেও অনেকেই বলেছেন, বেগম জিয়া বিদেশ গেলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে এরকম নিশ্চয়তা কোথায়। মোদ্দাকথা, বিএনপিকে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করতে পারছে না। অন্য একটি সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে হতাশা, অবিশ্বাস সবে শুরু হয়েছে। এখনই বেগম জিয়াকে ছেড়ে দিলে বিএনপির মধ্যে হতাশা কেটে যাবে, দলও চাঙ্গা হবে। তাছাড়া বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে যেরকম ‘চাপ’ সরকার আশা করেছিল তাঁর সামান্য পরিমাণও বিএনপি সৃষ্টি করতে পারেনি।
তাই সরকারের একজন নীতি নির্ধারক তো বলেই ফেললেন, ‘এত তাড়া কেন?’ সরকার মনে করছে, ‘বেগম জিয়া যত বেশিদিন কারাগারে থাকবে ততই বিএনপি ভঙ্গুর এবং বিপন্ন হবে। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার এই সুযোগ আওয়ামী লীগ হাত ছাড়া করবে কেন? বিএনপিকে চাপে রেখেই নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচন থেকে দূরে থাকে, সেক্ষেত্রে অন্যান্য দলগুলো যেন নির্বাচনে অংশ নেয়, তা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
একাধিক সরকারি সূত্র বলেছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তার ২০ দলীয় জোটের শরীকরা, নাগরিক ঐক্য, বিকল্পধারা সহ নানা মত ও পক্ষের সব দলই আগামী নির্বাচনে যেন আসে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বললেন, ‘সব দল যখন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চাইবে, তখন বিএনপির একা থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’ তাছাড়া বিএনপি নেতাদের উপর মামলার চাপ সৃষ্টি করে দলটিকে আরও দুর্বল করতে চায় সরকার।
অবশ্য বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘সরকার যদি আমাদের চাপে ফেলতে চায়। তাহলে আমাদের জন্যও নির্বাচনে যাবার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সরকারকে আরেকটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সেটা এবার সম্ভব হবে না।’
shompadak.com