অনেক দিন ধরে ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় আন্দোলন করছে সরকারী চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য। তারা চাকরি চায়। কোটার উৎপাত থেকে বাঁচাতে চায়। কিন্তু পুলিশ তাদের রাস্তায় ফেলে পিটায়, টিয়ার গ্যাস দেয়, ধরে ধরে খাঁচায় পোড়ে। দাবীতো মানেই না। এমনকি ছাত্ররা শেখ মুজিবের ছবির প্লেকার্ডকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেও পুলিশের মাইরের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বিশ্ববিখ্যাত স্বৈরাচারের তকমাধারী শেখ হাসিনার পুলিশ দেশ বলে কথা। দাবী মেনে নেয়ার বদলে সরকারী দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাচ্চা বাচ্চা ছাত্রছাত্রীদের সচিবালয়ে ঢুকিয়ে পুলিশ কমিশনারকে পাশে বসিয়ে নরমে গরমে সাইজ করে “ডোন্ট ডিক্টেট মি” পজিশনে নিজেই ঘোষণা দেয় আন্দোলন স্থগিত।
ছাত্ররা ক্যম্পাসে ফিরে এলে সব শুনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে বলে- এটা তো চিটিংবাজি, এ আলোচনা ও ঘোষণা মানি না। এরি মধ্যে সরকারের গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রী মতিয়া ঘোষণা দেয়- আন্দোলকারীরা সব রাজাকারের বাচ্চা- ওদের দেখে নিব। এসব শুনে ছাত্রসমাজ অগ্নিগর্ভা হয়ে ওঠে। অর্ধ লক্ষ ছাত্রছাত্রী টিএসসিসহ ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়- আবার রাতভর শুরু হলো বিক্ষোভ শ্লোগান, প্রতিবাদ। অন্যদিকে ঢাবির রাতে হলে হলে ছাত্রলীগের অত্যাচারও চলতে থাকে আন্দোলনকারীদের ওপরে। এক হলে ছাত্রলীগের সভাপতি নিজেই রগ কেটে দেয় এক ছাত্রীর। খবর ছড়িয়ে গেলে সারা বিশ্ববিদ্যালয় ফুঁসে উঠে। সেই ছাত্রলীগ সভানেত্রীকে জুতার মালা পড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেয় সাধারন শিক্ষার্থীরা।
এরি মাঝখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফোন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের নেতা এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) সভাপতি অধ্যাপক মামুনকে বলেন, সাদা দল যেনো ছাত্রদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দেয়। তারেক রহমানের এই টেলিকথপোকথন যথরীতি অন্যায়ভাবে রেকর্ড করে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা। সেটার রেকর্ড শোনানো হয় শেখ হাসিনাকে। অমনি এটা টনিকের মত কাজ করে- লাফ দিয়ে ওঠেন তিনি। এর আগে দুই রাত হাসিনা ঘুমায়নি ক্ষমতা হারানোর টেনশনে। এবার বুঝে গেলো- তারেক রহমানের নির্দেশনা মাঠে গেছে। আর যায় কোথায়? সাথে সাথে হাসিনা ছুটে যায় বিনাভোটের সংসদে। ঘোষণা করে- আমি কোটাই রাখব না। সব বাতিল। ছাত্ররা চাইল সংস্কার, আর সে করলো সব বাতিল। মানে, চাইলো পিস্তল, মাথা নষ্ট দিয়ে দিলো কামান। ব্রাভো!
কথা শেষ হয়নি। তারেক রহমানের এই টেলিফোনের অডিও টেপ গোয়েন্দা সংস্থা সরবরাহ করে বাংলা ট্রিবিউনকে। তারা সেটা অডিও এবং লিখিতভাবে পাবলিশ করে। পরে আরও আরও মিডিয়া এবং ইউটিউবে দেয়। আওয়ামী সকল পেইজ সেটা লাখ লাখ পাবলিশ করে বিনে খরচায়। কি বলেছেন তিনি? তারেক রহমান ফোনকলে চমৎকার কিছু কথা বলেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গণতান্ত্রিকভাবে সাপোর্ট দিতে বলেছেন। কোনো ষড়যন্ত্র বা সন্ত্রাসী কাজের জন্য বলেন নাই। একটা রাজনৈতিক দলের প্রধান এমন ফোন করবে, নির্দেশনা দিবে এটাই স্বাভাবিক। আরেক নেত্রীর মত ১০টা লাশ ফেলে দাও, হাতে চুড়ি পিন্দো – বলেন নাই। তবে এই ফোনকল রেকর্ড করে সরকার প্রথম অপরাধ করেছে। দ্বিতীয় অপরাধ করেছে লিক করে দিয়ে। সরকার হাতে নাতে প্রমান দিলো- এই দেশে নাগরিকদের কারও কোনো অধিকার নাই, গোপনীয়তা নাই। পৃথিবীর অন্য কোনো সভ্য দেশে হলে কেবল সরকার পতন হইত না, দলই বাতিল হয়ে যেত। আফসোস এটা বাংলাদেশ!
তারেক রহমানের এ ফোনকলের কথা সরকারী প্রচারযন্ত্রের কল্যাণে জেনে যায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা এবং দেশের মানুষ। বিশেষ করে ৭১ টিভির মিথিলা ফারজানা ভয়েস প্রচার করে আলোচনাও বসায়। অথচ তারেক রহমানের বক্তব্য নাকি হাসিনার জমানায় প্রচার করা যাবে না, এমন নির্দেশ তারা এনেছে কোর্ট থেকে। কিন্তু সে নির্দেশ তারা নিজেরাই না মেনে বেশি বেশি তারেক রহমানকে প্রচার করে। তারা তারেক রহমানের বক্তব্য নেগেটিভলি প্রচার করতে গিয়ে পাবলিকের কাজে প্রকাশ হয় তারেক রহমান শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন ও দাবীর সাথে আছেন। তিনি কিভাবে কথা বলেন, কি কি বলেন। এসব শুনে সাঁই সাঁই করে তাঁর রেটিং বেড়ে যায়। তারেক রহমান জানেন, তাঁর কথাবার্তা রেকর্ড করবে ঢাকার অবৈধ সরকার। তাউ কিনি চাইলে ভিন্ন মাধ্যমে কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তিনিও চাইছেন, কথা রেকর্ড করুক, প্রচার করুক সরকার। চলুক খেলা!
এই ঘটনার পরে এখন লোকজন বলাবলি করছে- এর নাম হলো ‘তারেক রহমান টনিক’! যেখানেই অবৈধ সরকার কথা শুনবে না, তারেক রহমানের নাম নাও – সব সমস্যার সমাধান! সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে দিবে শেখ বংশের শেষ স্বৈরাচার। কারন, সে তারেক রহমানকে চিনে- ডরায় যমের মতন।