কোটা সংস্কারের দাবিতে স্থগিত করা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও নেতৃবৃন্দকে পরবর্তীতে মামলার নামে কোনো রকম হয়রানি করা হলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আবারো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে এ হুমকি দেয়া হয়।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলকারীরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি। প্রত্যাহার নয়। যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মামলার নামে হয়রানি করা হয় তাহলে আবারো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।তিনি বলেন, পুলিশ ও ঢাবি প্রশাসন অন্যায়ভাবে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যে ৪টি অজ্ঞাতনামা মামলা দিয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। এই মামলার নামে হয়রানি করলে আমরা আবারো রাজপথে নামব।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনে পরিণত করা হোক। আইনে পরিণত করে তা প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক। পুলিশ বাহিনী যারা হামলা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। উপাচার্যের বাসভবনে যারা হামলা করেছে, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা হোক। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার দাবিতে রোববার দুপুরে পূর্বঘোঘিত গণপদযাত্রা শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৮টার দিকে তাদের ওপর পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী আহত হন। এছাড়া শতাধিক আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
সোমবার বিকালে সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে চাকরিতে বর্তমান কোটা পদ্ধতি ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষায়’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসা কমিটি।
কিন্তু ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকারের অস্পষ্ট আশ্বাসে’ আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।অর্থমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের পর কোটা সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আগের মতো আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে মঙ্গলবার ফের ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা আসতেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ফের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাত ৯টা পর্যন্ত মিছিল আর স্লোগানে তারা গোটা ক্যাম্পাস মুখরিত করে রাখেন।বুধবারও চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকলে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে কোটা প্রথা বাতিলের ঘোষণা দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। তখনই তারা জানান, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
Poriborton