আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা, উত্তাল ঢাবি সহ সারাদেশ
কোটা সংস্কারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আগের মতো আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এ ঘোষণা দেয় শুরু থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া কমিটি। বাজেটের আগে কোটা সংস্কার নয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন বক্তব্য এবং ‘আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা’ বলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার না করায় এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, আন্দোলন আগের মতোই চলবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সড়ক অবরোধ এবং সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে।
কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা আসতেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ফের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। মিছিল আর স্লোগানে তারা গোটা ক্যাম্পাস মুখরিত করে রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বৈঠকে সরকারের প্রতিনিধি দলের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আটক আন্দোলনকারীদের এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও রাখা হয়নি।
এর আগে সোমবার সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে কোটা সংস্কার পদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাসে ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা। তবে ‘অস্পষ্ট আশ্বাস’ মেনে না নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকে একাংশ। আজকের ঘোষণার মধ্যদিয়ে এই বিভক্তির অবসান ঘটল।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার দাবিতে রোববার দুপুরে পূর্বঘোঘিত গণপদযাত্রা শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৮টার দিকে তাদের ওপর পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী আহত হন। এছাড়া শতাধিক আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়।
এএম-ওএইচ/এমএসআই
কোটা সংস্কারে এবার রাস্তায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থীরা, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্থ সাউথ (এনএসইউ) ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশল ইউনিভারসিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থীরা এবং রামপুরা ব্রিজের পূর্ব পাশে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভারসিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে কোটা সংস্কারের দাবি সম্বলিত পোস্টার হাতে নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রাস্তায় তীব্র যাটজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ইস্টওয়েস্ট ইউনিভারসিটির রেজিস্টার মুশহিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সোমবার কোটা সংস্কারের দাবিতে কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসের গেটের সামনে অবস্থা করছিল। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামপুরা ব্রিজের ওপর তারা অবস্থান করছে।’
ড্যাফোডিল ইউনিভারসিটির গণসংযোগ কর্মকর্তা হাবিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে জড়ো হয়। এর কিছুক্ষণ পর তারা মিরপুর রাস্তায় অবস্থান নেয়।’
ডিএমপির তেজগাঁও জোনের এসি আবু তৈয়ব মো আরিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ভিসির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি।’
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি গোপাল গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল। আমরা তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। তারা ভেতেরেই আন্দোলন করছেন।’
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সড়কের এক পাশ বন্ধ করে রেখেছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি।’
ভাটার থানার ওসি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আধা ঘণ্টা আগে সড়কের দুই পাশ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছি তাদের ক্যাম্পাসে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।’
প্রসঙ্গত, রবিবার দুপুর ২টায় ঢাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের পদযাত্রা শুরু হয়। পরে রাজু ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে আসে। বিকাল ৩টা থেকে সেখানেই অবস্থান নেন। এ সময় শাহবাগের আশপাশের সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থান ধরে রাখলে রাত পৌনে ৮টার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় কয়েকজনকে আটকও করে পুলিশ। এরপরই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একটি দল আলোচনায় বসে। তিনি তাদের দাবি যাচাই-বাছাই করার জন্য ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন রাখতে বলেন। তবে আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করেই তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন