“আমার নাম তারেক রহমান” ইতিহাসের মহাকাব্যে একটি টেলিফোন কল -ব্যারিস্টার সায়েম।

কোথায় জানি ছন্দ মিলে যায়। ৪৭ বছর আগে আরও একজন এমনিভাবে উচ্চারণ করেছিলেন, “আমি মেজর জিয়া”। প্রেক্ষাপট হয়তো ভিন্ন ছিলো, বলার ভাষায়ও হয়তো হবহু এক নয়, কিন্তু মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুগে যুগে বিপ্লবীদের কন্ঠস্বর এমনই সুরের মূর্চনা তোলে।

বহুলাকাঙ্ক্ষিত একটি যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবিতে পথে নেমেছিলো লক্ষ লক্ষ মেধাবী তরুণতরুণী যারা দেশের ভবিষ্যৎ। আগামীর বাংলাদেশকে তারাই নেতৃত্ব দেবে। ভাইবোনের মতো, সহযোদ্ধার মতো রাজপথে একে অপরের হাত ধরে তারা শ্লোগান দিচ্ছিলো, ‘মেধাবীদের মুক্তি চাই, কোটাপ্রথার সংস্কার চাই’। তাদের স্বপ্ন একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে মূলত মেধাবীরা। তারা বঞ্চনা থেকে মুক্তি চেয়েছিলো, অপদার্থ একটি জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার ভয়ংকর বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে চেয়েছিলো।

কিন্তু তাদের ও সতের কোটি মানুষের অতি সামান্য, অতি সাধারণ, অতি ন্যায্য এ দাবিটি বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো চিরচেনা সে অসুরগোষ্ঠী। অবৈধদের লালিতপালিত ছাত্রলীগ নামের দানবেরা গভীর রাতে হলের গেট বন্ধ করে পৈশাচিক তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত করতে লাগলো ফুলের মতো ছেলেমেয়েগুলোকে। বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা হলো রামদা, পিস্তল, লাঠিসোটাসজ্জিত একদল বিবেকহীন জন্তুকে।তারা রাস্তায় নির্বিচারে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমাদের সন্তানদের ওপর। ক্ষমতা জবরদখলকারীদের পেটোয়া পুলিশবাহিনীতো আছেই। কোটায় নিয়োগ পাওয়া নোংরা এক পুলিশ হুঙ্কার ছাড়লো, ‘একেবারে খায়া ফালামু।’

আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো মেধাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনার্মাণের লক্ষ্যে বইখাতা রেখে রাস্তায় নেমেছিলো। যে কাজ আমরা করতে ব্যর্থ হয়েছি এতোদিন, যে কাজটি আমাদের করার কথা ছিলো, কারণ আমরা তাদের অভিভাবক, সেটির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে আমাদের কচি ছেলেমেয়েগুলোর। তবুও আমরা তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসতে দ্বিধা করছিলাম। হায়েনাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করছিলোনা তথাকথিত সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও চেতনাভক্ষকরা। হাতেগোনা কয়েকজন বিবেকবান শিক্ষক ছাড়া বাকিরা সবাই হেঁটেছে চিরাচরিত অন্ধকারের পথে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি মিছিল করেছে ভিসির বাসভবনের সম্মান রক্ষার্থে! যখন আমাদের মেয়েটির রগ কেটে দেয় মানুষের মুখোশধারী এক ছাত্রলীগ নেত্রী, তখন খিস্তি আউড়ে এদেশের মহান সংসদকে অপবিত্র করে ফেলে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয় আমাদের নিষ্পাপ ছেলেমেয়েদের। ‘দেখে নেবে’ বলে হুমকি দেয়। কত বড় আস্পর্ধা!

ঠিক তখনই — যখন আর সবাই বিড়ালের মতো মিনমিন করছিলো, যখন লেজ গুটিয়ে ঘরে বসে ঝিম মারছিলো নাটমন্দিরের কুশীলবরা, যখন ন্যায্য দাবির ঘটনাকে আড়াল করতে আমাদের সংবাদমাধ্যম ভিসি সাহেবের ভগ্ন প্রাসাদের ইট গাঁথছিলো — ভেসে আসে সে কন্ঠ, ‘আমার নাম তারেক রহমান’।

কী নির্মোঘ কন্ঠ, কী দীপ্তিময় কথোপকথন! যেন কয়েক পংক্তি উজ্জীবনী মন্ত্র! যে দেশের মানুষের তিনি নেতা, যার ছোঁয়া পাওয়ার অপেক্ষায় কাটছে তাঁর প্রতিটি দিন, যে মাটির আলো, বাতাসের কাছে তিনি ঋণী — তার লাখো সন্তান দাবি আদায়ের জন্য আজ রাজপথে নেমেছে, আর তিনি চুপ করে থাকবেন?

