আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন মিয়ানমারে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য ফেসবুককে ব্যবহার করা হয়েছিল। ভক্স নামে একটি মার্কিন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ বলেন, মিয়ানমারের ইস্যু নিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে বিস্তর কথাবার্তা হয়েছে এবং অস্বীকার করার উপায় নেই যে ফেসবুক দিয়ে বাস্তব ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।-খবর বিবিসি অনলাইন।তিনি বলেন, এক শনিবার আমি একটি ফোন কল পেলাম, তার পর দেখতে পেলাম ফেসবুক মেসেঞ্জার দিয়ে বার্তা চালাচালি হচ্ছে, দুপক্ষের মধ্যেই হচ্ছে… কিছু বার্তায় মুসলিমরা একে অন্যকে সাবধান করছে। বৌদ্ধরা ক্ষেপে উঠেছে সুতরাং আত্মরক্ষার্থে সঙ্গে অস্ত্র রাখো, অমুক জায়গায় যাও। অন্যপক্ষের লোকজনও একই কথাবার্তা চালাচালি করছে।
জাকারবার্গ বলেন, আমরা বিষয়টি ধরতে পেরেছিলাম, বন্ধ করতে পেরেছিলাম। এখন এ ধরনের বিষয়ে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। যদিও তিনি দাবি করছেন যে তারা বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন এবং ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, কিন্তু রাখাইনে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ফেসবুককে ব্যবহার করা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা এখনও চলছে।মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের কর্মকর্তা বলেছেন, ফেসবুক এখন মিয়ানমারে সংবাদের প্রধান সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু সে দেশের বাজার নিয়ে ফেসবুকের কোনো মাথাব্যথা নেই। তার মন্তব্য ছিল, যার ফলে মিয়ানমারে ফেসবুকের অবস্থা দাঁড়িয়েছে একজন প্রবাসী বাড়ির মালিকের মতো।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে মিয়ানমারের ৫ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট ছিল। কিন্তু মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালে মিয়ানমারে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ৪০ লাখ। মোবাইল সংস্থাগুলোর এক জরিপে তারা দেখেছে, মিয়ানমারে ফেসবুকের পোস্টিংকে বহু মানুষ খবর হিসেবে বিবেচনা করে।গত মাসে মিয়ানমারের সহিংসতার ওপর জাতিসংঘের তদন্তকারী ইয়াংহি লি বলেন, ফেসবুক হিংস্র জানোয়ারের রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, কট্টর বৌদ্ধ নেতাদের ফেসবুক পাতা রয়েছে এবং তার মাধ্যমে তারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
গার্ডিয়ানের অনুসন্ধান
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলছে, মিয়ানমারে গত বছর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরুর ঠিক আগে ফেসবুকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে।শীর্ষস্থানীয় অনলাইন বিশ্লেষক রেমন্ড সেরাটোকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান লিখেছে- গত বছর আগস্টে যখন নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালাতে শুরু করে সেই সময় ফেসবুকে রোহিঙ্গাবিরোধী একটি গ্রুপের সদস্যদের পোস্টিং ২০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। ফেসবুকের ওই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৫৫ হাজার।গবেষণা সংস্থা ইন্সটিটিউট অব ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিংয়ের গবেষক অ্যালান ডেভিস দুই বছর ধরে মিয়ানমারে কট্টর বৌদ্ধ নেতাদের বক্তব্য বিবৃতি বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি গার্ডিয়ানকে বলেন, গত বছর আগস্ট মাসের আগের বেশ কিছু দিন তিনি দেখেছেন কীভাবে ফেসবুকে পোস্টগুলো অনেক বেশি সংগঠিত, ঘৃণা-মিশ্রিত এবং সামরিক হয়ে উঠছে।