কোটা পদ্ধতি সংস্কারে দেশব্যাপী ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি একমত পোষণ করে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেন, অবশ্যই ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া উচিত। তাদের ন্যায্য অধিকার দেয়া উচিত।সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জে জেলা বিএনপি আয়োজিত কর্মী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।এ সময় তিনি বলেন, আদালতকে সরকার নিজের কব্জায় রেখেছে। তারা যা বলে আদালত তাই করে। একমাত্র রাজপথের আন্দোলন ছাড়া শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে কোনো স্বৈরাচারের পতন হয়নি। আজকে নির্বাচন কমিশনও এ সরকারের আজ্ঞাবহ।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সেনা মোতয়েনের কথা বললেও সরকার বলে এটি কমিশনের এখতিয়ারে নেই।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খালিকুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার শিপা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহীন, সাধারণ সম্পাদক হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউছ ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
আন্দোলনে সরকারের তিন সন্দেহ, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন এরা কারা?
সময়ের কণ্ঠস্বর- সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের ভেতর সন্দেহ বিরাজ করছে। সরকার প্রধানও এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। কোটা সংস্কারের এ আন্দোলন মূলত তিনটি বিষয়ে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। সরকার ও আওয়ামী লীগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সন্দেহগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রথমত বিএনপি-জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রের বেশ ধরে এই আন্দোলনে মিলিত হয়ে উস্কানি দিচ্ছে আন্দোলনে—যাতে বেকায়দায় ফেলা যায় সরকারকে। দ্বিতীয়ত গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগে যাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তারাও এই আন্দোলনে জড়িয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। তৃতীয়ত ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলন বানচাল করতে চায় এমন একটি অংশও চক্রান্তে নেমেছে।
এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রলীগের মুষ্টিমেয় একটি অংশ বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাবি, এ ধরনের অস্থিরতা থাকলে ছাত্রলীগের একটি অংশ মনে করছে সম্মেলন ঠেকানো সম্ভব হবে। ফলে তারাও কিছু শিক্ষার্থীকে মাঠে নামিয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসাবে দেখছেন। তিনি গত রবিবার রাতে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলের অপর নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা এরা কারা? এদের পারিবারিক পরিচয় কী? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী পরিবারের কোনও সন্তান এই আন্দোলনে জড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের ৫ দফা দাবিতে রোববার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে রাজপথ অবরোধের আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে রাতভর সংঘাতের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আবারও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একই অবস্থা দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা তাদের দাবি নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছেন। তবে এখনো তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি সরকার।
‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতে চায়। আমরা অধীর আগ্রহে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই, আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত হয়ে আছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রদের সাথে বেলা ১১টায় আলোচনায় বসবেন বলে আশ্বাস দিলেও দুপুর ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।
আরআই