সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে আটক সব আন্দোলনকারীকে মুক্তি দেওয়া না হলে সারা দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এই আন্দোলনে যুক্ত হবেন।আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা এ কথা বলেন।
সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলতে চাই, যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা আপনার ভাই বা সন্তানের মতো। তাঁরা কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তাঁরা অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন করছেন। তাই আজ দুপুরের মধ্যেই আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেন। তা না হলে আন্দোলনে দাবানল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
এ সময় সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
রাতভর ছাত্রীদের স্লোগান, পুলিশের ধাওয়া
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হলগুলোতে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে হল থেকে বেরিয়ে শত শত ছাত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে রাতভর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করেন। স্লোগান দেন। বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের ধাওয়ার মধ্যে পড়েন আন্দোলনকারী ছাত্রীরা।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেন। ১২টার দিকে রোকেয়া হলের গেটে ছাত্রীরা অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সুফিয়া কামাল ও কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরাও বেরিয়ে আসেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে টিএসসি এলাকায় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁদের সঙ্গে অন্যান্য হলের ছাত্রীরাও যোগ দেন।
রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের ধাওয়ার মধ্যে পড়েন আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। একাংশ রোকেয়া হলের ভেতরে, আরেক অংশ টিএসসিতে ও কার্জন হলের দিকে চলে যায়। এ সময় কয়েকজন পড়ে গিয়ে আহত হন। অনেকে কয়েক জায়গায় আটকা পড়েন। হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে কয়েকজন ছাত্রী।
রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক যান। তাঁরা ছাত্রীদের নিরাপদে নিয়ে যাবেন বলে জানান। আন্দোলনরত ছাত্রীরা সেখানেই বসে পড়েন। তাঁরা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোটা বৈষম্য চাই না’, ‘কোটাধারী সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে চাই না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে আহত ছাত্রীদের পুলিশের গাড়িতে করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
সকাল ছয়টার দিকে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকায় শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দিনভর শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলে। রাতে শাহবাগ থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের তুলে দিতে চাইলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের গরম পানি ছিটিয়ে, লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চলে।
Prothom alo