জনসমর্থন হারাচ্ছে আওয়ামী লীগ: গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কতা !!

ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের চোরাচালান-কেনাবেচার সঙ্গে বিভিন্ন স্ত্মরের মানুষ জড়িত থাকলেও এদের মূল হোতা হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির অসাধু সদস্য ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জড়িত..!মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতায় দিনে দিনে জনসমর্থন হারাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে যেসব ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীর ওপর মাদকের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তারা সরাসরি ক্ষমতাসীন এ দলটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা আগামী দিনের ভোটের রাজনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
এমনকি এ কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরা ডুবিরও শঙ্কা রয়েছে। মাঠপর্যায়ের তথ্য অনুসন্ধানে দায়িত্বশীল একটি গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করে বিশেষ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।


পাশাপাশি মাদকের জোয়ারে আইনশৃঙ্খলার কতটা অবনতি ঘটেছে সে চিত্রও গোয়েন্দারা ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্যের চোরাচালান-কেনাবেচার সঙ্গে বিভিন্ন স্ত্মরের মানুষ জড়িত থাকলেও এদের মূল হোতা হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির অসাধু সদস্য ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জড়িত। এর বাইরে বেশকিছু চক্র সক্রিয় থাকলেও তারাও মূলত এদের হাতেই নিয়ন্ত্রিত। যা স্থানীয় পর্যায়ে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। এতে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের ওপর সাধারণ মানুষ দ্রম্নত আস্থা হারাচ্ছে।

গোয়েন্দা ওই প্রতিবেদনে মাদকের ভয়াবহ বিস্ত্মার এবং তা রোধে প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরে বলা হয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল রয়েছে- এমন বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক ভাওতাবাজি’ বলে অনেকে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যে ক্ষোভ বিস্ত্মার করছে তা যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে বলেও গোয়েন্দা ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় কিভাবে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য অবাধে বেচাকেনা হচ্ছে তারও খ-চিত্র প্রতিবেদনে আসছে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মাদক নিয়ন্ত্রণে সংশিস্নষ্ট প্রশাসনের ব্যর্থতার ১৪টি কারণ গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে ‘রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে’ প্রধান কারণ হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। এ পয়েন্টের ব্যাখ্যায় জানানো হয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাঠপর্যায়ের মাদকদ্রব্য কর্মকর্তারা তাদের বিরম্নদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বরং তাদের মাদকের বড় চালান আটক করতে গিয়ে সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তাদের উল্টো নাজেহাল হতে হচ্ছে। অবৈধ নেশাজাতীয় দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তিকে মাদকসংশিস্নষ্ট পলিটিক্যাল গডফাদাররা দলীয় কর্মী পরিচয় দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছেন।

গোয়েন্দারা জানান, এ সুযোগ কাজে লাগাতে পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীরাও এখন রাতারাতি ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হয়ে উঠছে। অনেকে তাদের মাদক আস্ত্মানার সামনে দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ডও লাগিয়েছে। এসব মাদক ব্যবসায়ী তাদের সহযোগীদের নিয়ে দলেবলে ক্ষমতাসীন দলের মিছিল-মিটিং ও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যোগ দিচ্ছে। সব জেনেশুনেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলগুলোতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে ছাত্রলীগের জোরালো সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পরও দলের পক্ষ থেকে তাদের বিরম্নদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের মাঝে সরকারের প্রতি ঘোর অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থী ভয়াবহ মাদক নেশায় জড়িয়ে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে তুলেছে, তাদের ঘনিষ্ঠজনরা সরকারের এ নিষ্ক্রিয়তায় চাপা ক্ষোভে ফুঁসছে- জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।


অন্যদিকে পুলিশের ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে দেশে মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না বলে খোদ এ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা গত ১৮ ফেব্রম্নয়ারি অপরাধবিষয়ক ত্রৈমাসিক সভায় প্রকাশ্য অভিযোগ তোলার পরও সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় দেশের সচেতন মানুষ এখন হতাশ। মাদক নিয়ন্ত্রণে যারা মুখ্য ভূমিকা রাখবে, সে-ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়লে দেশকে মাদকমুক্ত করা পুরোপুরি অসম্ভব বলে তারা প্রকাশ্যে খেদ্যোক্তি করেছেন।
এদিকে মাদকফাঁদে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক জনসমর্থন হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ দলের প্রথম সারির নেতারাও। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে বলেন, ‘আমাদের এখন দুটি উদ্বেগের বিষয়। একটি হলো, একশ্রেণির দুর্বৃত্ত প্রশ্ন ফাঁস করে চলেছে। আরেকটি হচ্ছে গ্রামে গ্রামে মাদক ছড়িয়ে যাওয়া।’

এর আগে ১৯ জানুয়ারি জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ইয়াবা পৌঁছে গেছে। এসব সেবনে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অচিরেই যদি ইয়াবা রোধ করা না যায়, তা হলে একটা প্রজন্ম গ্যাপ তৈরি হবে।’

তবে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এ নিয়ে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি এ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশের পরও মাদক ব্যবসার বিস্ত্মার সামান্য কমেনি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও জোরালো হয়েছে। আর এ অপতৎপরতায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সম্পৃক্ততার কথাই বেশি শোনা যাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

এদিকে এ নিয়ে খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, সারা দেশেই মাদকের বিস্ত্মার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। তার এলাকাতেও অবাধে এ বাণিজ্য চলছে। অথচ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও তিনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। যা তার একমাত্র ব্যর্থতা বলে স্বীকার করে ক্ষমতাসীন দলের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের পলিসি ঠিক না হলে একজন এমপির পক্ষে এর ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব নয়।’


তার মতো একই সুরে নিজের অপারগতা ও ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের ভাষ্য, দলের প্রভাবশালীরা মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকলে সাধারণ জনগণ কেন, পুলিশের পক্ষেও তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে সরকারকেই দলীয় দুষ্ট চক্রের লাগাম আগে টেনে ধরতে হবে।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর এ ধরনের অপারগতার মুখে মাদকব্যবসা রোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ হয়েছে সাধারণ জনতা। বিশেষ করে মাদকের করাল গ্রাসে সর্বশান্ত্ম হওয়া পরিবারগুলো এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা মাদক রোধে সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশের পাশাপাশি এ বাণিজ্যে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার কথা জনে জনে প্রচার করছে। যা ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য ফাঁদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।


অন্যদিকে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য পরিবহন, বিতরণ ও সেবনের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশের সব জেলার ডিসি এসপিকে অবহিত করার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সীমান্ত্মবর্তী জেলা কক্সবাজার ও বান্দরবানে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদকের অবৈধ প্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিলেও তা এখনো নথিপত্রেই গ-িবদ্ধ রয়েছে। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনার পর মাদক বিস্ত্মার রোধে কোনো বিশেষ তৎপরতা কারো চোখে পড়েনি।

যদিও পিবিআইএর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দাবি, এ ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে বেড়ায় ক্ষেত খেলে যে অবস্থা দাঁড়ায় তাদেরও সে দশা বলে মন্ত্মব্য করেন তিনি। কক্সবাজার জোনে দায়িত্বরত পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যার মদদে উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজারসহ গোটা দেশ ইয়াবায় সয়লাব তাকে সঙ্গে নিয়ে দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা পথসভা-জনসভা করেন। সেখানে তার গুণকীর্তন করে তাকে ভালো মানুষের সনদ দেন। তাকে সঙ্গে নিয়েই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। আগামী নির্বাচনে তাকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অনুরোধ করেন। এ অবস্থায় পিবিআইয়ের পক্ষে ওই এলাকায় মাদক প্রতিরোধ করা কতটা সম্ভব- পাল্টা এমন প্রশ্ন রাখেন সংশিস্নষ্ট ওই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, দেশে প্রতি বছর শুধু ইয়াবা বড়িই বিক্রি হচ্ছে ৪০ কোটির মতো। যার বাজারমূল্য নূ্যনতম ৬ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক, সামাজিক, মানবিক নানাভাবে ইয়াবার ভয়াবহতা দেশজুড়ে ছড়ালেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ খুব সামান্যই। ইয়াবা বন্ধে মাদকদ্রব্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযান ছাড়া আর কোনো তৎপরতা নেই। মাদকের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার পুরনো অভিযোগ এখনো রয়েই গেছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের পৃথক পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী ২০০ গডফাদারের তত্ত্বাবধানে ১ লাখ ৬৫ হাজার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার সমন্বয়ে দেশব্যাপী মাদক-বাণিজ্যের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। যাদের একটি বড় অংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

সুত্রঃ Tazakhobor24.com