‘আপনার মেয়ের জামাই ফেসবুকে এগুলো কী করছে’ শিক্ষামন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী

কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে আবু বকর সিদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে- সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে রবিবার রাতে একটি স্ট্যাটাস দেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। ইমরানের এমন ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার মেয়ের জামাই ফেসবুকে এগুলো কী করছে। কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে। এ সময় সভায় উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরাও শিক্ষামন্ত্রীর মেয়ের জামাই ইমরান এইচ সরকারের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক ছিল বিয়ের পর ৩ মাস। এখন ওদের মধ্যে সম্পর্ক নেই।
চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরাতে মন্ত্রিপরিষদ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনি কোটাব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত কোটা পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আবু বকর সিদ্দিক নামে এক ছাত্র পুলিশি হামলা নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনার সমর্থনে ইমরান এইচ সরকার তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, কোটা নিয়ে আসলে তো কোনো সমস্যা নেই। এখন যে কোটাব্যবস্থা এক্সিসটিং (বহাল) রয়েছে সেখানে মেধাকোটা ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষেত্রবিশেষে জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ।

তিনি বলেন মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য কোটাগুলো যদি পূরণ করা সম্ভব না হয় তবে তা মেধাতালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। সেটা পূরণ করা হয়েছে।৩৩তম বিসিএসে মেধাকোটায় পূর্ণ হয়েছে ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ মেধাতালিকা থেকে এসেছে। ৩৬তম বিসিএসে ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ মেধাকোটায় নিয়োগ পেয়েছেন বলেও জানান শফিউল আলম।তিনি বলেন, কোটার মাধ্যমে মেধা অবহেলিত হয়নি। কোটার ক্ষেত্রেও যারা মেধাতালিকায় ভালো তারা আসছেন। এমন না যে মেধাতালিকায় যারা আছেন তারা অবহেলিত আছেন, পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। কোটার দ্বারা কারও মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

বিভিন্ন কোটায় প্রার্থী পাওয়া যায় না, তা হলে কোটা সংস্কারে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেটা মোডিফাই করা হয়েছে অর্থাৎ পদ পাওয়া না গেলে মেধাতালিকার শীর্ষে যারা আছেন তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে। এটাই তো একটা সংস্কার। কোটা হচ্ছে একটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এর মাধ্যমে অনগ্রসর যারা আছেন তাদের সামনে আনা হয়।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যা আলোচনা হয়েছে তা জানিয়েছি তো। কোটার কারণে যারা মেধাবী তারা খুব বেশি বঞ্চিত হয়নি। আপনাদের তো তিনটা বিসিএসের রেজাল্ট দিয়ে দিলাম।কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে তা পূরণের সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদের ক্ষেত্রে কোনো কোটা পূরণ না হলে অন্যান্য কোটা দিয়ে পূরণ করতে হবে। এ জন্য আন্দোলন হচ্ছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। কোটা সংস্কারের বিষয়ে আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, না আজকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে। অনির্ধারিত আলোচনা তো এ রকম কিছু হয়ই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হলো এটার স্টেক হোল্ডার। তারা এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। দেখে অবহিত করবে।
সূত্র: আমাদের সময়