বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিএনপি সরব হলে সিডরের চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে। বিএনপি নেতাদের জেলে নিয়ে কিছুদিন থামিয়ে রাখতে পারবেন কিন্তু চিরকাল তা পারবেন না।’রবিবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আরাফাত রহমান কোকোর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আরাফাত রহমান কোকো যুব ও ক্রীড়া সংসদ এ আলোচনার আয়োজন করে।
বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হলে তাকে মুক্তি দেয়ার আগেই সরকারের পতন হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য চন্দ্র রায়।
গয়েশ্বর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিলে আমরা কি তখন কান্নাকাটি করবো? ঘরে বসে থাকবো? না, খালেদার মুক্তির আগেই সরকারের পতন ঘটাবো। দেশ তখন কারাগারে পরিণত হবে।’প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতার দাম্ভিকতা ছেড়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য গণতন্ত্র হত্যা করলে আপনি টিকে থাকতে পারবেন না। আঘাতের আগে পাল্টা আঘাতের চিন্তা করবেন।’বিএনপির এই সিনিয়র নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার আদালতকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। গণতন্ত্র ও শেখ হাসিনা দুটি সাংঘর্ষিক শব্দ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের অপকর্মের কারণেই বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই তাদের সামর্থ্য নেই বলেই বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বিতা করুক তারা সেটা চায় না।’সভায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমত উল্লাহ, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন লাবু, সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন তালুকদার প্রমুখ।
banglamail71
নজরুল ইসলাম ও সোহেলের চলার মতো পয়সা নেই : আমীর খসরু
বিএনপির আট নেতার বিরুদ্ধে ‘১২৫ কোটি টাকা মানিলন্ডারিং’-এর ঘটনায় দুদকের অনুসন্ধানের ব্যাপারে অনুসন্ধান তালিকায় থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, যেসব ব্যাংকের কথা বলা হচ্ছে, ওইসব ব্যাংকে তো মোশাররফ সাহেবের কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। আমার ব্যাংক থেকে পারিবারিক প্রয়োজনের বাইরে কোনো টাকা তোলা হয়নি। মিন্টু সাহেবের ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি যোগ করেন, নজরুল ইসলাম খান একজন লেবার লিডার। তার চলার মতো পয়সা নেই। ২০ দলের সমন্বয়কারী তিনি, এজন্য তার বিরুদ্ধে তদন্ত। সোহেলেরও চলার মতো পয়সা নাই। সে ঢাকা সিটিতে বিএনপিকে সংগঠিত করছে। তাই তার বিরুদ্ধেও তদন্ত। মানে যারা এখন দলকে সংগঠিত করছেন, আন্দোলন সংগঠন করছেন তাদেরই টার্গেট করা হচ্ছে।“খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর যেসব নেতা বিভিন্ন পর্যায় থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন, দলকে সংগঠিত করার কাজ করছেন, তাদেরই এখন টার্গেট করা হচ্ছে। তারা যাতে বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই হাস্যকর অনুসন্ধান শুরু হয়েছে দুদকের।”
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, বিএনপির আট নেতার ব্যাংক হিসাব থেকে ৩০ দিনে ১২৫ কোটি টাকা সন্দেহজনকভাবে লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। যেসব ব্যাংক থেকে লেনদেনের কথা বলা হচ্ছে সেই সব ব্যাংককে চিঠি দিয়ে দুদক ওই আট নেতার লেনদেনের তথ্য জানতে চেয়েছে। সোমবার দুদকের উপ-পরিচালক ঋতিক সাহা ব্যাংকগুলোকে ওই চিঠি দেন। বিএনপি’র যে আটজন নেতার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মীর্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান, যুগ্ম-মহাসচবি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল।তবে বিএনপি নেতাদের বাইরে মোর্শেদ খানের ছেলে ব্যবসায়ী ফয়সাল মোর্শেদ খান এবং ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের ব্যাপারেও অনুসন্ধান করবে দুদক।
দুদকের চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে লেনদেনের হিসাব চাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ৩০দিনের মধ্যে তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে মানিলন্ডারিং ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা লেনদেন জ্ঞাত আয় বহর্ভিূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্তের প্রয়োজনে।অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরচিালক মো. শামছুল আলমের নতেৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুদকের এই অনুসন্ধানের ব্যাপারে আমীর খসরু অভিযোগ করেন, দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক খাতে এখন যে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে, তা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোও এর উদ্দেশ্য। তারা একটি কথিত অনলাইনের ওপর ভিত্তি করে এসব কাজ করছে। ওই অনলাইনটি বিএনপি ও নেতাদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করে আসছে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামন বলেন, অভিযোগের গুণগত মান এবং স্বচ্ছ তদন্তই আমরা আশা করি৷ দুদককে এই তদন্তে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তে কেউ যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু আইন সবার জন্য সমান এবং দুদক সমতার নীতিতে আইন প্রয়োগ করছে, তা প্রমাণ করা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির এতজন নেতার বিরুদ্ধে একসঙ্গে তদন্ত শুরু হওয়ায় স্বাভাকিভাবেই এই তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আমরা আশা করবো, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। তবে সেটা দুদককেই তার স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে