ঐক্যবদ্ধ বিএনপি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার লক্ষ্যে পৌঁছবেই

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমন বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। অবরুদ্ধ মানবাধিকার যে আজকে ভূলুণ্ঠিত এই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’তিনি বলেন, ‘এই উদ্দেশ্যেই আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করবো। আমরা একবিন্দুও পিছপা হবো না। সামনে এগিয়ে যাবো, হয় সফলতা না হয় আমাদের মৃত্যু, এর বাইরে আমাদের কোনো রাস্তা নেই। আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।’বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।’

আমান বলেন, ‘আমাদের মাননীয় মহাসচিব অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থ থাকার পর আজকে আপনাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। কথা বলেছেন। জেলখানায় আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছিলেন, আমিও ছিলাম এবং আরও অনেকে জেলে আছে। অনেকে মুক্তি পেয়েছে।’তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আর গণতন্ত্রের মুক্তি একসূত্রে গাঁথা। অতএব গণতন্ত্র মুক্ত হতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত হতে হবে।’এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জাম সেলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির ঐক্যবদ্ধ থাকার চেষ্টা

খালেদা জিয়ার কারাবন্দির আগে বিএনপিকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল। এসব গুঞ্জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারেক রহমানের নেতৃত্ব কেউ মানবে না, বিএনপি ভেঙে যাবে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর সব গুঞ্জন গুজবে রূপ নেয়। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। এ অবস্থায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। তারেক রহমানের গাইড লাইন অনুসারে দলের নেতাকর্মীদের এ বন্ধন ধরে রাখার মূল কাজটি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। নিয়মিত এসব নেতা কোথাও না কোথাও বৈঠকে বসছেন। বড় পরিসরে আলোচনা করতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আগামী রবিবার স্থায়ী কমিটির নেতাদের বাইরেও ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করতে বৈঠক ডেকেছেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব তথ্য জানা যায়।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে বলেন, দেশবাসীসহ সবাইকে বলব হতাশ হবেন না। আর একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, আমাদের আন্তরিকতায় কোনো সন্দেহ করবেন না। আমি অনেককে দেখেছি বিভিন্ন নেতা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেন। এটা ঠিক নয়। আমাদের নেত্রী জেলে যাওয়ার পর আমরা প্রমাণ করেছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, স্থায়ী কমিটির আমরা যারা সুস্থ এবং জেলাখানার বাইরে আছি তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। কোনো কোনো বিষয়ে আমরা আলোচনা করে সুপারিশ করি। আমাদের সুপারিশমালা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। এটাই হচ্ছে আমাদের ঐক্যের মূল ভিত্তি। আমাদের এই ঐক্য ধরে রাখতে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেও আমরা প্রস্তুত।’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, যে যাই বলুক আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সরকার বন্দি করার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হচ্ছে। একই সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে। আমার যা মনে হয়েছে, এ সময় বিএনপিতে যে ঐক্য তা আগে কখনো দেখিনি। যে জেলায় একাধিক গ্রুপ ছিল তারাও এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে এক এবং ঐক্যবদ্ধ।দলের নেতারা জানান, সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সমালোচনা ও সন্দেহ করা যেন কারো কারো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছেন, তিনি দল ভাঙার ষড়যন্ত্রে আছেন; ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে বিশ্বাস করতে নাই, কখন কী করে বসেনÑ সর্বশেষ সন্দেহের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে মির্জা আব্বাসের নাম; গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পর্ক থাকলেও তারেক রহমানের সম্পর্ক খুব খারাপÑ এ সব অপপ্রচার করে কেউ কেউ নানাভাবে সুবিধা নিতে চায়। সে ক্ষেত্রে আব্বাস বা গয়েশ্বর হচ্ছেন জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকেই বোঝা যায় এসব উদ্দেশ্যমূলক। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ ছিল আর খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর সেই ঐক্য আরও দৃঢ় হয়েছে। খালেদা জিয়াও জেলে যাওয়ার আগে মির্জা ফখরুলসহ স্থায়ী কমিটির নেতাদের ওপর আস্থা রেখেই দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। মওদুদ আহমদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া বা জিয়া পরিবারের সঙ্গে যদি বেইমানি করতেন বা করবেন, তা হলে তার গুলশানের বাড়ি হারাতে হতো না।


জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের কোনো বিভেদ নেই। আসলে সরকার নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আমাদের ঐক্য ভাঙতে চাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের ঐক্য ভেঙে দুর্বল করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়া।বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু আমাদের সময়কে বলেন, কতজনে কত স্বপ্ন দেখে। ওয়ান-ইলেভেনেও বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। জিয়া পরিবারবিহীন বিএনপিরও স্বপ্ন দেখেছে, লাভ হয়নি। ষড়যন্ত্র করে তাৎক্ষণিক তৃপ্তি পাওয়া যায়, কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা কেউ সুখে থাকে না। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাবন্দি করা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ বিএনপি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার লক্ষ্যে পৌঁছবেই।বিএনপি নেতারা মনে করেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে মানুষ এ সরকারের ওপর পুরোপুরি বিরক্ত। সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। জনগণের চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজটি তারা করছেন। এ জন্য বিএনপি নেতারা একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে কাজ করছেন।সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সব মানুষকে, জাতিকে এক জায়গা, একটা প্লাটফর্মে আনার চেষ্টা করছি। সে জন্য গণসম্পৃক্ততা বাড়িয়েছি। বিভাগীয় শহরগুলোয় জনসভা শুরু করেছি। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই হবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে। মুক্ত নেত্রী আমাদের নির্বাচনের ক্যাম্পিং করবেন, নির্দেশনা দেবেন। এ নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।

Amardesh247.com