ব্রেকিং:সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা পদ্ধতি থাকবে না

সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। নিচে তাদের সেই স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:

বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যা বলেন তা করেন। বিগত দিনে কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আজ সকালে আমরা (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ)

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা পদ্ধতি থাকবে না’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে ছাত্রসমাজ সাধুবাদ জানায়। অশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

 

এদিকে, ফেসবুকের এই স্ট্যাটাসের বিষয়ে কথা হয় ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের সঙ্গে। তিনি স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ (বুধবার) বিকালে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন।

/এসএম

পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী কিংবা প্রতিবন্ধিদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি চাকরিতে কিছু সংরক্ষিত আসন থাকে, এটাকেই বলা হয় কোটাপ্রথা। প্রতিবন্ধি ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চাকরিতে কোটা আরোপ করা হয় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটায় বাংলাদেশে কোনো মেয়াদ রাখা হয়নি। দেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা  শতকরা ৩০ ভাগ, নারী কোটা ১০ ভাড়, জেলা কোটা ১০ ভাগ, উপজাতি কোটা ভাগ, প্রতিবন্ধী কোটা ১ ভাগ নিয়ে মোট ৫৬ ভাগ সরকারি চাকরি হয় কোটার মাধ্যমে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ পান মাত্র ৪৪ ভাগ চাকরি প্রার্থী।

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা নিয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। যোগ্যতার মানদণ্ডে উপরের সারিতে থেকেও কোটার মারপ্যাঁচে ছিটকে পড়ছেন অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী, সেখানে স্থান করে নিচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা- এই আলোচনা অনেকদিন ধরেই চলছে। কোটাপদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে গাড়ে ওঠেছে তীব্র আন্দোলন। এ অবস্থায়  বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো কোটাপদ্ধতি কত শতাংশ ও কিভাবে সেটি প্রয়োগ হয়, চলুন চোখ রাখা যাক

ভারত
প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে মোট ৪ ধরণের কোটা রয়েছে; উপজাতি কোটা, বিভিন্ন জাত ভিত্তিক কোটা, অন্যান্য অনগ্রসরদের জন্য কোটা এবং বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু কোটা। জনসংখ্যা অনুপাতে ভারতে সরকারি চাকরির যথাক্রমে ১৫ ও ৭ দশমিক ৫ ভাগ পদ দলিত শ্রেণী ও আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী সরকারি নিয়োগে কোটার সমষ্টি কোনোক্রমেই মোট শূন্যপদের ৫০ ভাগের বেশি হতে পারবে না। ভারতের এই কোটাব্যবস্থা কোনো চিরস্থায়ী পদ্ধতিও নয়।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে যে জাতীয় অনগ্রসর জনগোষ্ঠী কমিশন (National Commission for Backward Classes) গঠন ক রা হয়, তার অন্যতম দায়িত্বই হচ্ছে কোটাব্যবস্থায় নানা অসংগতি পর্যালোচনা করে এটির ক্রমাগত সংস্কার করা। কমিশন ইতিমধ্যে সাংবিধানিক পদাধিকারী, আমলা, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ সচ্ছল শ্রেণীর সন্তানদের ‘অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠী’ হিসেবে বিবেচনার অযোগ্য ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি কোটা প্রথায় ওই দেশে একটি পরিবারের মাত্র একজনই  সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।


পাকিস্তান
পাকিস্তানের কোটা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা উপর নির্ভর করে সেই অনুপাতে কোটা সুবিধা প্রদান করা হয় পাকিস্তানে। পাকিস্তানের কোটা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যৌক্তিক পরিমাণ মানুষ যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে সমগ্র দেশ থেকে মাত্র ৭.৫ শতাংশ চাকরি মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞাতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। বাকি ৯২.৫ শতাংশ চাকরি বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য সংরক্ষিত। সরকারি চাকরি সবচেয়ে বেশি কোটা বরাদ্ধ রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের জন্য। পাঞ্জাবের ৫০ শতাংশ, সিন্ধ প্রদেশের জন্য ১৯ শতাংশ, খাইবার-পাখতুনওয়ার জন্য রয়েছে ১১.৫ শতাংশ, বালুচিস্তানের জন্য ৬ শতাংশ আর  গিলটের জন্য রয়েছে ৪% আর আজাদ কাশ্মীরের জন্য ২ শতাংশ।

মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ৩ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৫০.১ শতাংশ মালয়, ২২.৬ শতাংশ চাইনিজ, ৬.৭শতাংশ ভারতীয়,১১.৮ শতাংশ স্বদেশজাত এবং ৮.৮ শতাংশ অন্যান্য। ধর্মীয় দিক থেকে মোট ৬০.১ শতাংশ মুসলিম, ১৯.৮ শতাংশ বৌদ্ধ, ৯.২ শতাংশ খ্রিস্টান, ৬.২শতাংশ হিন্দু এবং ৩.৪ শতাংশ অন্যান্য। মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতিগত কোটার মোট ৫৫ শতাংশ সুবিধা পেয়ে থাকে মালয় জনগোষ্ঠী।উচ্চশিক্ষা, চাকরি, স্বল্পমূল্যে বাসস্থানসহ সকল ক্ষেত্রে ৬০শতাংশ ভোগ করে মালয় জনগোষ্ঠী বাকি ৪০% সুবিধা ভোগ করে অন্যান্য জনগোষ্ঠী। তবে চাকরির ক্ষেত্রে গোষ্ঠীগত সুবিধা মিললেও মেধার পরিচয় দিয়েই প্রবেশ করতে হয়। সরকারি অর্থায়নে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত সেখানে মোট সিটের মোট ১৯ শতাংশ পায় চাইনিজরা এবং ৪ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভুত জনগোষ্ঠী। বাদ বাকি সকল সিট পায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয় জনগোষ্ঠী, যারা ভূমিপুত্র নামেও পরিচিত।

চীন
চীনে নারীদের জন্য একসময় ২০ ভাগ কোটা ছিল। তবে নব্বইয়ে দশকে ওই কোটা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।  তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য দেশটিতে এখনও ১.৫ ভাগ চাকরি সংরক্ষণ করা হয়।

কানাডা
কানাডাতেও চাকরিতে নিয়োগে কোটা প্রথা রয়েছে. তবে তা প্রয়োগ হয় প্রকৃত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীদের জন্য। কানাডায় মূলত চারটি শ্রেণীর জন্য কোটা প্রযোজ্য। চারটি শ্রেণী হচ্ছে নারী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু। চারটি শ্রেণীর মোট কত শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা সুস্পষ্ট ভাবে কানাডার এমপ্লয়মেন্ট ইকুইটি অ্যাক্টে নির্দিষ্ট ভাবে বলা না হলেও সেটা কখনোই মেধার চেয়ে বেশি অর্থাৎ শতকরা ৫০ভাগ নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্তদেশগুলো ২০১২ সালে এক পরিকল্পনা গ্রহণ করে যার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে নন-এক্সিকিউটিভ চাকরিগুলোতে যেন ৪০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এছাড়া শারীরিকভাবে যারা অক্ষম তাদের জন্য কোটায় সংরক্ষণ হার শতকরা ৪ ভাগ। বাকি ৫৬ ভাগ নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে কেবল শতকরা ৮ ভাগ চাকরি প্রতিবন্ধিদের জন্য সংক্ষিত থাকে। দেশটির শ্রম বিভাগ কোটার পরিবর্তে এটাতে ‌’অক্ষমতার মানদণ্ড’  হিসাবে উল্লেখ করেছে।১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র কোটা সিস্টেমটি পরিত্যাগ করে আইন পরিবর্তনের পরিবর্তে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলকভাবে অবৈধ বলে আইন প্রণয়নের পরিবর্তে অগ্রাধিকার প্রদান করে।

সরকারি চাকরিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ কোটার ভিত্তিতে সংরক্ষণ করার নজির পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই।

pbd.new