তাহলে তিনি কেনো নেতা হবেন? তিনিতো আমার আর ওদের মতো লেপের নিচে শুয়ে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেই পারতেন। তিনি নেতা, সতের কোটি মানুষের বিশ্বস্ত হৃদয়, মানুষ তাঁর মুখপানেই চেয়ে থাকে জুলুম থেকে মুক্তি পেতে। তিনি তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি যৌক্তিক কোটাসংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানাতে কুন্ঠাবোধ করে, যারা কেবল সোচ্চার হতে জানে ভিসির বাসভবনের ক্ষত সারাতে, সে বিদ্যাপিঠেরই একজন শিক্ষককে তৃণমূলের নেতা তারেক রহমান ফোন করে বলেছেন, ‘দাবিটা জেনুইন। নেধাবীরা এর সাথে আছে, দেশের সাধারণ মানুষও আছে।’ তিনি সম্মানিত শিক্ষককে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদেরকে সাপোর্ট দিতে বলেছেন। স্যালুট মহান নেতা, এমনটাইতো চেয়েছিলো বাংলাদেশ!

কিন্তু নিন্দুকদের এত গাত্রদাহ কেনো? সোশ্যাল মিডিয়ায় কথোপকথনের অডিও ফাঁস করে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীবিদের একটি নান্দনিক ও ইতিবাচক ভূমিকাকে কেনো কালিমা লেপনের চেষ্টা চালাচ্ছে পুঁটি মাছের দল? কেনো বাংলাদেশের কিছু দালাল মিডিয়া বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎপর? কী তাদের উদ্দেশ্য?

দেখি, কী ছিলো তাঁর হৃদয়ছোঁয়া কথমালায়-

(১) তিনি সালাম জানালেন অপর প্রান্তের মানুষটিকে যিনি একজন শিক্ষক। এতে তাঁর স্বভাবজাত ভদ্রতা, নম্রতা ও বিনয়বোধ ফুটে উঠলো।

(২) তিনি ঘোরপ্যাঁচ বাদ দিয়ে সরাসরি আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের দাবীকে জেনুইন বললেন। চাইলে এসময়ে পাশ কাটিয়ে থাকতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি সত্যের পক্ষে দাঁড়ালেন। আর একবার তাঁর সততা ও নীর্ভিকতা প্রকাশ পেলো।

(৩) তিনি জানালেন, মেধাবীরাও এ আন্দোলনে যুক্ত আছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি তারেক রহমানের যে আগ্রহ, আন্তিরকতা ও ভালোবাসা সেটা বরাবরের মতো আবারও প্রমাণিত হলো।

(৪) তিনি দেশের মানুষের অনুভূতির কথাও আমলে নিয়েছেন। তারেক রহমান জনগণের নেতা, জনতার আশাআকাঙ্ক্ষাকেই তিনি বড় করে দেখবেন এটাই কাম্য। সেটা তিনি এবারও করে দেখালেন।

(৫) তিনি সম্মানিত শিক্ষকদের আন্দোলনরত ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন। একজন নেতার কাছে এটাইতো প্রত্যাশিত ছিলো। তিনিতো বৈঠা-লগি নিয়ে মাঠে নামতে বলেননি, একটার বদলে দশটা লাশ ফেলারও নির্দেশ দেননি। তিনি কেবল সকল বিবেকবান মানুষের মনের ইচ্ছেটুকুকে বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছেন।

(৬) আমরা তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলীও দেখতে পেলাম। তিনি শুধু পাশে দাঁড়াতে বলেই ক্ষান্ত হলেন না। শিষ্টাচারের গন্ডিতে থেকে অপর প্রান্তের মানুষটিকে তাঁকে আপডেট জানানোর নির্দেশও প্রদান করলেন।

তারেক রহমানের নাতিদীর্ঘ একটি কথোপকথন কি আবারে অবৈধদের ভিত নাড়িয়ে দিলো? জনগণের নেতা, কোটি মানুষের ভালোবাসার ধন তারেক রহমানের উচ্চারিত এক একটি শব্দ কি ওদের বুকে শেল হয়ে বিঁধে?

আমি নিশ্চিত, তারেক রহমানের কন্ঠধ্বনি কাঁপন লাগায়, মাতম তুলে কোটাধারী প্রধানমন্ত্রী ও তার আশ্রিতদের বুকে। তারা বেসামাল হয়ে যায়।


—ব্যারিস্টার আবু সায়েম
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা