খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আগে নির্বাচনসহ অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপি ভাবছে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেত্রীর মুক্তিই দলের প্রধান ও একমাত্র শর্ত বলে জানান তিনি।শুক্রবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘স্বাধীনতা হলে’ এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে দলটি।বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার মুক্তি একমাত্র দাবি, একমাত্র শর্ত। আগে তাকে মুক্ত করতে হবে। তারপর অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগে কিছু নয়।’
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে বন্দুকই ক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে বন্দুকের নল থেকে ক্ষমতার উৎস আসছে। যাদের হাতে বন্দুক তাদের হাতেই ক্ষমতা। বন্দুক কাদের হাতে? বন্দুক তাদের হাতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। আমরা নিরস্ত্র অসহায় নাগরিক। এই বিষয়টি আজ বুঝতে হবে। মানুষকে জাগতে হবে।সরকার ক্ষমতায় থাকতে সুন্দরবন ধ্বংস করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুন্দরবন এমন একটা প্রাকৃতিক সম্পদ যা দেশকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে। বিশ্ব ঐতিহ্যের এই বনকে সরকার ধ্বংস করে ফেলার জন্য এরই মধ্যে ১৯০টি শিল্প কারখানা করার অনুমতি দিয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীসহ সবার মত এই ধরনের বনের কাছে শিল্প কারখানা হলে যে ধরনের কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে আসে তাতে বন ধ্বংস হয়ে যাবে।’
‘এরই মধ্যে সরকার সবার বিরোধিতাকে তোয়াক্কা না করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্ত্র করছে। এসবের কারণ এই সরকারের এই দেশের প্রতি কোনো মূল্য নেই। তার লক্ষ্য একটাই তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। তার জন্য সে সবকিছু করতে প্রস্তুত। সেজন্য সেখানে যারা শিল্পকারখানা করতে চায়, তাদের খুশি করতে দেশ বিক্রি করে দিতেও বাধে না’, বলেন বিএনপির এই নেতা।দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না দাবি করে তিনি বলেন, এর প্রমাণ দুদকের একটি ভুয়া মামলায় সাজানো মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতাদের নামে অর্থ লেনেদেনের মিথ্যা তদন্তে নেমেছে। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা কিছু করতে পারছে না।দুর্নীতি করতে দেশের বড় বড় প্রজেক্টগুলো সরকার ‘নিজেদের লোক’কে দিচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের স্বত্ব দুজন মানুষের কাছে দেয়া হয়েছে। যা কিছুই করবেন তাদের কাছ থেকে করতে হবে। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্রান্স থেকে এটা বানানো হয়েছে। এটার স্বত্ব সরকারের কাছের মানুষকে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বড় বড় সব কন্ট্রাক্ট নিজেদের লোকতে দেয়া হয়েছে।’
সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সমস্যায় পড়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা বড় ধরনের এক অশনিসংকেত। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে কোনো অগ্রগতি নেই। একটা লোককেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। বাংলাদেশ আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দিয়েছিলো, সেখান থেকে মাত্র ৬’শকে তারা যোগ্য মনে করে ফেরত নেয়ার। বাকিদের তারা ফেরত যাওয়ার যোগ্যই মনে করে না। কথাই বলে না। এই হচ্ছে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য।’
জাগপার প্রয়াত নেতা শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। তার দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের জন্য ভালোবাসা, স্পষ্ট কথা বলা আজকাল খুব একটা দেখা যায় না।জাগপার সভাপতি অধ্যাপিকা রেহেনা প্রধানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখে দলটির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, এলডিপির মহাসচিবের ড. রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাগপার সিনিয়র সহ সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ।
Reportbd24.com